ফ্ল্যাপে লিখা কথা এ গ্রন্থ মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার অনতিপরে রচিত এবং ১৯৭২ সালের জুন মাসে প্রথম প্রকাশিত। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে স্বায়ত্তশাসন ও স্বতন্ত্র জাতীয় সংস্কৃতির স্বীকৃতির জন্য আমাদের নিরন্তর সংগ্রামের স্মৃতি তখনও জীবন্ত। এতে আছে আমাদের জাতীয় জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেই ঐতিহাসিক কালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলির বিশ্বস্ত বিবরণ। সংগ্রামোদ্বেল ঘটনাপ্রবাহের বর্ণনার মর্মে ইতিহাসের গতিনির্ধারণে বঙ্গবন্ধু, ভাসাণী ও শেরে বাংলা নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য ও অবদান উজ্বলরূপে প্রতিভাত। আবুল কাসেম ফজলুল হক অনেক ঘটনাই নিজে প্রত্যক্ষ করেছেন। তা-ছাড়া আছে তাঁর অধ্যয়ন অনুসন্ধান মূল্যবোধ ও বিচার-বিবেচনা। আমাদের সেকালের আবেগ ও উত্তেজনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তাঁর উচ্চতর নৈতিক চেতনা, বিচারক্ষমতা ও পরিমিতিবোধ। আমাদের সংগ্রামের উত্তুঙ্গ মুহূর্তের উত্তাপ, জাতিরাষ্ট্র স্বপ্ন, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের কল্পস্বর্গ, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মার্চের সর্বাত্মক জাতীয় অভ্যুত্থান, ঢাকা শহরে ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাক-বাহিনীর সর্বব্যাপ্ত সামরিক আক্রমণ ও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সূচনা ইত্যাদির উজ্জ্বল বিবরণ বিধৃত আছে এ গ্রন্থে। নেতাদের ও লেখকদের ভাষণ ও বিবৃতি আর সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের প্রাসঙ্গিক উদ্ধৃতি বর্ণনাকে করে তুলেছে চিত্ররূপময়। আমাদের মৃক্তিসংগ্রাম ও উত্তরকালের ঘটনাবলির কারণ-কার্য-করণীয় সূত্র অনুধাবন ও সাফল্যের প্রকৃতি উপলব্ধির জন্য এ-গ্রন্থ পাঠকের বিশ্বস্ত বন্ধু।
সূচিপত্র * পূর্ববাংলার পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তি ও স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অন্তঃস্থিত সম্ভাবনা * পাকিস্তানকে দীর্ঘায়ু করার বিকৃত প্রচেষ্টা ও তার প্রতিক্রিয়া * অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে পূর্ববাংলার উপর ঔপনিবেশিক শোষণ ও নিপীড়ন * রাজনীতিক্ষেত্রে যে-কোনো নতুন শক্তির উত্থানকে ঠেকাবার জন্য চরম নির্যাতন ও বীভৎস স্বৈরাচার : গণআন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থান * আইয়ুবের আশীর্বাদ নিয়ে ইয়াহিয়ার ক্ষমতায় আগমন : শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য ‘বন্ধুবন্ধু’-র প্রচেষ্টা * ‘স্মরণকালে বৃহত্তম প্রাকৃতিক দুর্যোগে’-র করলে পূর্ববাংলা : দুর্গত মানুষদের প্রতি পাকিস্তান সরকারের চরম শৈথিল্যের প্রতিবাদে পূর্বপাকিস্তানকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রত্যক্ষ আন্দোলন * নির্বাচন ও নির্বাচনোত্তর ষড়যন্ত্র * প্রবল জনমতের চাপে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া কর্তৃক জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান: ষড়যন্ত্রের নতুন অধ্যায় * ইয়াহিয়া কর্তৃক জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা : ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’ * পঁচিশে মার্চের হত্যাকাণ্ড ও প্রতিরোধ যুদ্ধের সূচনা * বাঙালি জাথীয়তাবাদের বিকাশে কয়েকজন ব্যক্তি ও কিছু ঘটনা
Abul Kashem Fozlul Haque আবুল কাসেম ফজলুল হক ময়মনসিংহ জিলা স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষা লাভ করেন। তাঁর গোটা পেশাজীবন কাটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে গবেষণা ও শিক্ষকতায়। ২০১১ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। ছাত্রজীবনে তিনি কবিতা, ছোটগল্প ও প্রবন্ধ লিখেছেন এবং পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ করেছেন। তখন তাঁর লেখার বিষয়বস্তু ছিল সৌন্দর্য, প্রেম, প্রকৃতি ও জীবনদর্শনের অনুসন্ধিৎসা। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সময় তাঁর মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালে তিনি ১৯৬০-এর দশকে ছাত্র-আন্দোলনের প্রগতিশীল ধারায় সক্রিয় ছিলেন। সংস্কৃতি সংসদ, সুকান্ত একাডেমি, উন্মেষ, বাংলাদেশ লেখক শিবির, স্বদেশ চিন্তা সঙ্ঘ প্রভৃতি সংগঠনে থেকে তিনি বাংলাদেশের প্রগতিশীল চিন্তা ও কর্মে সক্রিয় ছিলেন এবং সর্বজনীন কল্যাণ ও প্রগতিশীল নতুন ভবিষ্যতের আশায় ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে লিখে চলছেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি ঢাকা শহরে থেকে পরিচিত ও স্বল্পপরিচিত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধানত অর্থ সংগ্রহ করে দিয়ে ও আশ্রয় দিয়ে সহায়তা করেছেন। আবুল কাসেম ফজলুল হক ১৯৬০-এর দশক থেকে নতুন রেনেসাঁস আকাক্সক্ষা করেন। তিনি মনে করেন ভালো কিছু করতে হলে হুজুগ নয়, দরকার গণজাগরণ। সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস ইত্যাদি সকল বিষয়ে তাঁর লেখায় প্রগতির তাড়না কাজ করে।