"এত রক্ত কেন” বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি ছােট্ট রাজ্য ত্রিপুরা। নানা রাজকাহিনী ও রবীন্দ্রস্মৃতিবিজড়িত এবং পার্বত্য সৌন্দর্যে অভিনন্দিত এই শান্তসুন্দর রাজ্যটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী নানা শক্তি গত কয়েক বছর ধরে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এই বিচ্ছিন্নতাকামীরা বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত। এদের কাজ নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করে সন্ত্রাস সৃষ্টি করা। এই উপন্যাসের নায়ক বাসুদেব। তার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা ত্রিপুরাতেই। বাসুদেবের পেশা সাংবাদিকতা। বিখ্যাত বিদেশি টিভি এবং বেতারের মুখ্য সংবাদদাতা বাসুদেব বিবাহসূত্রে পুলিশের এক সদ্য অবসরপ্রাপ্ত ডি আই জি-র জামাই। এই ডি আই জি তাঁর দীর্ঘ চাকরি জীবনে একবারও জঙ্গিদের আক্রমণের লক্ষ্য হননি। এমন সৌভাগ্যবান পুলিশ অফিসারের একমাত্র ছেলে সরকারি ডাক্তার সৌমিত্র হঠাৎই বদলি হয়ে যায় ত্রিপুরার প্রত্যন্ত গ্রামে। বাড়ির সবাই চাইছিল সৌমিত্র এই বদলি মেনে না-নিয়ে অন্য কোনও বিকল্প ব্যবস্থা করুক। কিন্তু সকলের অমতে সৌমিত্র গ্রামে চলে গেল। গ্রামে যাওয়ার পরপরই তাকে অপহরণ করল এক জঙ্গিগােষ্ঠী। মােটা অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করল অপহরণকারীরা। কেমন করে সাংবাদিক বাসুদেব অশেষ ধৈর্য ও বুদ্ধির প্রয়ােগে সৌমিত্রকে মুক্তিপণ ছাড়াই ভয়াবহ অন্ধকার থেকে আলােয় মুক্ত করে আনল, তারই রােমহর্ষক কাহিনী ‘এত রক্ত কেন। একই সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন নিয়ে এই উপন্যাসের প্রতিটি পাতা রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনায় টানটান।
১৯৪২ সালের ১০ই মার্চ পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে জন্ম বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক এবং ঔপন্যাসিক সমরেশ মজুমদারের। তাঁর শৈশব কাটে প্রকৃতির কোলে, চা বাগানে ঘুরে, আদিবাসী শিশুদের সাথে খেলে। এ কারণেই সমরেশ মজুমদার এর বই সমগ্রতে বারবার উঠে আসে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি, চা বাগান, বৃষ্টি কিংবা পাহাড়ের কথা। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় জলপাইগুড়ির জেলা স্কুল থেকে। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি কলকাতা স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। গ্রুপ থিয়েটারের প্রতি তাঁর ছিল ভীষণ ঝোঁক। মঞ্চনাটকে চিত্রায়নের উদ্দেশ্যে তিনি সর্বপ্রথম ‘অন্তর আত্মা’ নামের একটি গল্প রচনা করেছিলেন। সেই গল্পে নাটক মঞ্চায়িত না হলেও পশ্চিমবঙ্গের পাক্ষিক সাহিত্য পত্রিকা দেশ-এ প্রকাশিত হয় গল্পটি। সেই থেকেই শুরু তাঁর লেখকজীবন। সমরেশ মজুমদার এর বই বাংলাদেশের প্রচুর মানুষ পড়েন, পড়তে ভালোবাসেন। দুই বাংলাতেই তিনি সমান জনপ্রিয়। তিনি ঔপন্যাসিক হিসেবে বিখ্যাত হলেও, ছোটগল্প, কিশোর উপন্যাস, নাটক, চিত্রনাট্যসহ, গোয়েন্দাকাহিনীও রচনা করেছেন। সমরেশ মজুমদার এর বই সমূহ, যেমন- সাতকাহন, গর্ভধারিণী, মৌষকাল, ট্রিলজি- উত্তরাধিকার-কালবেলা-কালপুরুষ, আট কুঠুরি নয় দরজা ইত্যাদি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাঁর সৃষ্ট চরিত্র অনিমেষ, মাধবীলতা, দীপাবলী আর জয়িতা পাঠকমনে আজও বিরাজমান। সাহিত্যে তাঁর অনন্য এবং অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বিভিন্ন সময়ে আনন্দ পুরস্কার, সত্য আকাদেমী পুরষ্কার, বঙ্কিম পুরস্কার এবং আইআইএমএস পুরস্কার অর্জন করেছেন।