"আবু বাকর আস-সিদ্দীকঃ জীবন ও শাসন" বইয়ের কথা: ইসলামের প্রথম খলীফা আবু বাক্র আস-সিদ্দীক রাদ়িয়াল্লাহু ‘আনহু বর্তমান সময়ের মুসলিমদের জন্য এক অমূল্য পথরেখা। মুসলিম উম্মাহর জন্য তার জীবন ও শাসন এক জীবন্ত গ্রন্থ। প্রথমদিকে ইসলাম বরণকারীদের মাঝে তিনি ছিলেন অন্যতম। যতদিন নবি সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেঁচে ছিলেন, তিনি ছিলেন ছয়াসঙ্গী। শূরার ভিত্তিতে খলীফা হিসেবে মনোনীত হওয়ার পর নিজেকে একজন যোগ্য নেতা হিসেবে প্রমাণ করেছেন তিনি। আল্লাহর সাহায্যে মুসলিম উম্মাহকে সাথে নিয়ে পার করেছেন কঠিন বৈতরণি। খোদ আরবেই বহু সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়েছে তাকে। কেউ ধর্মত্যাগ করেছে, কেউ যাকাত দিতে অস্বীকার করেছে, কেউবা নবি দাবি করে কিছু অনুসারী জুটিয়ে নিয়েছে। অন্যদিকে আরবের বাইরে পারস্য ও রোমানরা নব গঠিত মুসলিম রাষ্ট্রের উপর কড়া নজরদারি করছিল। যেকোনো সুযোগে একে ধসিয়ে দেওয়ার মওকা খুঁজছিল। কার্যকারী কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিটি বাধা বেশ সফলতার সঙ্গে ডিঙিয়েছেন খলীফা আবু বাক্র। মসৃণ করেছেন বিজয়ের পথ, অপসারিত করেছেন অত্যাচারী শাসকদের। বিশ্বময় পৌঁছে গেছে ইসলামের বার্তা। তার এই নেতৃত্বগুণ আজকের জমানার মুসলিমদের জন্যও খুব প্রাসঙ্গিক। সময়ের প্রতিথযসা লেখক ড. ‘আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবি অত্যন্ত বিস্তারিতভাবে, বিশুদ্ধ সব উৎস থেকে আবু বাক্র আস সিদ্দিকের জীবনী আলোচনা ও বিশ্লেষণ করেছেন কীভাবে একের পর একে ধেয়ে আসা চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করলেন, কীভাবে ইসলামের গৌরবগাথা লিখে চললেন, সেগুলোর খুঁটিনাটি নানা দিক অনুপঙ্ক্ষ বর্ণনায় সজীব করে তুলেছেন তার কলমে। ক্রমশ জাগ্রত বর্তমান মুসলিম উম্মাহর জন্য অনেক মূল্যবান দিকনির্দেশ ছড়িয়ে আছে এ বইয়ের পাতায় পাতায়।
ফকিহ, রাজনীতিক ও বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগবেষক। ইসলামের ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণধর্মী তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই মহা মনীষী ১৯৬৩ সনে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা বেনগাজিতেই করেন। যৌবনের প্রারম্ভেই গাদ্দাফির প্রহসনের শিকার হয়ে শায়খ সাল্লাবি আট বছর বন্দি থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি সাউদি আরব চলে যান। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও উসুলুদ্দিন বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সনে অনার্স সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান সুদানের উম্মু দুরমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে উসুলুদ্দিন অনুষদের তাফসির ও উলুমুল কুরআন বিভাগ থেকে ১৯৯৬ সনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৯ সনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ফিকহুত তামকিন ফিল কুরআনিল কারিম’। ড. আলি সাল্লাবির রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু বিশ্বখ্যাত ফকিহ ও রাজনীতিক ড. ইউসুফ আল কারজাবি। কারজাবির সান্নিধ্য অর্জনে তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কাতার গমন করেন। নতুন ধারায় সিরাত ও ইসলামি ইতিহাসের তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে ড. আলি সাল্লাবি অনুসন্ধিৎসু পাঠকের আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নবিজির পুর্ণাঙ্গ সিরাত, খুলাফায়ে রাশিদিনের জীবনী, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসি খিলাফত, উসমানি খিলাফতের উত্থান-পতনসহ ইসলামি ইতিহাসের সাড়ে তেরোশ বছরের ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন। তা ছাড়া ইসলামি ইতিহাসে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করা ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি আলাদা আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির রচনা শুধু ইতিহাসের গতানুগতিক ধারাবর্ণনা নয়; তাঁর রচনায় রয়েছে বিশুদ্ধতার প্রামাণিক গ্রহণযোগ্যতা, জটিল-কঠিন বিষয়ের সাবলীল উপস্থাপনা ও ইতিহাসের আঁকবাঁকের সঙ্গে সমকালীন অবস্থার তুলনীয় শিক্ষা। এই মহা মনীষী সিরাত, ইতিহাস, ফিকহ ও উলুমুল কুরআনের উপর আশির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাবলি ইংরেজি, তুর্কি, ফরাসি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীর জ্ঞানগবেষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ, নিরাপদ ও সুস্থ জীবন দান করুন। আমিন। —সালমান মোহাম্মদ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক ২৪ মার্চ ২০২০