"ঠাকুরমার ঝুলি" বইটি সম্পর্কে কিছু কথা: ঠাকুরমার ঝুলি (ছবি সহ) বাংলা শিশুসাহিত্যের একটি জনপ্রিয় ও বহুলপঠিত রূপকথার সংকলন। গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯০৬ সালে। গ্রন্থভুক্ত রচনাগুলাে পুরােপুরি দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের মৌলিক রচনা নয়, অবিভক্ত বাংলাদেশের লােকসমাজে যুগ যুগ ধরে প্রচলিত রূপকথার সংগ্রহ সম্ভার মাত্র। সংগৃহীত হলেও, দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের লিখনভঙ্গির গুণে গ্রন্থভুক্ত গল্পগুলাে অতুলনীয় শিশু-মনােরঞ্জক সাহিত্যকর্ম হয়ে উঠেছে, অর্জন করেছে মৌলিক রচনার গুণ-বৈশিষ্ট্য। দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার সেই রূপকথার জাদুকর, যার হাতের ছোঁয়ায় সংগৃহীত গল্পগুলাে তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। এ প্রসঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, “তিনি ঠাকুরমার মুখের কথাকে ছাপার অক্ষরে তুলিয়া পুঁতিয়াছেন, তবু তাহার পাতাগুলি তেমনি সবুজ, তেমনি তাজাই রহিয়াছে। রূপকথার সেই বিশেষ ভাষা, বিশেষ রীতি, তাহার সেই প্রাচীন সরলতাটুকু তিনি যে এতটা দূর লক্ষ্য করিতে পারিয়াছেন, ইহাতে তার সূক্ষ্ম রসবােধ ও স্বাভাবিক কলানৈপুণ্য প্রকাশ পাইয়াছে।” দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার চেয়েছিলেন, গল্পগুলাে তিনি যেভাবে শুনেছিলেন, যে আঞ্চলিক ভাষায় শুনেছিলেন, সেই রূপ ও রস অবিকৃত রেখে তার মতাে করে পরিবেশন করতে। তিনি ভেবেছিলেন, এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট স্বাধীনতার আশ্রয় নিলে তার সংগ্রহের কোনাে মূল্যই থাকবে না। গল্পগুলাে তিনি সংগ্রহ করেছিলেন তৎকালীন বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার গ্রামাঞ্চল থেকে। এই গ্রন্থের প্রথম প্রকাশক ছিলেন সেকালের নামকরা প্রকাশক কলকাতার ‘ভট্টাচার্য অ্যাণ্ড সন্স'। লেখকের জীবদ্দশাতেই এ গ্রন্থের বহু সংস্করণ হয়, তার মৃত্যুর পরও তা অব্যাহত রয়েছে। ঠাকুরমার ঝুলি বাংলা শিশুসাহিত্যে ধ্রুপদ বা চিরায়ত সাহিত্যকর্মের মর্যাদায় অভিষিক্ত ।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্পকার, চিত্রশিল্পী, সংগীতস্রষ্টা, অভিনেতা, কন্ঠশিল্পী, কবি, সমাজ-সংস্কারক এবং দার্শনিক। গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য প্রথম বাঙালি হিসেবে ১৯১৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ মে তৎকালীন ব্রিটিশ-শাসিত ভারতে কলকাতার ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিমনা জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। ভানুসিংহ ঠাকুর ছিল তাঁর ছদ্মনাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই মানেই এক মোহের মাঝে আটকে যাওয়া, যে মোহ পাঠককে জীবনের নানা রঙের সাথে পরিচিত করিয়ে দেয় নানা ঢঙে, নানা ছন্দে, নানা সুর ও বর্ণে। তাঁর ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাট্যগ্রন্থ, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর কিছুদিন পরই আলোর মুখ দেখে। কাবুলিওয়ালা, হৈমন্তী, পোস্টমাস্টারসহ মোট ৯৫টি গল্প স্থান পেয়েছে তাঁর ‘গল্পগুচ্ছ’ গ্রন্থে। অন্যদিকে ‘গীতবিতান’ গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে ১,৯১৫টি গান। উপন্যাস, কবিতা, সঙ্গীত, ছোটগল্প, গীতিনাট্য, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনীসহ সাহিত্যের সকল শাখাই যেন ধারণ করে আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই সমূহ। তিনি একাধারে নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা দুই-ই ছিলেন। কোনো প্রথাগত শিক্ষা ছাড়া তিনি চিত্রাংকনও করতেন। তৎকালীন সমাজ-সংস্কারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এই গুণী ব্যক্তিত্ব। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাতেই অনূদিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই সমগ্র। তাঁর যাবতীয় রচনা ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ নামে ত্রিশ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট জোড়াসাঁকোর বাড়িতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পর এতদিন পেরিয়ে গেলেও তাঁর সাহিত্যকর্ম আজও স্বমহিমায় ভাস্বর। আজও আমাদের বাঙালি জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে বিশ্বকবির সাহিত্যকর্ম।