"ইবনেসিনা"বইটির প্রথমের কিছু অংশ: এক মিহিরগন উৎসব! সারাদেশ মেতে উঠেছে অফুরান আনন্দে। হাসিখুশি রঙ-তামাশা আর নাচেগানে ঝলমল করছে সমগ্র বােখারা। সেজেগুজে রাস্তায় বেরিয়েছে শিশু আর কিশাের-কিশােরীরা। বেণিতে গােলাপ লাগিয়ে হাততালি দিয়ে গান ধরেছে সুন্দরী যুবতীরা। ফলের বাজারগুলাে উপচে উঠেছে ক্রেতার ভিড়ে। খচ্চরের পিঠে বসে বড্ড বেশি বুড়ােরাও আজ বেড়াতে বেরিয়েছেন নগরীর রাজপথে। এমন আমােদ-আঙ্গাদের দিনে পরদেশিরাও ঘরে বসে নেই। তারাও দল বেঁধে এই বিচিত্র উৎসব দেখতে ও তাতে শরিক হবার জন্যে চিত্রিত আলখাল্লা গায়ে চাপিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন বাইরে। বােখারায় আজ ছুটির দিন। আজ কোনাে কাজ নেই। আজ কেবল আনন্দ আর আনন্দ। কেবল একটি ছেলের মুখে হাসি নেই। কে সে? নাম তার হােসায়েন। বােখারার দেওয়ান আবদুল্লাহর পুত্র। ফুটফুটে চেহারা। বুদ্ধিদীপ্ত দুটি চোখে হাজারাে জিজ্ঞাসার অজস্র ঝিকিমিকি। বয়েস মােটে দশ বছর; অথচ এরই মধ্যে মুখস্থ করে বসে আছে পুরাে কোরআন শরিফ। তা, হাসিখুশি হােসায়েন অমন বিমর্ষ কেন আজ? কী হয়েছে তার? না, তার নিজের কিছুই হয়নি। তাদের মহল্লার একটি যুবক আজ মধ্যরাতে মারা গেছে। গােটা তল্লাটের সব বয়েসের মানুষ সেই যুবককে ভালােবাসত। চমৎকার চেহারা ছিল তার। আর ছিল নিটোল স্বাস্থ্য। যেমন বুদ্ধি তেমনি সাহস। আর ছিল দরদভরা মন। আপন-পর যে-ই হােক না কেন; কারাে কোনাে বিপদ ঘটলে সবার আগে ছুটে যেত এই মারুফ। ওর বাবা ইয়াকুব বােখারি তিন রাস্তার মােড়ে একটা ছোেট্ট সরাইখানা চালান। বুড়াে বয়েসে মােসাফিরদের দেখাশােনা করতে কতই না কষ্ট তার। তবু তিনি মারুফকে দোকানে বসাননি। ছেলের যেরকম দয়ার শরীর গরিব লােকদের বিনে পয়সায় খাইয়ে লালবাতি জ্বেলে দেবে ব্যবসায়! পাড়ার ছেলেদের সর্দার ছিল মারুফ। আর হােসায়েন ছিল তার সর্বক্ষণের সঙ্গী। মারুফ অমন দুম করে মরে যাবে তা সে স্বপ্নেও ভাবেনি। সকালে সারা শহর যখন আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠতে শুরু করেছে, মনমরা হােসায়েন তখন শামিল হল মারুফের শবযাত্রায়। বড়রা প্রথমে তাকে সঙ্গে নিতে চাননি। একে তাে দেওয়ানের ছেলে, তার ওপর অল্প বয়েস। এমন উৎসবের দিনে বাচ্চাদের গােরস্তানে যেতে
কবি ও কথাশিল্পী আবু কায়সারের জন্ম ১৯৪৫ সালে ১২ ফেব্রুয়ারি-পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার অন্তর্গত জিয়াগঞ্জে। তার বাবা মরহুম শফিউদ্দিন আহমেদ ছিলেন। বাংলাদেশের জামালপুরের অন্তর্গত পিংনা এলাকার ফুলদহের পাড়া গ্রামের মানুষ। মা শামসুন নাহারের জন্ম টাঙ্গাইলের মীরের বেতকা গ্রামে ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ দ্বিখণ্ডিত হলে পরিবারটি কলকাতা থেকে স্বদেশে ফিরে আসে এবং টাঙ্গাইল শহরে থিতু হয়। আবু কায়সারের শৈশব কেটেছে মুর্শিদাবাদ ও কলকাতায়। কৈশাের টাঙ্গাইলে। শিক্ষা বিন্দুবাসিনী উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়, সাদত কলেজ ও মওলানা মােহাম্মদ আলী কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি সহ সম্পাদক, সহকারী সম্পাদক ও সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে দেশের প্রথম সারির বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিকীতে কাজ করেছেন। যেমন ১৯৬৬-৬৯ দৈনিক পাকিস্তান (পরবর্তীকালে দৈনিক বাংলা) ও একই প্রতিষ্ঠানের মাসিক (পরে সাপ্তাহিক) বিচিত্রা, ১৯৬৯-৭১ দৈনিক ইত্তেফাক, ১৯৭২-৭৪ দৈনিক গণকণ্ঠ এবং ১৯৯০-৯৮ দৈনিক সংবাদ। ১৯৯৮ সাল থেকে তিনি দৈনিক ভােরের কাগজের সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। আবু কায়সার শৈশব-কৈশােরেই কলকাতার সন্দেশ, মৌচাক, শিশুসাথী ও শুকতারার মতাে শিশু-মাসিকে কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ লেখেন। ঢাকায় শিশু-মাসিক আলাপনী এবং কচি ও কাঁচা ছাড়াও দৈনিক সংবাদের খেলাঘর ও ইত্তেফাকের কচি কাঁচার আসরে তাঁর অনেক লেখা প্রকাশিত হয়েছে। ছােটদের জন্য এখনাে তিনি প্রায় নিয়মিতই লেখেন। গল্প, কবিতা, ছড়া, উপন্যাস ও অনুবাদ মিলিয়ে তার শিশুকিশাের উপযােগী বইয়ের সংখ্যাই বর্তমানে বাইশ। তিনি মুক্তিযােদ্ধা লেখক পুরস্কার, মুক্তিযােদ্ধা সাংবাদিক পদক এবং শিশুসাহিত্যের জন্যে দু’বার অগ্রণী ব্যাংক শিশু একাডেমী পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি মৃত্যুবরণ করেন ২০০৫ সালে।