বিদূষণ, অর্থাৎ অশ্রদ্ধা, অবজ্ঞা কিংবা বিরােধিতা তথা আক্রমণের মনােভাব নিয়ে যে সমালােচনা, যার পেছনে থাকে সমালােচিত ব্যক্তিকে হেয়, তুচ্ছ, অবমানিত অসম্মানিত করার কুটিল উদ্দেশ্য বা প্রবণতা-তা সাহিত্যজগতে দেখা গেছে প্রায় সব প্রথিতযশা সাহিত্যিকের কপালে কমবেশি জুটছে। জীবিতকালে তাে বটেই, মৃত্যুর পরেও তাদের অনেকে বিদূষণ থেকে রেহাই পান নি। আমাদের দেশে বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র, নজরূল, বিদূষণ-পীড়িত হয়েছেন। তবে রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে বিদূষণ যতটা পরিমাণে এবং যতটা বিস্তীর্ণ কালব্যাপী পুঞ্জিত হয়েছে, এবং তার উগ্রতার যে তাণ্ডব অবিশ্রান্ত দেখা গেছে এবং যার শেষ বা নিবৃত্তি আজও হয়নি— এমনটি পৃথিবীর আর কোনাে সাহিত্যিকের বেলায় ঘটেছে কিনা জানি না। রবীন্দ্রবিদূষণ বাংলা সমালােচনা সাহিত্যের এক বিরাট অঙ্গ হয়ে আছে, যার প্রতি যথােচিত বা পূর্ণ আলােকপাত করা হয়নি। কিছু আংশিক বিবরণ দেখা গেছে, যেমন ১৩৮৪ সালে প্রকাশিত সুজিতকুমার সেনগুপ্তর জ্যোতির্ময় রবি ও কালাে মেঘের দল’ কিংবা নন্দরাণী চৌধুরীর সম্পাদনায় কলকাতার টেগাের রিসার্চ ইনস্টিটিউট কর্তৃক প্রকাশিত সাময়িক পত্রে রবীন্দ্র প্রসঙ্গ সাহিত্য ও সুরেশচন্দ্র সমাজপতি (১৩৭৭)। ১৩৬৭ সালে প্রকাশিত আমার রবীন্দ্র সাহিত্য সমালােচনার ধারা’ গ্রন্থেও আংশিক বিবরণ আছে। কিন্তু এর একটা আনুপূর্বিক পূর্ণাঙ্গ ইতিবৃত্ত তুলে ধরার কোনাে প্রচেষ্টা এ যাবৎ দেখা যায়নি। বলতে পারি বর্তমান গ্রন্থ সেই প্রচেষ্টার প্রথম পদক্ষেপ।