"গিফট বক্স" বইয়ের তিনটি গল্পের প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ
সায়েন্স ফিকশন "দ্বিতীয় পৃথিবী": মানুষের মধ্যেকার দীর্ঘদিনের যুদ্ধ আর দ্বন্দ্বে পৃথিবী আজ বসবাসের অযােগ্য হয়ে পড়েছে। যে কোনাে সময় ধ্বংস হয়ে যেতে পারে পৃথিবী। তাইতাে অভিযাত্রীরা বসবাসযােগ্য নতুন আর একটি গ্রহের সন্ধানে ছুটে বেড়াচ্ছেন গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে মহাবিশ্বের দর-দূরান্তে। ঐ নতুন গ্রহটি হবে দ্বিতীয় পৃথিবী যেখানে বর্তমান পৃথিবীর মানুষদের স্থানান্তর করে রক্ষা করা হবে মানব সভ্যতাকে। এরকম অনুসন্ধান অভিযানের এক পর্যায়ে চব্বিশ বছর বয়সী নারী অভিযাত্রী নিয়ানা এসে পড়ে লিলিলি নামের অজানা এক গ্রহে। দুর্ভাগ্যবশত লিলিলি গ্রহে অবতরণমাত্র তাকে ঘিরে ফেলে লিলিলি গ্রহের অতি বুদ্ধিমান প্রাণী হিরিরা। লিওলি নামের একটি পুরুষ হিরি তখন ধীরে ধীরে প্রবেশ করতে থাকে নিয়ানার শরীরের মধ্যে। নিয়ানা একসময় অনুভব করে লিওলি সত্যি তার শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে তার মস্তিষ্কের সকল স্মৃতি পড়ে নিচ্ছে। একসময় হিরিরা জেনে যায় নিয়ানা মানুষের জন্য লিলিলি গ্রহ দখল করতে এসেছে। লিওলির পর তখন দিওপি নামের আর এক হিরি প্রবেশ করে নিয়ানার মস্তিষ্কে। এবার তীব্র যন্ত্রণায় চিৎকার করে ওঠে নিয়ানা। সে অনুভব করতে থাকে ভয়ঙ্কর ইলেকট্রিক শ তার শরীরে তীব্র কম্পন সৃষ্টি করে যাচ্ছে। সে বাঁচার জন্য চিঙ্কার করে ওঠে। কিন্তু কে তাকে সাহায্য করবে নিঃসঙ্গ ঐ লিলিলি গ্রহে? শেষ পর্যন্ত কী ঘটেছিল অভিযাত্রী নিয়ানার জীবনে? সত্যি কি পৃথিবীর মানুষ বসতি স্থাপন করতে পেরেছিল লিলিলি গ্রহে? নাকি তাদের দ্বিতীয় পৃথিবীর স্বপ্ন চিরতরে ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছিল মহাকাশের নিকষ কালাে অন্ধকারে?
প্যারাসাইকোলজি "মন ভাঙ্গা পরি": ইমরান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে পরির দিকে। ধীরে ধীরে অপূর্ব সুন্দর পরির চেহারাটা বিকৃত হয়ে যাচ্ছে। কাঁপতে শুরু করেছে সমস্ত শরীর। চোখের মণি দুটোও আর আগের মতাে নেই, বড়াে হয়ে চোখের ভিতর চক্রাকারে ঘুরতে শুরু করেছে। তারপর হঠাৎই হাত-পাগুলাে নিজে থেকেই বেঁকে যেতে শুরু করল। সেই সাথে মুখ দিয়ে গাে গাে অদ্ভুত এরকম শব্দ বের হতে লাগল। মনে হলাে পরি যেন কিছু বলতে চাচ্ছে, কিন্তু বলতে পারছে না। ইমরান বুঝতে পারল ভয়ানক কষ্ট হচ্ছে পরির, কিন্তু কী করবে সে? এক সময় সামনের দিকে হাত বাড়িয়ে তার দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করল পরি। ইমরান আপ্রাণ চেষ্টা করল পরিকে নিবৃত্ত করতে। কিন্তু পারল না। পরির শরীরে যেন অসুরের শক্তি। ভয় পেয়ে ইমরান বাড়ির সবার সাহায্য কামনা করল। সবাই পরিকে দেখে বুঝল পরিকে ভংয়কর জিনে ধরেছে। তাকে বাঁচাতে হলে জিন ছাড়াতে হবে। ডাকা হলাে জব্বার ফকিরকে। পরির উপর জব্বার ফকিরের অমানুষিক অত্যাচার কিছুতেই মেনে নিতে পারল না ইমরান। পরিকে বাঁচাতে সে পরিকে নিয়ে ঢাকায় চলে এলাে। কিন্তু ঢাকার জীবন যে তার জন্য আরও কষ্টের, আরও অনিশ্চিয়তার । কে সাহায্য করবে তাকে? এখানে যে তাকে সাহায্য করার মতাে কেউ নেই। বরং পদে পদে বিপদ আর বাধা। এদিকে ইমরান জানতে পারল পরি তাকেই হত্যা করতে পারে। কী ভয়ংকর কথা! যাকে সে বাঁচানাের চেষ্টা করছে। সে-ই কিনা তাকে হত্যা করবে! শেষ পর্যন্ত কী ঘটেছিল ইমরান আর পরির জীবনে?
