"জন্মদাগ" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: লেডি কণিকা চ্যাটার্জি। মহিলা আজন্ম রূপসী। বীরভূমের এক জমিদার পরিবারে জন্ম। তার রূপের আগুনে কৈশাের থেকে অনেককে পুড়িয়ে মেরেছেন, নিজের খুশি মতাে ব্যবহার করেছেন নিজের দেহ। দিল্লিতে এম বি এ পড়তে এসে চ্যাটার্জি অ্যান্ড চ্যাটার্জি কোম্পানির মালিক শিক্ষিত অথচ রূপহীন পুরুষ স্যার অমলেশকে কণিকা তার শরীরী জালে জড়িয়ে ফেললেন। অমলেশ সেই ফাদ থেকে বেরােতে পারলেন না। কণিকাকে বিয়ে করতে বাধ্য হলেন। চ্যাটার্জি দম্পতির সন্তান কাবেরী। কিন্তু কাবেরী তার বাবার কুশ্রী রূপ ও কালাে গায়ের রং নিয়ে জন্মেছে। বিয়ের পর থেকেই অমলেশকে যেমন কণিকা সহ্য করতে পারছিলেন না, তেমনই কুরূপা মেয়ে তার কাছে অসহ্য হয়ে দাঁড়াল। মেয়েকে তিনি পাঠিয়ে দিলেন সুদূর বাের্ডিং স্কুলে। তারপর আমেরিকায়। মলেশের মৃত্যু হয়েছে। বিশাল সম্পত্তি এখন কণিকার হাতের মুঠোয়। আমেরিকায় পড়া শেষ না করেই কাবেরী বিয়ে করল এক পাঞ্জাবি ছেলে হরপ্রীতকে। ওদের সন্তানও হল। কিন্তু হরপ্রীতের সাদা চামড়ার প্রতি লােভ কাবেরীকে নিয়ে গেল বিচ্ছিন্নতার পথে। কাবেরী মায়ের কাছে ফিরে এল। বিপুল শিল্পসাম্রাজ্য কণিকা তার পড়ন্ত রূপ আর মেধার জোরে তখনও চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কাবেরীর মেয়ে তৃণা অল্প বয়স থেকেই হয়ে উঠল কণিকার কৈশাের-যৌবনের মতাে উৎশৃঙ্খল। সে জড়িয়ে পড়ল ড্রাগচক্রের সঙ্গে। দীপ নামে একটি ছেলেকে বিয়েও করল। লেডি চ্যাটার্জি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন স্বামীর মৃত্যুর পর যে ব্যবসা বিশগুণ বাড়িয়েছেন, তার কোনও উত্তরাধিকার তিনি তৈরি করতে পারেননি। আর তৃণা কোম্পানির সম্মান ধুলােয় লটিয়ে দিচ্ছে। এই তিন প্রজন্মের নারীর জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত, সুখ-দুঃখ, শরীর ভাবনা এবং পুরুষ সংসর্গের স্বপ্ন নিয়ে বিস্ফোরক উপন্যাস ‘জন্মদাগ।
১৯৪২ সালের ১০ই মার্চ পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে জন্ম বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক এবং ঔপন্যাসিক সমরেশ মজুমদারের। তাঁর শৈশব কাটে প্রকৃতির কোলে, চা বাগানে ঘুরে, আদিবাসী শিশুদের সাথে খেলে। এ কারণেই সমরেশ মজুমদার এর বই সমগ্রতে বারবার উঠে আসে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি, চা বাগান, বৃষ্টি কিংবা পাহাড়ের কথা। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় জলপাইগুড়ির জেলা স্কুল থেকে। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি কলকাতা স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। গ্রুপ থিয়েটারের প্রতি তাঁর ছিল ভীষণ ঝোঁক। মঞ্চনাটকে চিত্রায়নের উদ্দেশ্যে তিনি সর্বপ্রথম ‘অন্তর আত্মা’ নামের একটি গল্প রচনা করেছিলেন। সেই গল্পে নাটক মঞ্চায়িত না হলেও পশ্চিমবঙ্গের পাক্ষিক সাহিত্য পত্রিকা দেশ-এ প্রকাশিত হয় গল্পটি। সেই থেকেই শুরু তাঁর লেখকজীবন। সমরেশ মজুমদার এর বই বাংলাদেশের প্রচুর মানুষ পড়েন, পড়তে ভালোবাসেন। দুই বাংলাতেই তিনি সমান জনপ্রিয়। তিনি ঔপন্যাসিক হিসেবে বিখ্যাত হলেও, ছোটগল্প, কিশোর উপন্যাস, নাটক, চিত্রনাট্যসহ, গোয়েন্দাকাহিনীও রচনা করেছেন। সমরেশ মজুমদার এর বই সমূহ, যেমন- সাতকাহন, গর্ভধারিণী, মৌষকাল, ট্রিলজি- উত্তরাধিকার-কালবেলা-কালপুরুষ, আট কুঠুরি নয় দরজা ইত্যাদি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাঁর সৃষ্ট চরিত্র অনিমেষ, মাধবীলতা, দীপাবলী আর জয়িতা পাঠকমনে আজও বিরাজমান। সাহিত্যে তাঁর অনন্য এবং অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বিভিন্ন সময়ে আনন্দ পুরস্কার, সত্য আকাদেমী পুরষ্কার, বঙ্কিম পুরস্কার এবং আইআইএমএস পুরস্কার অর্জন করেছেন।