"বাংলায় বিসমিল্লাহ” বই সম্পর্কে দুটি কথা: আল্লাহ তা'আলার বে-ইনতিহা শো্কর, তাঁরই অপার অনুগ্রহে আমার জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ ‘বাংলায় বিসমিল্লাহ’ জাতির ‘পুষ্পকলি’দের হাতে অর্পণ করার সৌভাগ্য হলো।' জগতের কোন কাজ কারীমের করম এবং রাহীমের রহম’ ছাড়া সম্পন্ন হয় না, হতে পারে না; এ শাশ্বত সত্য বহুবারের মত এবারও আমার জীবনে সমুদ্ভাসিত হলো কীভাবে? আমার কলমের এ ছোট্ট কর্মটি সম্পন্ন হয়েছে আজ থেকে প্রায় ত্রিশবছর আগে, যখন আমার বয়স ত্রিশের নীচে । আমি তখন নূরিয়ার শিক্ষক এবং আমার প্রিয় হযরত হাফেজ্জী হুযুর রহ, তখনো যিন্দেগির কাফেলায় আলোর মশাল হাতে রাহবাররূপে বিদ্যমান। একান্তে এবং মজলিসে অনেকবার তিনি আমাকে বলেছেন, বিশেষ করে হজ্বের সফরে- নূরানী প্রাইমারি মক্তব’-এর নেছাব তাড়াতাড়ি তৈয়ার করো । অন্তহীন মর্মজ্বালা নিয়ে মাঝেমধ্যেই তিনি বলতেন, কাউমের মগজগুলা দুশমন দখল কইরা নিতেছে । এগুলাকে হেফাযত করার এইটাই একমাত্র উপায়। আসলে তিনি বলতে চেয়েছেন অন্তত প্রাথমিক স্তরে দ্বীনী শিক্ষা ও জাগতিক শিক্ষার দুর্ভাগ্যজনক বিভাজন থেকে জাতিকে উদ্ধার করার সুচিন্তিত ও সুপ্রাজ্ঞ প্রয়াস-প্রচেষ্টা গ্রহণের কথা, যা বলতে যত সহজ, কার্যত ততই জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। তো তাঁর আদেশ পালনের প্রথম উদ্যোগরূপেই লেখা হয়েছিলো বাংলায় বিসমিল্লাহ'। খসড়া পাণডুলিপিটি যখন তার হাতে তুলে দিলাম, তিনি এত খুশী হলেন এবং এত দো'আ দিলেন যে, ভাবলে এখনো হৃদয়ের গভীরে পরম প্রশান্তি অনুভব করি। ‘বিসমিল্লাহ’ নামটি তাঁর খুবই পছন্দ হয়েছিলো এবং তিনি নেছাবের বাকি কাজ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সম্পাদন করার আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু .. কিসমতে ছিলো না, হলো না; তাঁর জীবদ্দশায়ও না, পরেও না । এমনকি উপায়-উপকরণ বিদ্যমান থাকার পরো এ ছোট্ট বইটি সুদীর্ঘ তিন দশকেও কালো হরফের মাধ্যমে আলোর মুখ দেখতে পায়নি; অথচ এরমধ্যে কত কিছু লেখা হলো, কত কিছু ছাপা হলো এবং মাদরাসাতুল মাদীনাহ ও মাদানী নেছাব কত দূর পথ অতিক্রম করলো এটাই হলো কুদরতের কারিশমা, যার ইশারা ছাড়া গাছের একটা পাতাও নড়ে না এবং পড়ে না! সুতরাং তোমার শোকর হে আল্লাহ! শিশুজীবনে প্রাথমিক শিক্ষা, বিশেষত হরফপরিচয় - হোক তা আরবি বা বাংলা -কত যে নাযুক ও সংবেদনশীল বিষয় তা যে কোন চিন্তাশীল ব্যক্তি বুঝতে পারেন । সুতরাং এখানে সে আলোচনার প্রয়োজন নেই। শুধু বলবো, এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মৌলিক ও সৃজনশীল কাজ যে কারণেই হোক কমই হয়েছে।