ভৌতিক উপন্যাস "ইলু পিশাচ": শান্ত, সুন্দর মেয়ে দিয়া। ঢাকা মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে চলছিল। হঠাৎই অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটতে শুরু করে দিয়ার জীবনে। মাঝে মাঝে কালাে ধোঁয়ার মধ্যে হারিয়ে যেতে থাকে সে। তারপর চেহারাবিহীন ভয়ঙ্কর একটা মুখ এসে তাকে গিলে ফেলতে থাকে। বাধা দিতে গিয়েও পারে না। কারণ সে বড় অসহায়। কাউকে কিছু বলার ক্ষেত্রে নিষেধ আছে। অবশেষে সে অনুভব করতে থাকে সে ছাড়াও তার মধ্যে অন্য কেউ আছে। পরে জানতে পারে একটা ইলু পিশাচ তার ওপর ভর করেছে। এই ইলু পিশাচ যে। মানুষের ওপর ভর করে তার একমাত্র পরিণতি মৃত্যু। কাজেই তারও মৃত্যু হবে। এরকম ভয় আর আশঙ্কা থেকে মুক্তি পেতে সে সকলের সহায়তা চায়। কিন্তু কারাে কাছ থেকে কোনাে সাহায্য সে পায় না। উলটো তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। মুক্তির জন্য তখন সে পাগল হয়ে ওঠে। কিন্তু কে দেবে তাকে মুক্তি? ইলু পিশাচের হাত থেকে যে মুক্তির কোনাে উপায় নেই। শেষ পর্যন্ত দিয়া কি মুক্তি পেয়েছিল ভয়ঙ্কর ইলু পিশাচের হাত থেকে?
লেখক মোশতাক আহমেদ এর জন্ম ১৯৭৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর, ফরিদপুর জেলায়। পেশায় একজন চাকুরিজীবী হওয়া সত্ত্বেও লেখালেখির প্রতি তাঁর আগ্রহ প্রচুর। এ পর্যন্ত সায়েন্স ফিকশন নিয়েই সবচেয়ে বেশি লিখেছেন। বাংলা সায়েন্স ফিকশন জগতে তার পোক্ত একটি অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও মোশতাক আহমেদ এর বই সমূহ ভৌতিক, প্যারাসাইকোলজি, মুক্তিযুদ্ধ, কিশোর ক্ল্যাসিক, ভ্রমণ ইত্যাদি জঁনরাতে বিভক্ত। যেকোনো একটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতেই পছন্দ করেন। মোশতাক আহমেদ এর বই সমগ্র সংখ্যায় পঞ্চাশ পেরিয়েছে। তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই ছিল ‘জকি’। এটি একটি জীবনধর্মী উপন্যাস। ২০০৫ সালে এটি প্রকাশিত হয়। মোশতাক আহমেদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথমে ফার্মেসি বিভাগে, পরে আইবিএতে। পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপরাধবিজ্ঞান থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। পড়াশোনার খাতিরেই হোক বা কর্মজীবনের তাগিদেই হোক, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অনেক ভ্রমণ করেছেন। সেসব ভ্রমণকাহিনীর আশ্রয়ে তাই ক্রমেই সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর লেখা ভ্রমণকাহিনীগুলোও। তাঁর সৃজনশীল কর্মকাণ্ড শুধু লেখালেখিতেই গণ্ডিবদ্ধ নয়। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাজারবাগের পুলিশ ও পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর মধ্যে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। সে ঘটনার ওপর ভিত্তি করে মোশতাক আহমেদ ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এটি ২০১৩ সালের মার্চ মাসে মুক্তি পায়। তাঁর পুরস্কারের ঝুলিতে এ পর্যন্ত রয়েছে ২০১৩ সালের কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের ছোটদের মেলা সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের কৃষ্ণকলি সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৫ সালের সিটি আনন্দ আলো পুরস্কার এবং সর্বশেষ সংযুক্তি হিসেবে সায়েন্স ফিকশন বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭।