"শিকওয়া ও জবাব-ই-শিকওয়া" বইয়ের ফ্ল্যাপের অংশ থেকে নেয়া: ইকবাল একদা স্বপ্ন দেখেছিলেন পাকিস্তান নামক একটি মুসলিম রাষ্ট্রের। তার এই স্বপ্নের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করেছিল বাংলার মধ্যবিত্ত মুসলমান জনসাধারণ। বাংলার মুসলমানের এই একাত্মতার কারণেই একসময় ইকবালের স্বপ্ন অনেকটা বিকৃত রূপ নিয়ে হলেও বাস্তবায়িত হতে পেরেছিল। অথচ এই ইকবালেরই কবিসত্তা ছিল অখণ্ড ভারতীয়ত্বের চেতনায় দীপ্তিমান। পাকিস্তান নামক এক উদ্ভট রাষ্ট্রের উদ্ভবের ফলে বাংলার মুসলমানের কাছে ইকবাল নামটি হয়ে উঠেছিল বহুলভাবে শ্রুত এবং ইকবাল সম্পর্কিত চর্চা ছিল রাষ্ট্রীয় সমর্থনপুষ্ট। সে কারণেই একসময় বাংলায় ইকবালচর্চা ছিল অবিরল ব্যাপার। তবে কবি ইকবালের চেয়ে পাকিস্তানের স্বপ্নদ্রষ্টা ইকবাল ছিলেন সেই আলােচনার প্রধান বিষয়। অথচ • দার্শনিকতা ও কবিত্ব এই দুই কারণেই ইকবাল রবীন্দ্রনাথের মতােই প্রাসঙ্গিক এই উপমহাদেশের মানুষের কাছে। তাই পাকিস্তানের চেতনামুক্ত এই বাংলাদেশে ইকবালের কবিত্ব ও দার্শনিকতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা শিক্ষিত বাঙালিমাত্রেরই কাম্য। না হলে অন্তত একজন মহৎ কবির ঋদ্ধিমান পৃথিবী থেকে বঞ্চিত থাকব আমরা।
গোলাম মোস্তফার জন্ম ১৮৯৭ সালে যশোর জেলার ঝিনাইদহ মহকুমার শৈলকূপা থানার অন্তর্গত মনোহরপুর গ্রামে। পিতা কাজী গোলাম রব্বানী, পিতামহ কাজী গোলাম সরওয়ার। তাঁরা ছিলেন সাহিত্যানুরাগী-ফারসী ও আরবী ভাষায় সুপন্ডিত। তাঁর তিন পুত্রের মাঝে একজন হলেন বিখ্যাত পাপেটনির্মাতা ও চিত্রশিল্পী মুস্তফা মনোয়ার এবং সাম্প্রতিককালের অস্কারজয়ী বাংলাদেশী নাফিস বিন জাফর তাঁর নাতি।
শিক্ষা জীবন গোলাম মোস্তফার শিক্ষা জীবনের সূচনা হয় চার বছর বয়সে নিজগৃহে ও পার্শ্ববর্তী দামুকদিয়া গ্রামের পাঠশালায়। কিছুদিন পরে তিনি ফাজিলপুর গ্রামের পাঠশালাতে ভর্তি হন। দু’বছর এই পাঠশালায় বিদ্যা অর্জনের পরে তিনি ভর্তি হলেন শৈলকূপা উচ্চ ইংরেজী স্কুলে। ১৯১৪ সালে এই স্কুল থেকে বিশেষ কৃতিত্বের সাথে তিনি প্রবেশিকা বা ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯১৬ সালে তিনি দৌলতপুর বি. এল কলেজ থেকে আই. এ এবং ১৯১৮ সালে কলকাতা রিপন কলেজ থেকে বি. এ পাশ করেন। পরে ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজ থেকে বি. টি ডিগ্রীও লাভ করেন।
পেশাগত জীবন ১৯২০ সালে জানুয়ারী মাসে ব্যারাকপুর সরকারি হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক হিসেবে গোলাম মোস্তফার শিক্ষকতা জীবনের সূচনা হয়। ১৯২৪ সালে ব্যারাকপুর হাই স্কুল থেকে তিনি কলকাতা হেয়ার স্কুলে বদলী হন। দীর্ঘদিন এখানে শিক্ষকতা করার পর তিনি কলকাতা মাদ্রাসায় বদলী হন। সেখান থেকে ১৯৩৫ সালে বালিগঞ্জ সরকারি ডিমনেষ্ট্রেশন হাই স্কুলে বদলী হয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদে উন্নীত হন এবং কয়েক বছর পর উক্ত বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদমর্যাদা লাভ করেন। এই বিদ্যালয়ের তিনিই প্রথম মুসলিম প্রধান শিক্ষক। ১৯৪০ সালে তিনি বাঁকুড়া জিলা স্কুলে বদলী হন। শিক্ষকতা জীবনে বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা করার পর ১৯৪৬ সালে তিনি ফরিদপুর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দীর্ঘ ত্রিশ বছর শিক্ষকতা করার পর ১৯৫০ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। বাংলা সাহিত্যের সাধক কবি গোলাম মোস্তফা তাঁর শেষ জীবনের কয়েক বছর ঢাকা শান্তিনগরস্থ নিজ গৃহে (মোস্তফা মঞ্জিল) অতিবাহিত করেন। বেশ কিছু দিন রোগ যন্ত্রণা ভোগ করার পর কবি ১৯৬৪ সালের ১৩ অক্টোবর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।