"শ্রেষ্ঠ বিদেশী গল্প"বইটির প্রথমের কিছু অংশ: ম্যাডিসন স্কোয়ারে তার বেঞ্চিটার উপর সােপি অস্বস্তিতে নড়ে উঠল। যখন বুননা হাঁস রাত্রে আকাশে ওড়ে, যখন সিল মাছের চামড়ার কোট না-পরা স্ত্রীলােকেরা তাদের স্বামীদের ওপর সদয় হয়ে ওঠে, আর যখন সােপি পার্কের ভেতরে তার বেঞ্চির উপর অস্বস্তিতে নড়াচড়া করে তখন বুঝতে হবে শীত আসব আসব করছে। একটা শুকনাে পাতা সােপির কোলের উপর উড়ে পড়ল। ওটা শ্ৰীযুক্ত শীতের পত্র। ম্যাডিসন স্কোয়ারের নিয়মিত বাসিন্দাদের প্রতি শ্ৰীযুক্ত বেশ সদয়। তিনি তার বাৎসরিক আগমন-বার্তার সতর্কবাণী সময়মতােই দেন। দেন চারমাথার মােড়ে উত্তর বাতাসকে, দেন উন্মুক্ত স্থানের বাসিন্দাদের বাড়ির দারওয়ানকেও, যাতে অধিবাসী সময় থাকতে প্রস্তুত হতে পারে। সােপির মনে হল যে, আগামী কষ্টের প্রতিকার করবার সময় এসেছে। তাই সে বেঞ্চির উপর অস্বস্তিকরভাবে নড়াচড়া করে উঠল। | তার শীতকালীন উচ্চাকাঙ্ক্ষা খুব উঁচু ধরনের নয়। ভূমধ্যসাগরে জাহাজে চড়ে ঘােরাও নয়, দক্ষিণদেশের দ্রিালু আকাশের তলাতেও নয়, ভেসুভিয়ান উপসাগরে ভেসে বেড়ানােও নয়, এসব কিছুই নয়। দ্বীপের মধ্যে তিনটে মাস কাটানােই তার সত্যিকারের বাসনা। তিন মাসের নিশ্চিত খাওয়া-শােওয়া, মনের মতাে সঙ্গ, পুলিশ আর শীত থেকে নিরাপদ থাকা— জীবনে এর চেয়ে কাম্য জিনিশ সােপির কাছে আর নেই। কয়েক বছর ধরে ব্ল্যাকওয়েলের অতিথিপরায়ণ জেলখানাই হয়ে আসছে তার শীতকালীন আবাসগৃহ। যেমন তার চেয়ে বেশি ভাগ্যবানের দল নিউইয়র্কের লােকেরা পাম-বিচ কিংবা রিভােরার টিকিট কাটে প্রতি শীতকালে, তেমনি সােপিও তার দ্বীপে যাবার বাৎসরিক যাত্রার অন্যান্য আয়ােজন করেছিল। এখন এবারেও সেই সময় এসেছে। আগের রাত্রে তিনটে রবিবারের খবরের কাগজ কেটে এবং পা কোলের ভেতরে নিয়েও তার শীত কাটেনি। সেভাবেই সে সেই পুরনাে পার্কের ঝরনার ধারে বেঞ্চির উপর শুয়ে ছিল। সুতরাং দ্বীপের কথাটাই সােপির মনে সবচেয়ে বেশি করে এবং ঠিক সময়ে উদয় হল। শহরের যারা
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ একইসাথে একজন খ্যাতিমান সাহিত্যিকও। আর সমাজ সংস্কারের বিভিন্ন বিষয়ের সাথে জড়িয়ে থাকায় একজন সমাজ সংস্কারক হিসেবেও পরিচয় লাভ করেছেন তিনি। এই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব কলকাতার পার্ক সার্কাসে ১৯৩৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন, তবে তাঁর পৈতৃক নিবাস বাগেরহাট জেলার কামারগাতি গ্রাম। পাবনা জিলা স্কুল থেকে তিনি মাধ্যমিক এবং বাগেরহাটের প্রফুল্লচন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর উচ্চশিক্ষার্থে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন এবং পরবর্তীতে এখান থেকেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনে একজন শিক্ষক হিসেবে তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। ঢাকা কলেজ, রাজশাহী কলেজসহ বিভিন্ন কলেজে তিনি অধ্যাপনা করেছেন। টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মাধ্যমে টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। আর ষাটের দশকে বাংলাদেশে সাহিত্যের এক নতুন ধারা সৃষ্টির আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তিনি তাঁর সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে, এবং একইসাথে 'কণ্ঠস্বর' নামক একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করে নতুন ঐ সাহিত্যযাত্রাকে করেছিলেন সংহত ও বেগবান। শুধু তা-ই নয়, দেশের মানুষের মাঝে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলে তাদের মাঝে জ্ঞান ও শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়ে তাদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে ১৯৭৮ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন 'বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র', যা চল্লিশ বছরেরও অধিক সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছে এই লক্ষ্যে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এর বই সমূহ এই ব্যাপারে বিশেষ অবদান রেখেছে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'ভাঙো দুর্দশার চক্র', 'আমার বোকা শৈশব', 'নদী ও চাষীর গল্প', 'ওড়াউড়ির দিন', 'অন্তরঙ্গ আলাপ', 'স্বপ্নের সমান বড়', 'উপদেশের কবিতা', 'অপ্রস্তুত কলাম' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সাহিত্য, শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি 'বাংলা একাডেমি পুরস্কার', 'একুশে পদক', 'র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার' ইত্যাদি সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।