"রচনাবলি-২" বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ লেখালেখির সৃজনশীলতায় যিনি নিজেকে উতরে নিয়েগেছেন এক অনন্য উচ্চতায় তিনি হাসনাত আবদুল হাই । গল্প, উপন্যাস, জীবনোপন্যাস, ভ্রমণকথাসহ নানাবিধ রচনায় তিনি নিজেকে ক্রমশ উল্কর্য করে চলেছেন। জীবনের নানান দিক তার লেখনীতে নানা মাত্রায় উদ্ভাসিত । মানুষ এবং তার মনোজগৎ এবং সেই মানুষটির সমকালীন রাজনীতি হাসনাতের কেন্দ্রবিন্দু। উচ্চবিত্ত সমাজ থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার আগ্রহের সীমা । উন্নয়ন সংস্থাসমূহের দর্শন এবং কর্মপদ্ধতি, বৈশ্বিক রাজনীতির মিথস্কিয়া আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে কীভাবে প্রতিক্রিয়া ঘটায় তা-ও তিনি নানাভাবে বিভিন্ন রচনায় দেখিয়েছেন। আমাদের গত শতাব্দীর তিন ভুবনের তিনজন অনন্য ব্যক্তিত্বকে নিয়ে রচনা করেছেন অসাধারণ ট্রিলজি জীবনোপন্যাস । তার ভ্রমণ-কাহিনি হয়ে উঠেছে অন্যমাত্রার। ভ্রমণ-সাহিত্য বাংলা কথাসাহিত্যের জগতে হাসনাত আবদুল হাই এক উজ্জ্বল নীম । তীর রচনা আমাদের অগ্রসর পাঠককে আন্দোলিত করেছে। ভাষিক চাতুর্য ও সাহিত্যিক-কূটভাস এড়িয়ে তিনি লিখেছেন নিজস্ব গদ্যে তার সময়ের সাতকাহন । হাসনাত আবদুল হাইয়ের সামগ্রিক রচনা নিঃসন্দেহে আমাদের সৃজনশীল সাহিত্যে একটি সৌম্য, কান্তিময় এবং দেদীপ্যমান সংযোজন ।
Hasnat Abdul Hye জন্ম ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে, কলকাতায় । পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার সৈয়দাবাদ গ্রামে। স্কুল শিক্ষা কলকাতা, যশোর, ফরিদপুর শহরে। কলেজ শিক্ষা ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিকস এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষা লাভের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা । ১৯৬৫ সালে সিভিল সার্ভিসে যোগদানের পর প্রাক্তন পাকিস্তান সরকার এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। হাসনাত আবদুল হাই ছাত্র জীবন থেকে সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে ছোটগল্প রচনার মাধ্যমে। ছোটগল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ-কাহিনী, শিল্প ও সাহিত্য সমালোচনা এবং নাটক এই সব শাখায় স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন চার দশকের অধিককাল ।বাংলা এবং ইংরেজিতে একটি কবিতার বই লিখেছেন জাপানে প্ৰবাস জীবনে। প্ৰকাশিত ছোটগল্প গ্রন্থের সংখ্যা পাঁচ, উপন্যাস পঁচিশ এবং ভ্ৰমণ-কাহিনী ছয় । সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন অলক্ত পুরস্কার, মোহাম্মদ আকরম খাঁ বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৬ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। তাঁর লেখা উপন্যাস সুলতান ডাবলিন আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়।