"বাংলার ইতিহাসের দুশো বছর: স্বাধীন সুলতানদের আমল (১৩৩৮-১৫৩৮)" বইটির ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ বিশ শতকের ষাটের দশকের সূচনায় অনেকটা ব্রত নিয়েই যেন সুখময় মুখােপাধ্যায় বেরিয়ে এলেন। তিনি সুলতানি পর্বের মুদ্রা, শিলালিপি, আরবি-ফার্সি গ্রন্থ ও সাহিত্য বিশেষণ করে ইতিহাস উন্মােচনের চেষ্টা করলেন। এরই সার্থক ফল বর্তমান গ্রন্থটি। এই গ্রন্থটি লিখতে গিয়ে তিনি ইতিহাস লিখন পদ্ধতিকেই অনেকটা পাল্টে দিলেন। যেহেতু সমকালীন কোনাে ইতিহাস গ্রন্থ নেই তাই সুলতানি পর্বের ইতিহাস লিখনে প্রত্নতাত্ত্বিক সূত্র, সমকালীন সাহিত্য এবং বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণবৃত্তান্তের ওপরই নির্ভর করতে হয়। এধরনের সূত্র ব্যবহার ততটা সহজ নয়। ফার্সি ভাষায় রচিত সমকালীন বা প্রায় সমকালীন কয়েকটি গ্রন্থ পাওয়া যায় যার অধিকাংশ দিলির সুলতানদের আমলের দরবারী ইতিহাস। সুখময় মুখােপাধ্যায় রচিত এই গ্রন্থটিতে আলােচ্য দুশাে বছর ছিল বাংলার স্বাধীন সুলতানদের শাসনপর্ব। অর্থাৎ দিলির সুলতানদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তারা স্বাধীন হয়েছেন। একারণে দিলির সুলতানদের শত্রুপক্ষ ছিল বাংলা। ফলে দিলির দরবারী ইতিহাসে বাংলা প্রসঙ্গ বিস্তারিত আলােচিত হয়নি। সঙ্গত কারণেই বাংলার সুলতানি শাসন প্রসঙ্গ এসমস্ত গ্রন্থে উদারভাবে উপস্থাপিত হতে পারেনি। বাংলার সুলতানগণ একটি কেন্দ্রীয় মুদ্রা ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। বাংলায় কমপক্ষে ষােলটি টাকশাল নগরীর প্রমাণ স্পষ্ট হয়েছে। এসব টাকশাল থেকে জারিকৃত মুদ্রায় উকীর্ণ লিপি ছিল আরবি। মসজিদ ও অন্যান্য স্থাপনার গায়ে সঁটা উলেখযােগ্য সংখ্যক শিলালিপি পাওয়া গিয়েছে। এগুলাের অধিকাংশই আরবি ক্যালিগ্রাফিতে লেখা। সামান্য পাওয়া যায় ফার্সি লিপিতে উৎকীর্ণ। একারণে পাঠোদ্ধার করে এসকল সূত্র থেকে তথ্য উদ্ধার করা সহজ নয়। সাহিত্যিক সূত্রের কথামালা রচনায় স্বাভাবিকভাবেই ইতিহাস লিখন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় না। ফলে ইতিহাস গবেষককে অভিনিবেশের সাথে সত্যের নির্যাসটুকু বের করে আনতে হয়। এসমস্ত দূরুহ কর্মের দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন সুখময় মুখােপাধ্যায়। বলা যায় প্রয়ােজনীয় সূত্র ব্যবহার ও বিশেষণ করে 'বাংলার ইতিহাসের দুশাে বছর—স্বাধীন সুলতানদের আমল’ নামের এই গ্রন্থটি প্রণয়ন করে গ্রন্থকার এই ক্ষেত্রে গুরু দায়িত্বই পালন করেছেন।
Title
বাংলার ইতিহাসের দুশো বছর: স্বাধীন সুলতানদের আমল (১৩৩৮-১৫৩৮)