"দেওয়াল" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: ‘দেওয়াল’ যে লেখক বিমল কর-এর রচিত দীর্ঘতম উপন্যাস—শুধুমাত্র এ-তথ্যই উল্লেখযােগ্য নয় ; অনেকের মতে, একাধিক সমালােচকের ধারণায়, ‘দেওয়াল’-ই তাঁর শ্রেষ্ঠতম রচনা। ‘শ্রেষ্ঠতম’ কিনা এ-নিয়ে তর্ক চলুক। কিন্তু এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিকায় শহর কলকাতা ও নিম্নমধ্যবিত্ত বাঙালী জীবনের এমন নিখুঁত চিত্র বাংলা সাহিত্যে দুর্লভ। ১৯৩৯-৪৫—এই ছ’বছরে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়ংকরতার মধ্যে, বাঙালীর জীবনে যে-সংকট, ভাঙন ও অবক্ষয় দেখা দিয়েছিল, তারই এক বিশ্বস্ত দলিল এই উপন্যাস। যুদ্ধ, ইভ্যাকুয়েশন, আতঙ্ক, ভারত ছাড়াে আন্দোলন, অগাস্ট বিদ্রোহ, বাংলার মন্বন্তর, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, কমিউনিস্টদের ভূমিকা, গান্ধীবাদীদের বিভ্রম ও বিচ্যুতি—প্রভৃতি কীভাবে দ্রুত ঘটে যাচ্ছিল এবং তার প্রকাশ্য ও পরােক্ষ প্রভাবে আমাদের সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের ন্যায়নীতিরােধ,লালিত বিশ্বাস, পারস্পরিক সম্পর্কের অন্তরঙ্গতা ও শুচিতার ধারণাগুলি কেমনভাবে—কোন্ দানবের হিংস্র আঁচড়ে—ক্ষতবিক্ষত হচ্ছিল, তারই এক অসামান্য কাহিনী এই ‘দেওয়াল’ । পাশাপাশি, সেইসব মানুষেরও কথা, এত বিশৃঙ্খলা ও বিপর্যয়ের মধ্যে, হাহাকার সত্ত্বেও, যাঁরা মানবিকতা সম্বল করে। উত্তীর্ণ হতে চেয়েছেন এই সংকট। ‘দেওয়াল’ নামের এই দীর্ঘ উপন্যাস বিমল কর রচনা করেছিলেন তাঁর যৌবন বয়সে । তবু, নিঃসন্দেহে বলা যায়, জীবনের অভিজ্ঞতা, অনুভূতি ও বাস্তববােধের এমন সমন্বয় তাঁর পরবর্তী কোনও রচনাতেই যেন দেখা যায় না। বাঙালী। জীবনের বিশেষ এক অভিশপ্ত সময়ের সার্থক দলিল হলেও এই উপন্যাসটি সময় ও নিছক সামাজিক অবক্ষয়ের চিত্র নয়, সেই সংকীর্ণ সীমানা অতিক্রম করে মানবজীবনের বিশ্বস্ত কাহিনী রূপেই শেষাবধি স্মরণীয় হয়ে থাকবে ‘দেওয়াল’।
বিমল করের জন্ম ৩ আশ্বিন ১৩২৮, ইংরেজি ১৯২১। শৈশব কেটেছে নানা জায়গায়। জব্বলপুর, হাজারিবাগ, গােমাে, ধানবাদ, আসানসােল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। কর্মজীবন : ১৯৪২ সালে এ.আর.পি.-তে ও ১৯৪৩ সালে আসানসােলে মিউনিশান প্রােডাকশন ডিপােয়। ১৯৪৪-এ রেলওয়ের চাকরি নিয়ে কাশী মণিলাল বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘পরাগ’ পত্রিকার সহ-সম্পাদক, পরে পশ্চিমবঙ্গ’ পত্রিকা ও ‘সত্যযুগ’-এর সাব-এডিটর। এ-সবই ১৯৪৬ থেকে '৫২ সালের মধ্যে। ১৯৫৪-১৯৮২ সাপ্তাহিক ‘দেশ’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮২-১৯৮৪ ‘শিলাদিত্য মাসিক পত্রিকার সম্পাদক। বহু পুরস্কার। আনন্দ পুরস্কার ১৯৬৭ এবং ১৯৯২। আকাদেমি পুরস্কার ১৯৭৫। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পুরস্কার ১৯৮১। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের নরসিংহদাস পুরস্কার ১৯৮২। ‘ছােটগল্প—নতুন রীতি’ আন্দোলনের প্রবক্তা ।