বিপ্লবীর সাধনা ইংরাজী ১৯১৫ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হইতেছি। আমার মা তখন মাতুলালয়ে—তিনি অসুস্থ, কবিরাজী চিকিৎসা চলিতেছে, পিতা কলিকাতায় চাকুরীস্থলে। মেজভাই (কৃষ্ণ নারায়ণ) পিসিমার বাড়িতে থাকিয়া স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশুনা করিতেছে। ছোটভাই দু'টি মায়ের কাছে মামার বাড়ীতে আছে। সুতরাং বাড়ীতে আমি একা, অবশ্য কনে-কাকা ও খুড়তুত ভাই ললিত আছে। চুঁচুড়ার খড়ুয়াবাজারে কাকার একখানি কাপড়ের দোকান আছে। পিতা-পুত্রে ঐ দোকান পরিচালনা করে—সকাল সকাল দোকানে যায় আর ফেরে রাত দশটার সময়। বাড়ীতে আর একটি অবশ্য-পোষ্য গাভী আছে— নাম ‘সরস্বতী’। প্রকৃতপক্ষে আমরা তাহাকে পুষি না সেই আমাদের পোষণ করে । অতি শান্ত প্রাণী, তিনবার দুধ দেয়—গড়ে আড়াই সের হিসাবে দৈনিক সাড়ে সাত সের। নিজে রাঁধি দু'বেলার জন্য—খাই আর পড়ি। একদিন সকালে মামার বাড়ী হইতে পত্র আসিল, লিখিয়াছেন দাদা মহাশয় (শ্রীবেণীমাধব তা)—“মা ভাল আছে, কোন চিন্তা করিও না—ভাল করিয়া পড়াশুনা কর, ইত্যাদি”। কয়েকদিন হইতে সত্যই পড়ায় মন বসিতেছিল না, মায়ের জন্য একটা দুশ্চিন্তা মনের মধ্যে ঘোরাফেরা করিতেছিল। এই পত্র পাইয়া মনটা হাল্কা হইয়া গেল। সেদিন পুকুরে মাছ ধরিয়া বিকেলের জন্য রান্না করিয়া রাখিলাম বেশ মনে পড়ে—যেন সেদিনের কথা। রাতে পড়াশুনা শেষ করিয়া যখন খাইবার জন্য রান্নাঘরে যাইতেছি—পাড়ার ঘরের দরজা খুলিবামাত্র একটা খুব জোর শব্দ শুনিতে পাইলাম—মনে হইল যেন আধখানা বাড়ীর ছাদ ধসিয়া পড়িল। সমস্ত শরীরটাকে এমনভাবে নাড়া দিল যে আর খাইতে যেতে পারিলাম না, খাইবার ইচ্ছাও চলিয়া গেল।