একটি স্বপ্ন- বাংলাদেশও মহাকাশে থাকবে। এমন স্বপ্ন দেখেছিলেন আমাদের মহান নেতা। তিনি বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালে এই স্বপ্নের ভিত্তি রচিত হয়েছিল রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়াতে। তখন থেকেই মহাকাশে আর একটি বাংলাদেশ বিনির্মাণের যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেই যাত্রার পরিপূর্ণ রূপায়ণ হচ্ছে এখন। মহাকাশে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হতে যাছে। এই স্যাটেলাইটের নাম বঙ্গবন্ধু কমনিউকেশন স্যাটেলাইট-১। বাংলাদেশ সরকার একটি প্রকল্প নিয়েছে এই স্যাটেলাইট তৈরি করার জন্য । এটি তৈরি করেছে ফরাসি কোম্পানী থেলাস এলিনিয়া। তাদের ফ্যাক্টরী ফ্রান্সের কান শহরে কান শহরটি প্যারিস থেকে এক হাজার কিলােমিটার দূরে এবং দক্ষিণ-পূর্ব ফ্রান্সের ভূমধ্যসাগরীয় তটভূমি অঞ্চলে অবস্থিত। অবসর বিনােদনের জন্য এ শহরটি খুবই বিখ্যাত। সাগর আর ছােট ছােট পাহাড়ের সমম্বয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই শহরের আশপাশের এলাকা। নীল ও স্বচ্ছ জলের সাগরপাড়ে কান শহর পর্যটকদের টানে দারুণভাবে এই পর্যটন শহরে থেলাস কোম্পানীর ফ্যাক্টরীতে আমাদের স্যাটেলাইট তৈরি হয়। তাই স্যাটেলাইট তৈরির কাজের অগ্রগতি দেখতে গিয়েছিলাম সেখানে। যেই স্যাটেলাইট থাকবে মহাকাশে, তা ওড়ার আগে দেখতে পাওয়া এক দুর্লভ সুযােগ। তাও আবার হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতে পারা- যেন স্বপ্নের মত মনে হয়েছে। আবার শুধু আমাদের একটি নয়, অন্যান্য দেশের মিলিয়ে একসাথে তৈরি হচ্ছিল ৮১টি স্যাটেলাইট। নিজ চোখে না দেখলে এ অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির কথা বলে বােঝানাে যাবেনা। কিভাবে স্যাটেলাইট তৈরি হয়, কিভাবে তা উৎক্ষেপিত হয়, কিভাবে তা মহাশূন্যে কাজ করে, কিভাবে তা পৃথিবী হতে নিয়ন্ত্রণ করা হয়- ইত্যাদি বিষয়ে একটি সাধারণ ধারণা হয়েছে আমাদের এই সফরে ।এই অভিজ্ঞতা ছিল অভূতপূর্ব এবং অত্যন্ত আনন্দের। এই সফরের কথা মনে এলেই যেন অন্যরকম অনুভূতিতে শিহরিত হই।
জন্ম : শ্যামসুন্দর সিকদার শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার লোনসিং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম-গিরেন্দ্র মোহন সিকদার, মাতার নাম-কৃষ্ণদাসী সিকদার ৭ ভাই বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। মাটি-জল, খাল-নদী এবং শস্য-শ্যামল প্রকৃতি দেখে দেখে গ্রামীণ পরিবেশে তার কৈশোর কেটেছে। শিক্ষাজীবন : নিজগ্রাম দক্ষিণ লোনসিং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার প্রথমপাঠ শুরু। অতঃপর নড়িয়া বিহারী লাল হাই স্কুল, ফেনী মডেল হাই স্কুল এবং ফেনী কলেজে অধ্যয়ন করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যানে ১৯৮১ শিক্ষাবর্ষে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ২০০৮ সালে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে এমবিএ ডিগ্রি প্রাপ্ত হন। কর্মজীবন : ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ১৯৮৪ সালের বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৮৬ সালে প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালনসহ বিসিকের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২০১৪ সাল থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে এবং ২০১৭ সাল থেকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে যথাক্রমে সচিব ও সিনিয়র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন। সাহিত্যকর্ম : শ্যামসুন্দর সিকদার ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখিতে জড়িত ছিলেন। তিনি একজন প্রথিতযশা কবি ও সাহিত্যিক। তার প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৫০। তন্মধ্যে কাব্যগ্রন্থ, প্রবন্ধ, গল্প, ভ্রমণ কাহিনী, ছড়া, শিক্ষামূলক গ্রন্থ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস এবং গবেষণামূলক গ্রন্থ। সাহিত্য ও গবেষণা কর্মের জন্য বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। তিনি এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের গর্বিত জনক।