‘গুপ্তবিদ্যা’ বইটির কিছু অংশঃ মুষলধারার বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য হ্যাট টেনেটুনে ঠিক করলেন ফাদার লুকাস ম্যাকগিল, তুলে দিলেন কোটের কলার। ঝড়ো হাওয়ায় খুলে গেছে তাঁর হেন-হাউসের দরজা, আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে মুরগিগুলো, ছোটাছুটি শুরু করে দিয়েছে। হাতের লাঠিটা কাজে লাগিয়ে ওগুলোকে তাড়িয়ে নিয়ে জায়গামতো ঢোকানোর চেষ্টা করছেন ফাদার। কোনও মুরগি হারিয়ে গেল কি না জানার জন্য মনে মনে গুনছেন ওগুলো। বিড়বিড় করে বললেন, ‘কী একখানা রাত! বিদ্যুৎ চমকে উঠল আকাশে। উদ্ভাসিত হলো হেনহাউসের আশপাশের উঠান আর দক্ষিণ-ফ্রান্সের প্রত্যন্ত এক পল্লী। ফাদারের কটেজ-গার্ডেনের নিচু পাথুরে-দেয়ালের পেছনে নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে আছে দশম শতাব্দীর নিদর্শন সেইন্ট বারনাবাস চার্চ। সেটার পাশে মামুলি একটা কবরস্থান। ধসে পড়েছে বেশিরভাগ সমাধিফলক, আইভিলতার জঙ্গলে পরিণত হয়েছে জায়গাটা। আরও একবার চমকে উঠল বিদ্যুৎ, বাজ পড়ল দুরে কোথাও। বৃষ্টির বেগ বেড়েছে। ইতিমধ্যে সবগুলো মুরগি হেন-হাউসে ঢুকিয়ে ফেলেছেন, ফাদার। দরজার হুড়কো তুলে দিয়ে ওটা শক্ত করে আটকে দিলেন তিনি। আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে আসছে মুরগিগুলো। ঘুরলেন ফাদার, কটেজের দিকে......... শেষের কথাঃ করুণ আকুতি জানালেন ধনকুবের পিয়েরে উইনিং: মরতে বসেছে তাঁর নাতনি, ব্যর্থ হয়েছে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান, এখন কেবল একটা মিথ.... অ্যালকেমির পুরনো এক পাণ্ডুলিপিই হয়তো পারে মিনতিকে বাঁচাতে। চমকে গেল রানা মেয়েটির নাম শুনে! সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে রানা বুঝল, অনুরোধে পেঁকি গিলেছে। ওই পাণ্ডুলিপির অস্তিত্ব আছে কি না তা নিয়ে সন্দেহ তো আছেই, ঝামেলা হিসেবে সঙ্গে জুটে গেছে কানাডিয়ান এক একরোখা সুন্দরী। কোনও এক গুপ্তসংঘও নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চায় ওটার সাহায্যে...যে-কোনও মূল্যে। একাধিকবার মরণফাঁদ পাতল তারা রানা-সেলেনার জন্যে। উপযুক্ত জবাব দিল রানাও। কিন্তু ও জানত না, সব শেষ হয়ে গেছে ভেবে যখন সতর্কতায় ঢিল দিয়েছে একটু, তখনই চুপিসারে হাজির হয়ে যাবে শত্রুপক্ষের ভয়ঙ্করতম খুনিটা।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রহস্য-রোমাঞ্চ গল্পের সাহিত্যধারাকে প্রায় একা হাতে জনপ্রিয় করে তুলেছেন যে মানুষটি তিনি কাজী আনোয়ার হোসেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমেই তৈরি হয়েছে এই সাহিত্যধারার বিশাল পাঠকশ্রেণী। বিদ্যুৎ মিত্র এবং শামসুদ্দিন নওয়াব ছদ্মনামে লিখেছেন অসংখ্য গল্প। পাঠকদের কাছে পরিচিত প্রিয় কাজীদা নামে। প্রখ্যাত গণিতবিদ ও সাহিত্যিক বাবা কাজী মোতাহের হোসেন ও মা সাজেদা খাতুনের ঘরে ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন কাজী শামসুদ্দিন নওয়াব। পরিবারের সঙ্গীতচর্চার ধারাবাহিকতায় প্রথমে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও ১৯৬৩ সালে বাবার দেওয়া টাকায় সেগুনবাগিচায় প্রেসের যাত্রা শুরু করেন। পরবর্তীতে সেই প্রেস থেকেই নিজের সম্পাদনায় পেপারব্যাকে সৃষ্টি করেছেন কুয়াশা, মাসুদ রানা, তিন গোয়েন্দার মতো চিরতরুণ চরিত্রগুলোর। কাজী আনোয়ার হোসেন এর বই ‘কুয়াশা’ সিরিজের মাধ্যমেই মূলত রহস্যধারার বই প্রকাশ শুরু সেবা প্রকাশনীর। এরপর এক বন্ধুর প্রকাশিত জেমস বন্ডের ‘ডক্টর নো’ পড়ে ঠিক করেন বাংলাতেই লিখবেন এই মানের থ্রিলার। সালটা ১৯৬৫, মোটর সাইকেল নিয়ে ঘুরে এলেন চট্টগ্রাম, কাপ্তাই ও রাঙামাটি। সাত মাস সময় নিয়ে লিখলেন মাসুদ রানা সিরিজের প্রথম গল্প ‘ধ্বংস পাহাড়’। এই সিরিজের কাজী আনোয়ার হোসেনের বই সমূহ এর মধ্যে প্রথম তিনটি বাদ দিলে বাকিসবগুলোই লেখা হয়েছে বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে। কাজী আনোয়ার হোসেন এর বই সমগ্র রহস্য-রোমাঞ্চ সাহিত্যের যে পিপাসা পাঠকের মনে তৈরি করেছে তা মেটাতে সাড়ে চারশোরও বেশি মাসুদ রানার বই প্রকাশ করতে হয়ছে সেবা প্রকাশনীকে, যার ধারাবাহিকতা আজও চলমান।