ফ্ল্যাপে লিখা কথা সত্যের স্বরূপ কী? মানব জীবনের এর প্রয়োজনই বা-কী? এক জীবনে সত্যকে না জানলে জীবন কি অপূর্ণ থেকে যায়? হ্যা, থেকে যায়। মানুষের বৈশিষ্ট্য এখানে যে, সে সত্যানুসন্ধানী। পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ সত্য বুঝে না। বোঝার দরকারও নেই তাদের । কিন্তু মানুষের দরকার আছে। সত্য-মিথ্যার ফারাক না বুঝলে মানুষ ও পশুর মধ্যে বিশেষ কোনো তফাৎ থাকে না। পশুও খায়, নিদ্রা যায়; মানুষও তাই করে। পশু থেকে মানুষকে পৃথক করা যায় এই একটি মাত্র গুণেই-সত্যের অনুসন্ধান।
গুহাবাসী থেকে ক্রম বিবর্তনে প্রাসাদবাসী, অসভ্য থেকে ধীরে ধীরে মানুষ সভ্য হয়ে ওঠা সত্যকে জানার আকুতির মাধ্যমেই । কিন্তু সত্য কঠিন। এ কনের উপর মানুষ প্রতিনিয়ত সহজে চালিত হতে পারে না। সত্য-স্খলন ঘটে মানুষের। তবু স্খলনের পঙ্কিলতা থেকে মানুষ গা ঝাড়া দিয়ে উঠে সত্যের পানে ছুটে।
সত্যমুখীন হয়ে থাকা তথা সত্যানুসন্ধানের উপরই নির্ভর করছে ধ্বংসোন্মত্ত এই মহাবিশ্বে মানুষের টিকে থাকা। ‘সত্য যে কঠিন’ কঠিনরে ভালোবাসিলাম’- এ সাধনাই ছিল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সারা জীবনের সাধনা। শুধু তিনি নন, পৃথিবীর তাবৎ মুনী-ঋষী-নবী-পয়গম্বর এ সত্যেরই সন্ধান করছেন। মানুষকে তারা আহ্বান করেছেন প্রকৃত সত্যের দিকে।
দেশের অন্যতম মননশীল লেখক যতীন সরকার। যেটিকে সত্য বলে মনে করেছেন, সারাজীবন তাতেই থিতু হয়ে থেকেছেন। এ ব্যাপারে আপোসহীন তিনি। সত্য যে কঠিন বইটিতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সত্য আবিষ্কারে সচেষ্ট হয়েছেন। অকাট্য যুক্তির মাধ্যমে বিশ্লেষণ করেছেন গ্রন্থভূক্ত প্রবন্ধের বিষয়গুলোকে। কেবল যুক্তি নয়, ইতিহাস-দর্শন-রাজনীতি-অর্থনীতি ও বিজ্ঞানের চেতনায় সমৃদ্ধ তাঁর এসব প্রবন্ধ। তাঁর বক্তব্য খানিকটা বিস্বাদ, কিন্তু সত্যের উপর স্থিত। সত্য সবসময় বিস্বাদই হয়ে থাকে। এ কথা নিঃসন্দেহে বলা চলে যে, সত্য-সচেতন অনুসন্ধিৎসু পাঠকের ভাবনার ক্ষেত্র প্রসারিত হবে এ গ্রন্থ পাঠে।
সূচিপত্র বৈশ্বিক সত্য * ‘সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম’ * ইতিহাসের দর্শন ও বৈজ্ঞানিক প্রত্যয় * নভেম্বর বিপ্লব বিষয়ে আজকের ভাবনা * চীন ও কিউবা বিপ্লবের প্রতি দৃষ্টিপাত : সতর্ক ও সক্রিয় আশাবাদ * সাচ্চা কম্যুনিস্ট : জ্ঞানযোগী ও কর্মযোগী * সাম্রাজ্যবাদ ও মৌলবাদ তথা শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
দৈশিক সত্য * ‘ইতিহাস অনেক প্রকাশ বদমাইশি করিয়া থাকে’ * বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ : মধ্যবিত্তের আত্মসমালোচনা * আমার দেশ আমার হবে কবে? * বাংলাদেশের সমাজ : স্বপ্নে ও বাস্তবে * বঙ্গবন্ধু -কথিত চাটার দল এবং রাজনৈতিক সংষ্কৃতি * রাষ্ট্রীয় মালিকানার মূল দলিলটি ফেরত চাই সংযোজন * যতীন সরকারের সঙ্গে আলাপচারিতা
Jatin Sarker জন্ম : নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার চন্দপাড়া গ্রামে ২ ভাদ্র ১৩৪৩, ১৮ আগস্ট ১৯৩৬ । দীর্ঘ চার দশক ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অধ্যাপনা করেন। উল্লেখযোগ্য গ্ৰন্থ : সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা, বাংলাদেশের কবিগান, বাঙালীর সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সংগ্রাম, মানবমন মানবধর্ম ও সমাজবিপ্লব, গল্পে গল্পে ব্যাকরণ, দ্বিজাতিতত্ত্ব নিয়তিবাদ ও বিজ্ঞানচেতনা, সংস্কৃতি ও বুদ্ধিজীবী সমাচার, আমাদের চিন্তাচৰ্চার দিক-দিগন্ত, ধৰ্মতন্ত্রী মৌলবাদের ভূত ভবিষ্যৎ ভাষা সংস্কৃতি উৎসব নিয়ে ভাবনা চিন্তা, প্রাকৃতজনের জীবনদর্শন, সত্য যে আমার যেটুকু সাধ্য । সম্পাদিত গ্ৰন্থ : সোনার তরী, প্রসঙ্গ : মৌলবাদ, জালালীগীতিকা সমগ্ৰ । বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাবেক সভাপতি এবং ত্রৈমাসিক সমাজ অর্থনীতি ও রাষ্ট্র পত্রিকার সম্পাদক । মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অনবদ্য আত্মজীবনী পাকিস্তানের জন্ম মৃত্যু-দৰ্শন ‘প্রথম আলো বর্ষসেরা বই-এর পুরস্কারে সম্মানিত। সর্বোচ্চ রাষ্ট্ৰীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন।