উসমান ইবনু আফফান রাজিয়াল্লাহু আনহু ইসলামের তৃতীয় খলিফা। আল্লাহর রাসুলের জামাতা। জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ জন সাহাবির একজন। তাঁর জীবন ইসলামের ইতিহাসে এক আলোকোজ্জ্বল অধ্যায়। মহত্ত্ব, মর্যাদা, নিষ্ঠা, জিহাদ ও আল্লাহর পথে দাওয়াতে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। এই গ্রন্থে উসমানের জন্ম থেকে শাহাদাত পর্যন্ত বিস্তারিত ঘটনা আলোকপাত করা হয়েছে। আলোচনা করা হয়েছে তাঁর রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কেও। বিচারের ক্ষেত্রে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, আইন প্রণয়ন, ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ, ব্যক্তিস্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রভৃতি ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অবিস্মরণীয়। তাঁর অনন্য কীর্তি হচ্ছে, এক মাসহাফে উম্মতকে ঐক্যবদ্ধ রাখা। প্রাদেশিক গভর্নরদের সঙ্গে উসমানি কর্মপদ্ধতি, তাঁদের অধিকার, দায়িত্ব, পর্যবেক্ষণ ও তদন্তে উসমানি পদ্ধতি এবং সে-সকল গভর্নরের নিয়োগ-সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনার পাশাপাশি তাঁর হত্যাসম্পর্কীয় ফিতনার কারণসমূহও উঠে এসেছে সবিস্তারে। উসমানি চিন্তাধারার আলোকে একজন আদর্শ রাষ্ট্রনেতার অবিচলতা, বিচক্ষণতা, ঐক্যের আকুতি, বিভক্তি থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে সাবধানতা, নীরবে সয়ে যাওয়া, জ্ঞানীদের পরামর্শ ও রাসুলের আদর্শ শক্ত হাতে ধারণের দীক্ষা পাওয়া যাবে। এই গ্রন্থ জুননুরাইনের মহত্ত্ব তুলে ধরবে। পাঠকের সামনে প্রতিভাত হবে তাঁর ইমান, ইলম, আখলাক ও জীবনাচার। এতে আমরা পাব ইমানি চেতনা। আমলের আগ্রহ। ত্যাগের দীক্ষা।
ফকিহ, রাজনীতিক ও বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগবেষক। ইসলামের ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণধর্মী তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই মহা মনীষী ১৯৬৩ সনে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা বেনগাজিতেই করেন। যৌবনের প্রারম্ভেই গাদ্দাফির প্রহসনের শিকার হয়ে শায়খ সাল্লাবি আট বছর বন্দি থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি সাউদি আরব চলে যান। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও উসুলুদ্দিন বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সনে অনার্স সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান সুদানের উম্মু দুরমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে উসুলুদ্দিন অনুষদের তাফসির ও উলুমুল কুরআন বিভাগ থেকে ১৯৯৬ সনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৯ সনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ফিকহুত তামকিন ফিল কুরআনিল কারিম’। ড. আলি সাল্লাবির রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু বিশ্বখ্যাত ফকিহ ও রাজনীতিক ড. ইউসুফ আল কারজাবি। কারজাবির সান্নিধ্য অর্জনে তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কাতার গমন করেন। নতুন ধারায় সিরাত ও ইসলামি ইতিহাসের তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে ড. আলি সাল্লাবি অনুসন্ধিৎসু পাঠকের আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নবিজির পুর্ণাঙ্গ সিরাত, খুলাফায়ে রাশিদিনের জীবনী, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসি খিলাফত, উসমানি খিলাফতের উত্থান-পতনসহ ইসলামি ইতিহাসের সাড়ে তেরোশ বছরের ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন। তা ছাড়া ইসলামি ইতিহাসে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করা ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি আলাদা আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির রচনা শুধু ইতিহাসের গতানুগতিক ধারাবর্ণনা নয়; তাঁর রচনায় রয়েছে বিশুদ্ধতার প্রামাণিক গ্রহণযোগ্যতা, জটিল-কঠিন বিষয়ের সাবলীল উপস্থাপনা ও ইতিহাসের আঁকবাঁকের সঙ্গে সমকালীন অবস্থার তুলনীয় শিক্ষা। এই মহা মনীষী সিরাত, ইতিহাস, ফিকহ ও উলুমুল কুরআনের উপর আশির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাবলি ইংরেজি, তুর্কি, ফরাসি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীর জ্ঞানগবেষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ, নিরাপদ ও সুস্থ জীবন দান করুন। আমিন। —সালমান মোহাম্মদ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক ২৪ মার্চ ২০২০