এক মুঠো ছবি বাংলাসাহিত্য গগনের কনিষ্ঠতম জ্যোতিষ্ক ছোটগল্প। নিজেকে ভাস্বর করতে কৌমুদীর মতো অপরের অনুকম্পার প্রয়োজন হয় না তার। আপন মহিমাতেই সে প্রোজ্জ্বল। এরকমই স্বমহিমায় প্রোজ্জ্বল ১১টি গল্প স্থান পেয়েছে এই সংকলনে। মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, আশা-নিরাশা, প্রেম-অপ্রেমের মনস্তাত্ত্বিক আখ্যানই এই সংকলনের গল্পগুলিতে প্রতিফলিত হয়েছে বার বার। দেশ ভাগের অশান্ত সময়। ছেলের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও বাংলাদেশ ছাড়তে পারছেন না হরমোহন চক্রবর্তী। কারণ তাঁদের কূলদেবতা ফুট দেড়েক লম্বা কষ্টি পাথরের গোপাল। কিন্তু ভাগ্নীর অস্বাভাবিক মৃত্যু বাধ্য করে তাকে দেশ ছাড়ার কথা ভাবতে। তারপর? এভাবেই “গোপাল” গল্পে এক অশান্ত সময়ে হরমোহনবাবুর অশান্ত মানসিকতা বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে রূপ নিয়েছে এক জলজ্যান্ত ছবির। “পঙ্কজ” গল্পে এক পকেটমারের জীবনের মূল স্রোতে ফিরতে চাওয়া ও না পারার করুণ কাহিনি কিংবা “এক যে ছিল নদী” গল্পে এক সাঁওতাল কৃষকের একটু ভালো থাকতে চাওয়ার দাবীর মর্মান্তিক পরিণাম লেখকের লেখনীগুণে হয়ে উঠেছে অবশ্যপাঠ্য। “বাস্তু” গল্পে বন্যায় ভেসে যাওয়া এক গরীব উদ্বাস্তু পরিবারের বাস্তু ভিটের খোঁজকে কেন্দ্র করে তথাকথিত সমাজের চরম নগ্নতম রূপ যেভাবে লেখক তুলে ধরেছেন তা এককথায় অসামান্য। আবার অন্যদিকে “জোনাকি মন” ও “প্রথম ধরেছে কলি” গল্পে অসম পরিস্থিতিতে অসম বয়সের প্রেম একই রকমভাবে উপভোগ্য। লেখক গ্রামবাংলার মানুষ, তাঁর কর্মক্ষেত্রও মফস্সল এলাকা। তাই তাঁর লেখার পটভূমিতে ছড়িয়ে রয়েছে গ্রামবাংলার স্নিগ্ধ পরশ। যা পাঠকের কাছে নিঃসন্দেহে উপরি পাওনা।