সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর, যিনি ঘোষণা করেছেন, مَا نَحَّلَ وَالِدٌ وَّلَدَهُ اَفْضَلَ مِنْ اَدَبٍ حَسَنٍ-. অর্থ : কোনো পিতা তার সন্তানকে উত্তম আদবের চেয়ে কল্যাণকর কোনো উপহার দিতে পারেনি। [তিরমিযি ১৭/২] পরকথা হলো, নবুয়াতি ধারা বিলুপ্ত হয়েছে প্রায় ১৪৩৯ বছর পূর্বে। এ দীর্ঘ সময়ে নবুয়াতি রীতি-নীতি হতে দূরে সরে গেছে মুসলিম সমাজ। নবুয়াতের ধারক-বাহক; মুসলমানদের মধ্যে আজ পশ্চিমা আদর্শ অনুসরণের প্রতিযোগীতা। সন্তানদেরকেও ওই তারবিয়াত দিচ্ছে, যা পশ্চিমাদের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে। সামান্য থেকে সামান্য সমস্যাতেই দুনিয়ার কৃত্রিম সরঞ্জামের দিকে দৌড়াচ্ছে। এ জাতি যেন ভুলেই গেছে সকল সমস্যার সমাধান আল্লাহর হাতে। ভুলে গেছে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও মানুষ ছিলেন। তিনিও নানান সমস্যার সম্মুখীন হতেন এবং সেগুলোর সমাধান আল্লাহর কাছ থেকে চেয়ে নিতেন। তিনি সেগুলো উম্মাতকে শিক্ষাও দিয়ে গেছেন। আমাদের উচিত ছিল সন্তানের তারবিয়াত এবং নিজেদের সমস্যার সমাধান নবীজির বাতলানো পদ্ধতির ভিত্তিতে করা। সন্তানদের ছোটোবেলা থেকেই ইসলামি তাহযিব-তামাদ্দুনের ওপর গড়ে তোলা। তারও আগে নিজেকে ইসলাম ও সুন্নাতের ওপর নিয়ে আসা। নিজেদের আচার-ব্যবহার মার্জিত করা। ঘরের পরিবেশ ইসলামি তাহযিবের ভিত্তিতে সাজানো। ঘরে কুরআন তিলাওয়াত, নামায পড়া, কুরআন শিক্ষা ও শিখানোর পরিবেশ তৈরি করা। নিজে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেখানো বিভিন্ন দুআ বলতে অভ্যাস করা। সন্তানদেরকে শিখানো এবং আমল করতে অভ্যস্ত করা। এসব দুআতে বড় বরকত ও কল্যাণ রয়েছে। ছোটবেলা থেকেই যদি বাচ্চাদের এসব দুআ মুখস্থ হয়ে যায়, তাহলে বড় হয়েও ইনশাআল্লাহ এর ওপর অটল থাকবে। আর এগুলো মাতা-পিতার জন্য সদকায়ে জারিয়ায় পরিণত হবে। এই মহান উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়েই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একই বিষয়ে অর্থবোধক, সুন্দর ও কল্যাণকর বিভিন্ন দুআ বর্ণিত হয়েছে। সেগুলো নিয়ে উলামায়ে কেরাম বিভিন্ন কিতাব লিখেছেন। আমরা সেগুলো থেকে খুঁজে খুঁজে অধিক প্রয়োজনীয়, সহজ এবং বহুল ব্যবহৃত দুআগুলো অর্থ ও দলিলসহ একত্রিত করেছি। চিকিৎসা ও সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রেও বুযুর্গানে দীন থেকে বহু পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে। আমরা সেগুলো থেকে পরীক্ষিত ও তুলনামূলক সহজ পদ্ধতিগুলো একত্রিত করেছি। গ্রন্থটির প্রথম অধ্যায়ে দৈনন্দিন আমল, অযিফা, মাসনুন দুআ ও ফযিলতসমূহ একত্রিত করেছি এবং দ্বিতীয় অধ্যায়ে কুরআন হাদিসে বর্ণিত পরীক্ষিত চিকিৎসা ও সমস্যার সমাধানগুলো একত্রিত করেছি। আল্লাহর মেহেরবানীতে মুসলিম পরিবারগুলো যদি সকল ক্ষেত্রে নবীজির আদর্শ অনুকরণ করতে শুরু করে, তাহলে ইনশাআল্লাহ অবশ্যই অবশ্যই মুসলমানদের ব্যক্তি, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে শান্তি ফিরে আসবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের চেষ্টা কবুল করুন এবং মনের বাসনা পূরণ করুন। আমিন।