'আশ্চর্যকথা হয়ে গেছে' বইয়ের ফ্লাপের লেখা জন্মস্থান জলপাইগুড়ি শহর ছেড়ে চারটি কিশাের চলে এসেছিল জীবনের বৃহত্তর অঙ্গনে। তারা এখন সবাই জীবনে প্রতিষ্ঠিত। বয়সও মধ্যগগন পেরিয়েছে। সময় অনেক কিছু কেড়ে নিলেও নিতে পারেনি রহস্য-রােমাঞ্চ মেশানাে কৈশাের স্মৃতি। তাই একদিন সুরঞ্জন, বিজন, গােপাল ও শ্যামল একসঙ্গে পাড়ি দিল ফেলে আসা সেই মফস্বল শহরে। সেখানে পৌছতেই স্মৃতি তার দরজা খুলে দিল। তাদের চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠল কৈশােরের সেই লীলাভূমি, আর তখনকার মানুষজন। সেইসব মানুষের জীবনের সাফল্যব্যর্থতার বিষাদময় রঙিন কাহিনী। আর উন্মােচিত হল কয়েকজন নারীর আশা ও আশাভঙ্গের নানা গল্প। যে নারীরা একসময় ছিল রূপসী কিশােরী—যাদের কৃপাদৃষ্টি পাওয়ার জন্য ফোর মাস্কেটিয়ার্স’ টহল দিত শহরের রাজপথে। প্রথম কাহিনীটি যদি হয় এক বিষাদমধুর সুর, তবে দ্বিতীয় কাহিনীতে বেজেছে এক অদ্ভুত বিষন্নরাগিণী। অসমবয়সী অর্ণব, নীনা আর কল্পনা নিজেদের আঁকড়ে ধরতে চেয়েছে এক একটি সম্পর্কে। এই তিন বাংলাদেশী নারী-পুরুষ জীবনের ছন্দ ফেরাতে আমেরিকায় চলে এসেছে। আগে আছে আঠাশ বছর বয়সী অর্ণব আর আটচল্লিশের নীনা। পরে কল্পনা। এরা পরস্পরকে ভালবেসেছিল। দুঃখ পাবে এবং দুঃখ দেবে জেনেও। কিন্তু ভালবাসার জন্য কি জীবন নিয়ে জুয়াে খেলেছিল ওরা? সেই আশ্চর্যকথা এখানে।
১৯৪২ সালের ১০ই মার্চ পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে জন্ম বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক এবং ঔপন্যাসিক সমরেশ মজুমদারের। তাঁর শৈশব কাটে প্রকৃতির কোলে, চা বাগানে ঘুরে, আদিবাসী শিশুদের সাথে খেলে। এ কারণেই সমরেশ মজুমদার এর বই সমগ্রতে বারবার উঠে আসে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি, চা বাগান, বৃষ্টি কিংবা পাহাড়ের কথা। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় জলপাইগুড়ির জেলা স্কুল থেকে। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি কলকাতা স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। গ্রুপ থিয়েটারের প্রতি তাঁর ছিল ভীষণ ঝোঁক। মঞ্চনাটকে চিত্রায়নের উদ্দেশ্যে তিনি সর্বপ্রথম ‘অন্তর আত্মা’ নামের একটি গল্প রচনা করেছিলেন। সেই গল্পে নাটক মঞ্চায়িত না হলেও পশ্চিমবঙ্গের পাক্ষিক সাহিত্য পত্রিকা দেশ-এ প্রকাশিত হয় গল্পটি। সেই থেকেই শুরু তাঁর লেখকজীবন। সমরেশ মজুমদার এর বই বাংলাদেশের প্রচুর মানুষ পড়েন, পড়তে ভালোবাসেন। দুই বাংলাতেই তিনি সমান জনপ্রিয়। তিনি ঔপন্যাসিক হিসেবে বিখ্যাত হলেও, ছোটগল্প, কিশোর উপন্যাস, নাটক, চিত্রনাট্যসহ, গোয়েন্দাকাহিনীও রচনা করেছেন। সমরেশ মজুমদার এর বই সমূহ, যেমন- সাতকাহন, গর্ভধারিণী, মৌষকাল, ট্রিলজি- উত্তরাধিকার-কালবেলা-কালপুরুষ, আট কুঠুরি নয় দরজা ইত্যাদি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাঁর সৃষ্ট চরিত্র অনিমেষ, মাধবীলতা, দীপাবলী আর জয়িতা পাঠকমনে আজও বিরাজমান। সাহিত্যে তাঁর অনন্য এবং অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বিভিন্ন সময়ে আনন্দ পুরস্কার, সত্য আকাদেমী পুরষ্কার, বঙ্কিম পুরস্কার এবং আইআইএমএস পুরস্কার অর্জন করেছেন।