"আত্মজৈবনিক রবীন্দ্রনাথ" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: বহুমাত্রিক রবীন্দ্রনাথ যেমন বিচিত্র জীবন পরিক্রমার দৃষ্টান্ত তেমনি নানা ক্ষেত্রে সৃষ্টিশীল এক প্রতিভা। শুধু সৃষ্টিশীলই নন, তিনি কর্মব্রতী, দার্শনিক প্রজ্ঞাময়, শিল্পসাহিত্যতাত্ত্বিক ও সমাজচিন্তক। এই বহুমুখী প্রতিভার সবচেয়ে বড় কৃতি বাঙালির সংস্কৃতি ও সাহিত্যিক ভাষা সৃষ্টি। নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন দেশ ও বিশ্বের সর্বত্র, সত্তাময় অস্তিত্বকে বিচ্ছুরিত করে দিয়েছেন শিক্ষানীতি-সাহিত্যকলায়। তিনি আমাদের জাতীয় জীবনেরও আইকন। সাহিত্য ক্ষেত্রে তাঁর প্রকাশ বর্ণভীর। এই গভীরতার একটি দিক উন্মোচিত হয়েছে তাঁর আত্মজৈবনিক রচনাকর্মে। চিঠিপত্র, স্মৃতিচারণ, অভিভাষণ প্রভৃতি বিষয়েও রবীন্দ্রনাথ স্বতন্ত্র ও স্বকীয়। তাঁর আত্মপ্রভ প্রকাশ লক্ষণীয় তিনটি আত্মস্মৃতি পরিক্রমামূলক রচনায়-ছেলেবেলা, জীবনস্মৃতি ও আত্মপরিচয়-এ। এই ত্রয়ী রচনাকর্মে রবীন্দ্রনাথ নিজের বাল্য-কৈশোর থেকে কবিসত্তার জীবনসূত্রটি ব্যক্ত করেছেন। ছেলেবেলা শেষ বয়সে ১৯৪০ সালে লেখা হলেও এতে তাঁর আশ্চর্য স্মৃতিশক্তি ও প্রকরণকলার নতুন দিক ধরা পড়ে। ঝরঝরে নির্মেদ, চিত্রধ্বনিময় গদ্যশৈলীতে লেখা ছেলেবেলায় চেতনা লাভের পর থেকে বিলেতযাত্রা পর্যন্ত সময়পর্ব অবলম্বন করা হয়েছে। ঠাকুরবাড়ির ঐতিহ্য-সংস্কৃতি, জীবনযাপনরীতি, আত্মপরিজনদের আনন্দদায়ক স্মৃতি মন্থন করেছেন তিনি। তেমনি জীবনস্মৃতিতে আছে তাঁর শিক্ষাজীবন, বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের সংস্পর্শ ও অনুপ্রেরণার ইতিবৃত্ত এবং নিজের সৃষ্টির উন্মেষ ও বিকাশের ইতিবৃত্ত। আর তৃতীয় রচনা আত্মপরিচয়-এ রবীন্দ্রনাথ নিজের কবিসত্তার জীবনসূত্র, পরিচিতি-প্রমাণ, দর্শন, প্রকৃতি, ধর্ম, নন্দনতত্ত্ব প্রভৃতি নিয়ে মূল্যবহ আলোচনা করেছেন। এই ত্রয়ী রচনাভিত্তিক সংকলনটি রবীন্দ্রজীবন ও তাঁর দেশকাল এবং সৃষ্টিপ্রতিভার অন্তঃশীল রূপ ও স্বরূপকে ধারণ করে আছে। পাঠক গ্রন্থটি পাঠে পাবেন রবীন্দ্রনাথের জীবনপরিক্রমার একটি প্রায়-পূর্ব বৃত্তায়ন ও নান্দনিক আনন্দ। রবীন্দ্রচর্চার ক্ষেত্রেও গ্রন্থটি গুরুত্বপূর্ণ আকর হিসেবে গণ্য হতে পারে।
গবেষক ও প্রবন্ধকার বেগম আকতার কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। তাঁর জন্ম চট্টগ্রাম শহরে। পিতা মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা, মা মজিদা বেগম। বেগম আকতার কামাল ১৯৯২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ‘বিষ্ণু দে-র কবিমানস ও কাব্য’ শীর্ষক গবেষণার জন্য পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।