"সন্ধিক্ষণ" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা বিশ্ব ইতিহাসে ফরাসী বিপ্লব একটি যুগান্তকারী ঘটনা। ১৯৮৯ সালে ফরাসী বিপ্লবের দুশাে বছর স্মারক-উৎসব। ইতিহাসের কী নির্মম পরিহাস। এতগুলাে সাল থাকতে সেই বিশেষ। বছরেই ঘটে গেল একটির-পর-একটি নাটকীয় ঘটনা। বিশেষত, পূর্ব ইয়ােরােপের রঙ্গমঞ্চে জনগণের বিক্ষোভে পতন হল একের-পর-এক বিপ্লবী জমানার। শুধু পূর্ব ইউরােপের এই বিশেষ সঙ্কটময় মুহূর্তের প্রসঙ্গেই নয়, বর্ষীয়ান ও বিদগ্ধ কথাসাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায়ের এই বিশিষ্ট প্রবন্ধ-সংগ্রহে, আরও বহু বিষয়ে একগুচ্ছ রাজনৈতিক প্রবন্ধ। আরও বহু ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ নিয়ে অগ্রণী চিন্তানায়কের অসামান্য কিছু সময়-ভাষ্য । একদিকে যখন দুই জার্মানি এক হতে যাচ্ছে, আরেকদিকে তখন এক সােভিয়েত কম্যুনিস্ট পার্টি বহু হতে চলেছে। একদিকে অশান্ত পাঞ্জাব ও অনির্দিষ্ট-ভবিষ্যৎ কাশ্মীর, অন্যদিকে চীনের ছাত্রবিক্ষোভ ও শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় শান্তিসেনা। একদিকে কেন্দ্রের পালাবদল, অন্যদিকে ধর্মীয় দলগুলির শক্তিবৃদ্ধি। কখনও দুই জার্মানির একীকরণ, কখনও দুই বাংলার একীকরণের সম্ভাবনা বিচার । কখনও মৌলবাদ, কখনও সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে ভাবনা। যে-প্রসঙ্গেই কিছু বলুন-না অন্নদাশঙ্কর শুনতেই হয় তার বক্তব্য। তাঁর চিন্তা ঋজু ও যুক্তিপূর্ণ, মতামত দ্বিধাহীন ও অভিজ্ঞতাপুষ্ট । প্রসঙ্গ সাময়িক হলেও, জীবনবােধ থেকে উৎসারিত বলে প্রতিটি মতামত অমূল্য। সমসময়ের প্রেক্ষাপট-বিশ্লেষক এই গুরুত্বপূর্ণ। প্রবন্ধাবলির পাশাপাশি এ-গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আরও কিছু মূল্যবান রচনা। যুক্ত হয়েছে টুকরাে-টুকরাে স্মৃতিকথা এবং নানা-সময়ে-নেওয়া অন্নদাশঙ্করের দুটি তাৎপর্যপূর্ণ সাক্ষাৎকার । নেহরুনীতি, রবীন্দ্রনাথ ও বৌদ্ধসংস্কৃতির আলােচনার পাশাপাশি ত্রিশবর্ষপূর্তির কলকাতা নিয়ে তাঁর একাধিক আলােচনা যেমন গরীয়ান, তেমনই উল্লেখযােগ্য সংযােজন, কবিবন্ধু বিষ্ণু দে-র কথা এবং, সর্বোপরি, প্রমথ চৌধুরী ও ইন্দিরা দেবী চৌধুরানীর সঙ্গে সবুজপত্রী এই লেখকের প্রথম যােগাযােগের রম্য স্মৃতিচারণ। সূচীঃ সন্ধিক্ষণ ১১ অশান্ত পঞ্জাব ১৭ কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ ২১ সত্যের মুহূর্ত ২৭ চীন প্রসঙ্গে ৩২ শান্তিসেনার প্রত্যাবর্তন ৩৬ পূর্ব লক্ষণ ৩৯ পালাবদল ৪৩ পূর্ব ইউরোপের সঙ্কট ৪৬ দুই জার্মানি ও দুই বাংলা ৫১ বাংলা যখন এক ছিল ৫৬ বাঙলা ও বাঙালি ৬৩ বাঙালি কি এক জাতি না দুই জাতি ৬৬ পাঠান, অথচ হিন্দু ৭০ মৌলবাদ প্রসঙ্গে ৭৪ কালাপাহাড় বনাম ধলাপাহাড় ৮০ সাম্প্রদায়িকতা : পুনভাবনা ৮৩ ঈদ মোবারক ৮৫ মুর্শিদাবাদ :স্মৃতিচারণ ৮৭ আজাদ ও আজাদী ৮৯ নেহরু নীতি ৯১ বিদেশ থেকে ফিরে ৯৫ মেনি হ্যাপি রিটার্নস ৯৮ কলকাতা : ত্রিশতকপূর্তি ১০১ কলকাতা : অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ ১০৫ প্রমথ চৌধুরি ও ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী ১১০ কবি বন্ধু বিষ্ণু দে ১১৭ রবীন্দ্রনাথ ও বৌদ্ধ সংস্কৃতি ১২০ জবানবন্দী ১২৪ জীবন জিজ্ঞাসা ১২৮
