"লেনিনের 'রাষ্ট্র ও বিপ্লব' শত বছর পরের পাঠ, প্রশ্ন ও পর্যালোচনা" বইটির প্রথম অংশ থেকে নেয়াঃ সময়ের দূরবর্তিতা আসলে উপসাগরের মতাে কিছু নয় যে, তার উপর দিয়ে সাঁকো তৈরি করা যায়; এটা আসলেই পৃথক করে ফেলে; কিন্তু এটা আবার যথার্থভাবে এমন একটা প্রক্রিয়ার সহায়ক ভূমি- যেখানে বর্তমান নতুন সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়। এক্ষেত্রে যে সাময়িক দূরত্ব তৈরি হয়-তা যে অতিক্রম করতেই হবে এমন নয়। ইতিহাসবিদদের সরলসােজা একটা পূর্বধারণা ছিল, কোনাে কালের বয়ান বা চিন্তাকে বুঝতে হলে আমাদের বর্তমান চিন্তার আলােকে নয়- বরং সেই সময়ের পটভূমিটিতে নিজেদের স্থাপন করা জরুরি এবং এ পথেই কেবল ঐতিহাসিক বস্তুনিষ্ঠতার অভিমুখে চালিত হওয়া সঠিক হবে। কিন্তু ঐতিহাসিক কোনাে বােঝাপড়ার ক্ষেত্রে সময়ের দূরবর্তিতাকে একটা ইতিবাচক ও সহায়ক পরিস্থিতি আকারে শনাক্ত করাই ঠিক হবে।...এটা যেকোনাে বিষয়ের প্রকৃত সত্য অর্থকে পরিপূর্ণতায় উত্থিত হতে দেয়...এতে যে কেবল নিত্যনতুন ভুলের উৎসগুলাে ক্রমে ক্রমে বাদ পড়ে এবং অনেক ধারণা ও চর্চার প্রকৃত মানে তার অস্পষ্টতা থেকে ঘেঁকে বেরিয়ে আসে তাই নয়, বরং ইতােমধ্যে আবির্ভূত হয় বিষয়টি বােঝাপড়ার জন্য নতুন নতুন উৎস। যা দৃষ্টিগােচর করে-অনেক ধারণা ও চর্চার অর্থ খোঁজার ক্ষেত্রে অতীতে কম গুরুত্ব পাওয়া সব উপাদান।...সময়ের এই দূরবর্তিতা একদিকে সেসব সংস্কারের শুকিয়ে মরাও নিশ্চিত করে যেগুলাে ছিল একটি নির্দিষ্ট সময়কে ঘিরে সীমিত শক্তির, তেমনি আবার প্রয়ােজনীয় বােঝাপড়ার জন্য যা জরুরি। স্পষ্টতার সঙ্গে সেসবের উত্থানেরও কারণ হয়ে ওঠে। যেসব দরকারি সংস্কার আমাদের বােঝাপড়ায় সহায়ক সেগুলাে থেকে যেসব অদরকারি সংস্কার ভুল বােঝাবুঝিকে বাড়িয়ে তােলে সেগুলােকে পৃথক করার মধ্যদিয়ে সময়ের উপরােক্ত সাময়িক দূরবর্তিতাই কেবল দার্শনিক গূঢ়তা ভেদের প্রকৃত পদ্ধতিগত সংকট তথা hermeneutics-এরও সমাধান দিতে পারে।
Title
লেনিনের 'রাষ্ট্র ও বিপ্লব' শত বছর পরের পাঠ, প্রশ্ন ও পর্যালোচনা - পেপারব্যাক
আলতাফ পারভেজ সাংবাদিক ও গবেষক হিসেবে পরিচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনশাস্ত্রে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন এবং সামরিক জান্তা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়তার কারণে ডাকসুতে সদস্য নির্বাচিত হন। সাংবাদিকতা জীবনে প্রথম থেকে ‘কাউন্টার রিপোর্ট’ ধারণার চর্চা শুরু করেন এবং ১৯৯০ পরবর্তী শাসনামলে আনসার বিদ্রোহ ও কারা বিদ্রোহ নিয়ে সাড়া জাগানো কাজ করেছেন। প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ১০- এর অধিক । ২০১৫ সালে তাঁর সর্বশেষ প্রকাশিত গ্রন্থ ‘মুজিব বাহিনী থেকে গণবাহিনী’ ইতিহাসের পুনর্পাঠ বাংলাদেশের রাজনৈতিক সাহিত্যে সবচেয়ে আলোচিত একটি গবেষণা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বর্তমানে প্রধানত দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস ও রাজনীতি তাঁর আগ্রহের বিষয়।