বীতংস সংসার-আশ্রমে থাকবার আর কোন অর্থ হয় না। সুন্দরলালের মোহ কেটে গিয়েছে অন্তত। আজ যে তোমার বন্ধু, সামান্য অর্থের জন্য কাল সে তোমার গলা টিপে ধরতে পারে, বড় আদরের যে সহোদর ভাইটিকে তুমি একদন্ড চোখের আড়াল করতে পারো না, এক ছটাক জমির জন্য কাল হয়তো সে তোমার নামে এক নম্বর ফৌজদারী রুজু করে দেবে; যে রূপবতী স্ত্রীর পায়ে যথাসর্বস্ব পণ করে তুমি কাপড়ে গহনায় নৈবেদ্য সাজিয়ে দিচ্ছ, একদিন ভোরবেলা হয়তো দেখবে গাঁয়ের ছট্টু তেওয়ারীর সঙ্গে সে রাতারাতি হাওয়া হয়ে মিলিয়ে গিয়েছে। সুতরাং মোহ-মুদ,রের ভাষায় একদিন ‘কা তব কান্তা কস্তে পুত্রঃ' ব’লে বেরিয়ে পড়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। এবং সুন্দরলাল বুদ্ধিমান লোক, তাই তিরিশ বছর না পেরোতেই সংসার ছেড়ে সুরু হয়েছে তার অগস্ত্যযাত্রা! কোনো বন্ধনই আজ আর তাকে পিছু টানে না। মহিষচুরির ব্যাপার নিয়ে গাঁয়ের জমিদারের সঙ্গে এখন আর মামলা করতে হয় না; ছুটু তেওয়ারীর সন্দেহজনক গতিবিধি লক্ষ্য করবার জন্য দিনরাত চোখ কান খাড়া করে বসে থাকবার দরকার নেই, পাথরের মত নির্মম রাঙা মাটিতে কঠিন পরিশ্রমে লাঙ্গল ঠেলেও যদি ভালো গমের ফলন না করা যায়, তা হলেও এখন আর সম্বৎসরের ভাবনা ভাবতে হয় না।