বাংলার পটচিত্র, পটুয়াসংগীত, পটুয়াসমাজ ও লোকসংস্কৃতিবিজ্ঞান
ভূমিকা পটুয়া সমাজ ‘লিখিত' পটচিত্র, রচিত ও গীত পটুয়া সংগীত এবং পটপ্রদর্শন ক্রিয়াকে একত্রে পটশিল্প অভিধায় অভিহিত করা যায়। সুদীর্ঘকাল ধরে আমাদের পটের সমগোত্রীয় শিল্পধারা পৃথিবীর প্রায় সবদেশে প্ৰস্তুত হয়েছে। আমাদের দেশে এ সম্পর্কে আলোচনাও হয়েছে বিস্তর। কিন্তু লোকসংস্কৃতিবিজ্ঞানসম্মত সামগ্রিক গবেষণা বিরল। তাই লোকসংস্কৃতিবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলার পটশিল্পের মূল্যায়ন করা অপরিহার্য। সমাজ ও সভ্যতার বস্তুগত পটভূমিকায় এবং জীবন প্রবাহের বৈচিত্র্যের প্রেক্ষাপটে লোকসাধারণের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এমন কী মৃত্যু পরবর্তী অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া ও মরণোত্তর বিশ্বাস-সংস্কার সবকিছু মিলিয়ে জনগোষ্ঠীর লোকসংস্কৃতি। অর্থাৎ লোকজীবন ধারার সামগ্রিক প্রয়াস, প্রতীতি এবং প্রাণময় ও কর্মময় যাবতীয় অভিব্যক্তিই লোকসংস্কৃতি। আধুনিককালে লোকসংস্কৃতি বলতে যে বিষয় সমূহকে নির্দেশ করা হয় তা ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে সুচিহ্নিত হয়েছে। ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম জন থমস্ প্রথম লোকসংস্কৃতি বিষয়ক আলোচনায় ‘Folklore' শব্দটি চয়ন ও ব্যবহার করেন। অল্পাধিক রূপ পরিবর্তন করে আজ পৃথিবীর প্রায় সবদেশে ‘Folklore” শব্দটি প্রচলিত হয়েছে। বাংলায় ঐতিহ্যময় সংস্কৃতি অনুশীলনের ক্ষেত্রে ‘Folklore’-এর প্রতিশব্দ হিসেবে ‘লোকসংস্কৃতি’ শব্দকে সব থেকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ‘Folklore’ শব্দটি একটি ‘Saxon Compound word'। Folk'-এর অর্থ হল সাধারণ মানুষ বা জনসমষ্টি এবং ‘Lore’-এর অর্থ জ্ঞান। ব্যুৎপত্তি গত অর্থ যাই হোক না কেন, নৃবিজ্ঞান ও লোকসংস্কৃতিবিজ্ঞানে সাধারণভাবে ‘Folk’ শব্দটি দ্বারা প্রাচীন জনগোষ্ঠী, সাধারণ মানুষ, ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী, গ্রাম্য কৃষি জনগোষ্ঠী, অনগ্রসর জনসমাজ, গ্রাম্য জন-জাতি প্রভৃতি নির্দেশিত হয়। সাধারণভাবে যারা কৃষিভিত্তিক পল্লীসমাজের অনগ্রসর মানুষ এবং প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক।
Title
বাংলার পটচিত্র, পটুয়াসংগীত, পটুয়াসমাজ ও লোকসংস্কৃতিবিজ্ঞান