পরিচয় ভেক-মূষিকের দুটি গল্প আছে ঈসপের লেখাতে। প্রথমটিতে ইঁদুর নদী পেরোতে সাহায্য চাইলে ব্যাঙের। ব্যাঙ বলল, বেশ। একটা লতার রশি পেঁচিয়ে ইঁদুরের সামনা পায়ের সঙ্গে নিজের পেছনের পা বেঁধে নিল, তারপর সাঁতার দিল জল কেটে। মাঝনদী পৌঁছেই হঠাৎ দুর্বুদ্ধি হল তার, টুপ করে ডুব দিয়ে পড়ল জলে। আর তার পায়ে বাঁধা লতার টানে ইঁদুরও ডুবল। অল্পক্ষণে তার মরা দেহও ভেসে উঠল জলের উপরে। চিল উড়ছিল কাছেই। মরা ইঁদুর চোখে পড়তেই সে ছোঁ দিয়ে তুলল শূন্যে, তারপর বসল গিয়ে নদীপাড়ের গাছে। ইঁদুরের উপরি লতা-বাঁধা ব্যাঙও উঠে এসেছে আপনা-আপনি। দুটিকে ঠুকরে খেলে সে তারিয়ে তারিয়ে। দ্বিতীয় গল্প। অনেক কাল আগে যখন সব পশুপ্রাণীতেই এক ভাষায় কথা বলত, ইঁদুরের সাথে বন্ধুত্ব হল এক ব্যাঙের। ইঁদুর বন্ধুকে খেতে বললে একদিন, তারপর তাকে নিয়ে তুলল তার বাসা গেরস্থর ভাঁড়ার ঘরে। তাকে তাকে রাখা রুটি মেওয়া মাছ পিঠে আরো সব সুখাদ্য। ইঁদুর বললে, যা চাও প্রাণ ভরে খাও বন্ধু, সঙ্কোচ কোরো না। এমন এলাহি ভোজ খাবার পর ব্যাঙেরও পালটা খেতে বলতে হয়। তো সে বললে, বন্ধু, তোমারও তো একদিন যেতে হচ্ছে আমার বাড়ি। বেশ, যাব। ব্যাঙ তাকে নিয়ে গেল পুকুরপাড়ে। বলল, জলে একটা ছোট্ট লাফ দাও বন্ধু, আমি আছি পেছন পেছন। ইঁদুর বললে, আমি তো জলে লাফাতে পারি না। আচ্ছা দাঁড়াও। বলে সে এক হাত লতা ছিঁড়ে নিয়ে তার পিছু-পা আর ইঁদুরের সামনা-পা বাঁধলে জম্পেশ করে, তারপর শাঁ করে ঝাঁপ দিয়ে পড়ল জলে। আর ইঁদুর তো প্রথমে খানিকটা ছটফট নাকানিচোবানি অল্পক্ষণেই তার মরা দেহ ভেসে উঠেছে জলের উপরে। ছটফট করার কালেই ইঁদুর বলেছিল, তোমার মাথায় এতখানি শয়তানি তা তো জানতাম না, কিন্তু জেনে রেখো মরলেও আমি এর শোধ নেব। মরার পরে বেশিক্ষণ গেল না, কাকে ঠুকরে তুলল মরা ইঁদুর, নিয়ে বসল গিয়ে পাড়ে। ইঁদুরের পায়ে বাঁধা ব্যাঙটিও তার ভোজে লেগে গেল।