ভূমিকা বিশিষ্ট চিকিৎসক, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা: গৌরীপদ দত্ত বংশপরম্পরাতেও এক চিকিৎসক পরিবারের লোক। আদ্যন্ত কমিউনিস্ট আদর্শে বিশ্বাসী হওয়াতে তিনি গণস্বাস্থ্য, চিকিৎসা শিক্ষা এবং রোগ প্রতিরোধের সমস্যাগুলিকে তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণী ক্ষমতায় একটি পরস্পর সম্পৃক্ত সামাজিক অর্থনৈতিক সূত্রে গ্রথিত করতে সচেষ্ট হয়েছেন। এরই ফলশ্রুতি বর্তমান পুস্তকের ১৯টি প্রবন্ধ সংকলন, যার মধ্যে দিয়ে তিনি সুস্বাস্থ্যের সন্ধানে তত্ত্বগত বিশ্লেষণ ছাড়াও (ক) জনস্বাস্থ্য আন্দোলন, (খ) চিকিৎসা ব্যবস্থার ক্রমিক ইতিহাস, (গ) বিশ্বায়নের পটভূমিতে জাতীয়/আন্তর্জাতিক নীতি, (ঘ) গ্রামীণ চিকিৎসা, (ঙ) নারী চিকিৎসা এবং সুস্বাস্থ্য/রোগ প্রতিরোধ সংক্রান্ত অন্য কিছু বিষয়ও আমাদের সামনে নিয়ে এসেছেন। একটি লক্ষণীয় দিক যে, আলোচনায় সব সময়ই দৃষ্টিভঙ্গি স্বচ্ছ এবং সামগ্রিক ভাবে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ। লেখক আন্তরিক ভাবে বিশ্বাসী যে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সুস্থতা বোধের গূঢ়ার্থ নিরূপণই স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানের প্রকৃত তত্ত্ব। এরই প্রেক্ষিতে ডা: দত্ত সচেষ্ট হয়েছেন স্বাস্থ্য পরিষেবাকে রোগ চিকিৎসার স্তরে না রেখে প্রকৃত সামগ্রিক উন্নয়নের মাধ্যমে সামগ্রিক স্বাস্থ্য আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করার দিকে। প্রথম তিনটি প্রবন্ধে লেখকের আন্তরিক প্রচেষ্টা রয়েছে যেন এই পরিষেবায় সকলের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত হয়। স্পষ্টভাবে তাঁর আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে প্রাচ্য চিকিৎসার পুনর্মূল্যায়ণে এবং প্রাকৃতিক ও ভেষজ সম্পদের সন্ধান সহ অন্যান্য চিকিৎসার নথিকরণে। চিকিৎসকের দায়বদ্ধতা এবং সেবামূলক মানসিকতার প্রশ্নও এখানে স্বাভাবিকভাবেই উঠে এসেছে। পরবর্তী তিনটি প্রবন্ধে জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের আলোচনায় জাতীয় পর্যায়ে ৫০-এর দশকের ভোর কমিটির প্রতিবেদন এবং আন্তর্জাতিক স্তরে ১৮২টি দেশের অংশগ্রহণে কাজাকস্তানের আলমা আটার ঘোষণা বিশেষভাবে চর্চিত হয়েছে। ভোর কমিটির সুস্পষ্ট মত, দারিদ্র্য যেন মানুষকে সর্বোত্তম চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না করে। অন্যদিকে ১৮২টি দেশের ঐক্যবদ্ধ স্লোগান : ‘সকলের জন্য স্বাস্থ্য' এবং ‘For Social Justice health care is key to everything'—এতদসত্ত্বেও বিশ্ব-রাজনীতি ও বিশ্বায়ন কিন্তু ধনী-দরিদ্র দেশের ফারাক বাড়িয়েই চলেছে এবং স্বাস্থ্য পরিষেবায় এই বৈষম্য ভীষণভাবে প্রকট। প্রাচীন ও অ-বিধিবদ্ধ চিকিৎসা এবং আদিবাসীদের স্বাস্থ্যভাবনা সম্পর্কিত প্রবন্ধগুলি শুধু ঐতিহাসিক তথ্যসমৃদ্ধ নয়, লেখকের অনুসন্ধিৎসু পেশাদারি অভিজ্ঞতা রচনাকেই অত্যন্ত মনোগ্রাহী করে তুলেছে।