"উপন্যাস সমগ্র ১" বই এর ফ্ল্যাপের লেখা এই উপন্যাস সংগ্রহে রয়েছে বিমল করের ছয়টি রচনা। লেখকের সাহিত্যজীবনের প্রথম পর্বে রচিত হলেও এর গুরুত্ব ও বৈচিত্র্য অস্বীকার করার উপায় নেই। বৎসরের ছয় ঋতুর মতন এগুলি চরিত্রগতভাবে স্বতন্ত্র এবং বর্ণময়। উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক ‘জীবনায়ন' উপন্যাসটি। মাত্র একটি দিনের কাহিনী । সকাল থেকে সন্ধ্যা—দশ বারো ঘণ্টা—এই সময়ের মধ্যে নতুন এক পরিবেশ ও প্রকৃতির পটভূমিকায় অসংখ্য চরিত্র ও তাদের আনন্দ-উচ্ছলতা সুখ-দুঃখ, অভিমান-ক্ষোভ, স্বপ্ন ও হতাশার খণ্ড খণ্ড ছবি ও সম্পর্কের কাহিনী । তবে এই খণ্ড চিত্রগুলিই সব নয়, জীবনের এক পরিপূর্ণ আভাসও যেন এখানে ধরা পড়ে—যখন দেখা যায় উচ্ছলতা সুখ আনন্দের পরও রয়েছে মৃত্যুর একটি বেদনাময় ছেদ। জীবনের এ-এক যথাযথ চিত্র। 'পরিচয়' উপন্যাসটির আপাতলঘুতা, মাধুর্য, তারুণ্যের প্রাণচঞ্চলতার পাশাপাশি থেকে গিয়েছে অতৃপ্ত জীবনের এক বিষাদ-কাহিনী । ‘খড়কুটো লেখকের অতি প্রসিদ্ধ এক রচনা। বহু পঠিত ও আলোচিত। সন্দেহ নেই উপন্যাসটির মূল আবেগ প্রেম, কিন্তু নিছক ভালবাসার বৃত্তান্ত নয় ‘খড়কুটো'। যে-ধর্মবোধ ভ্রমরের মতন অসুস্থ মৃত্যুমুখী একটি মেয়েকে জীবনের ভালবাসার প্রতি আশ্বাস ও বিশ্বাসকে দ্বিধাহীন করতে পারে—তার মূল্য কী কম। দীর্ঘ তিন যুগেও এই কাহিনীর আকর্ষণ বিন্দুমাত্র হ্রাস পায়নি। অন্য তিনটি উপন্যাস—'নির্বাসন', 'পরস্পর', ‘গ্রহণ’—অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এই কারণে যে, মানুষের জীবনের অতি গভীরতম চেতনায়—নিত্য যে দ্বিধা দ্বন্দ্ব, ক্ষোভ বিরক্তি, ন্যায় অন্যায়, গ্লানি ও পাপবোধের পীড়ন তাকে জর্জরিত করে—তার বিশ্বস্ত কাহিনী এই রচনাগুলি । ‘নির্বাসন'-ই বোধ হয়, লেখকের প্রথম লেখা যেখানে সাবালক সুভদ্র একটি মানুষের আত্মনিগ্রহ ও একাকিত্বের বেদনাময় ছবিটি গভীরভাবে ফুটে উঠেছে। সমাজের সত্য-মিথ্যা বিচারের মানদণ্ডটি কতই না হাস্যকর, নয়তো এই উপন্যাসের হৃদয়বান নায়কটির অকারণ এমন একাকিত্ব কেন ! লেখক হিসেবে বিমল করের সকল বৈশিষ্ট্যই এখানে পাওয়া যায়। সুপাঠ্য এই ছয়টি উপন্যাস একত্রে প্রকাশ নিঃসন্দেহে পাঠককে তৃপ্ত করবে।
বিমল করের জন্ম ৩ আশ্বিন ১৩২৮, ইংরেজি ১৯২১। শৈশব কেটেছে নানা জায়গায়। জব্বলপুর, হাজারিবাগ, গােমাে, ধানবাদ, আসানসােল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। কর্মজীবন : ১৯৪২ সালে এ.আর.পি.-তে ও ১৯৪৩ সালে আসানসােলে মিউনিশান প্রােডাকশন ডিপােয়। ১৯৪৪-এ রেলওয়ের চাকরি নিয়ে কাশী মণিলাল বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘পরাগ’ পত্রিকার সহ-সম্পাদক, পরে পশ্চিমবঙ্গ’ পত্রিকা ও ‘সত্যযুগ’-এর সাব-এডিটর। এ-সবই ১৯৪৬ থেকে '৫২ সালের মধ্যে। ১৯৫৪-১৯৮২ সাপ্তাহিক ‘দেশ’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮২-১৯৮৪ ‘শিলাদিত্য মাসিক পত্রিকার সম্পাদক। বহু পুরস্কার। আনন্দ পুরস্কার ১৯৬৭ এবং ১৯৯২। আকাদেমি পুরস্কার ১৯৭৫। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পুরস্কার ১৯৮১। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের নরসিংহদাস পুরস্কার ১৯৮২। ‘ছােটগল্প—নতুন রীতি’ আন্দোলনের প্রবক্তা ।