(মার্চ ১৫, ১৯০৪ - অক্টোবর ২৮, ২০০২), একজন স্বনামধন্য বাঙালি কবি ও লেখক। ভারতের উড়িষ্যা জেলার তার জন্ম। তিনি একজন বিখ্যাত ছড়াকারও। অন্নদাশঙ্করের জন্ম হয় ব্রিটিশ ভারতে বর্তমান উড়িষ্যার ঢেঙ্কানলে । তাঁর পিতা ছিলেন ঢেঙ্কানল রাজস্টেটের কর্মী নিমাইচরণ রায় এবং তাঁর মাতা ছিলেন কটকের প্রসিদ্ধ পালিত বংশের কন্যা হেমনলিনী । ছোটবেলায় ঢেঙ্কানলে তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় । ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন । এরপর সংবাদপত্রের সম্পাদনা শিখতে কলকাতা বসুমতী পত্রিকার সম্পাদক হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষের কাছে যান । তিনি শর্টহ্যান্ড, টাইপরাইটিং এবং প্রুফরিডিং-ও শেখেন । কিন্তু এই কাজ তাঁর ভালো লাগেনি । এরপর তিনি কটকের র্যাভেনশ কলেজ থেকে আই.এ পরীক্ষা দেন এবং তাতে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন । ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে বি.এ পরীক্ষাতেও তিনি পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম স্থানাধিকারী হন । ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে এম.এ পড়তে পড়তে আই.সি.এস পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয়বারে পূর্ববর্তী রেকর্ড ভেঙে প্রথম স্থান অধিকার করেন । তিনিই প্রথম ভারতীয় হিসেবে এ গৌরব লাভ করেন। সেই বছরেই তিনি সরকারি খরচে আই.সি.এস হতে ইংল্যান্ড যান । সেখানে তিনি দুই বছর ছিলেন । এই সময়ে তাঁর ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনী পথে প্রবাসে বিচিত্রায় প্রকাশিত হয় । ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন কন্যা অ্যালিস ভার্জিনিয়া অনফোর্ডকে বিবাহ করে তিনি তাঁর নাম দেন লীলা রায় । লীলা রায় বহু বই বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন । অন্নদাশঙ্করের অনেক লেখা লীলাময় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছিল । ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রথম নদীয়া জেলার ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে কাজে যোগ দেন । তিনি বছর এই পদে থেকে বিভিন্ন জেলায় কাজ করে কুমিল্লা জেলায় জজ হিসাবে নিযুক্ত হন । ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সরকারী কাজে নিযুক্ত থেকে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বিচার বিভাগের সেক্রেটারি হন । ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্বেচ্ছায় সরকারী চাকরি থেকে অবসর নেন । ২৮ অক্টোবর , ২০০২ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।