'তিনিই আমার রব' বইয়ের লেখকের কথাঃ সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। সালাত ও সালাম প্রিয়তম নাবী, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তার সাহাবী রাযিয়াল্লাহু আনহুম এবং তার প্রিয়জনদের জন্য। এই বইটি মহান আল্লাহ তা`আলার কিছু নাম নিয়ে রচিত। মহা শক্তিধর আল্লাহ তাআলার গুণবাচক কিছু নাম নিয়ে আমি এক দুর্বল, এক অক্ষম বান্দা, যার জ্ঞান সীমাবদ্ধ, তবুও আমি লিখেছি আমার মহাজ্ঞানী প্রতিপালক, মহান আল্লাহর জন্য। বইটি আমি এমন ধাঁচে লেখার চেষ্টা করেছি, যেন সমাজের মধ্যম স্তরের লোকেরা বুঝতে পারে; অসুস্থ মানুষ বিছানায় শুয়ে, দুঃখী লোকেরা ছলছল চোখে, আর বিপদাপদের মাঝে একজন বান্দা যেন তা পড়তে পারে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আছে, মহান প্রতিপালক আল্লাহ রব্বল আলামীনের সাথে নিজের অন্তরকে সম্পৃক্ত করা, তাঁর পরিচয় লাভ করা, তিনি যে আমাকে দেখছেন—এই ভাবনা জাগরুক রাখা, তাকে ভয় করা, তাঁর কাছেই কোনো কিছুর প্রয়োজনে আশা করা—এগুলো যেমন আখিরাতে সফলতা এনে দেয়, তেমনই দুনিয়াতেও প্রতিটি বিষয়ে আমাদের বিজয়ের দ্বার খুলে দেয়। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যত দুশ্চিন্তা, দুর্ভাবনা, বিপদ—সবই কেটে যেতে পারে, যদি বান্দা তার সৃষ্টিকর্তার সাথে নিজের সংযোগ স্থাপনে গুরুত্ব দেয়—যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন শুধু তাঁর ইবাদাতের জন্যই। আল্লাহর নান্দনিক নামগুলো হতে পারে 'ঈমানের বড়সড় একটি দরজা। এর ভেতর দিয়ে বান্দা এক বিশেষ পবিত্র জগতে প্রবেশ করে। যেখানে তার অন্তর আল্লাহর সম্মানে তাকে সিজদা করে এবং তাঁর ভয়ে, বিনম্র ভালোবাসায় তাঁরই অভিমুখী হয়। এই বইয়ে আল্লাহর অসংখ্য গুণাবলির হাতেগোনা কয়েকটি দ্বারা আমি অক্ষম বান্দা তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে চেয়েছি। আর প্রথমে আমার নিজেকে এবং তারপর আমার দ্বীনী ভাইবোনদের জানাতে চেয়েছি যে, আল্লাহ সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। তাঁর দয়ার ভাণ্ডার অফুরন্ত। তিনি সব কিছু শোনেন, স-অ-ব কিছু দেখেন। এই বইয়ের মাধ্যমে আমি আমার সেই ভাইয়ের কাঁধে সমবেদনার হাত রাখতে চাই, যে দুঃখ-দুর্দশায় পতিত। আমি এমন ভাইয়ের মাথায় হাত বুলাতে চাই, যে তীব্র মাথাব্যথায় কাতর। এই বইয়ে আমার লেখা বর্ণগুলোতে আমি লুকিয়ে রেখেছি আমার বিনিদ্র রজনীর অশ্রুধারা। যা দ্বারা আমি নিভিয়ে দিতে চাই প্রত্যেকের অন্তরে প্রজ্বলিত বেদনার অগ্নিশিখা। এই বই রচনার পেছনে আমার ভেতরে আরও যে বিষয়টি কাজ করেছে, সেটি হলো— আল্লাহর নামগুলো না জানলে তো আমরা মরুভূমিতে পথহারা লোকের মতো হয়ে যাব। মরুভূমির গনগনে রোদে আমাদের দিনগুলো, আমাদের প্রাত্যহিক ‘আমালগুলো ঝলসে যাবে। ফলে অন্তরে সারাক্ষণ বিরাজ করবে দুশ্চিন্তার কালো মেঘ। তাই, আসুন, সবচেয়ে আপনজন হিসেবে আল্লাহকেই বেছে নিই। তাঁকে চেনা এবং জানার চেষ্টা করি। তাঁর ওপর ঈমান আনি। তাঁর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করি। কেবল তাঁরই ইবাদাত করি। প্রয়োজনে তাঁরই সামনে নত হই। তাঁর নৈকট্য অর্জন করি। অবশ্যই আমরা সুখী হবো। আমাদের ভাগ্য খুলে যাবে। অন্যথা আমাদের বেছে নিতে হবে ভ্রান্তি ও ভুলের পথ; যে পথে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে পদে পদে। যে পথে ক্লান্তি অনুভূত হয় ক্ষণে ক্ষণে। যে পথ ছিন্নভিন্ন করে মানুষের অন্তরাত্মা। আমি এ দাবি করব না যে, বইটি জ্ঞানে পরিপূর্ণ অথবা অন্য সকল বইয়ের তুলনায় এটি ভালো। আমি শুধু আল্লাহর প্রতি আমার নির্ভরতা, আমার অক্ষমতা ও ভুল-ভ্রান্তি স্বীকার করে নেবো। এই বইয়ে যদি ভালো কিছু থাকে, তবে এটিই চাইবো—তা যেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেন। আর যদি অন্য কিছু থাকে, তাহলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তো জানেনই যে, ভুল আমার পক্ষ থেকেই হয়েছে। আর আমি এও জানি, তিনি ক্ষমা করে থাকেন। আল্লাহর কাছে চাই নিয়্যাতের বিশুদ্ধতা, কলম ও অন্তর থেকে উদ্ভূত ভুল-ত্রুটির সূচিপত্রঃ
আস-সামাদ তথা স্বয়ংসম্পূর্ণ..........১৭ আল-হাফীয তথা মহারক্ষক..........৩১ আল-লাতীফ তথা সূক্ষ্মদর্শী..........৪৯ আশ-শাফী তথা আরােগ্যদাতা..........৫৯ আল-ওয়াকীল তথা পরম নির্ভরযােগ্য..........৭৫ আশ-শাকূর তথা গুণগ্রাহী..........৯১ আল-জাব্বার তথা মহিমান্বিত..........১০৯ আল-হাদী তথা পথপ্রদর্শক..........১২১ আল-গাফুর তথা মহা-ক্ষমাশীল..........১৩৩ আল-কারীব তথা নিকটবর্তী..........১৪৭ উপসংহার..........১৬৩
১৯৯৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা প্রফেসর ড. আবূবকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া। ২০১৬ সালে টংঙ্গীস্থ তা’মিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা থেকে আলিম (এইচএসসি সমমান) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। সে বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান লাভ করেন। বর্তমানে কলা অনুষদের অধীনে আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে চতুর্থবর্ষে অধ্যয়নরত। ইতোমধ্যে তার লিখিত/অনূদিত ৯টি বই প্রকাশিত হয়েছে। অত্র গ্রন্থের অবশিষ্ট খণ্ডের অনুবাদ করছেন।