দুনিয়া, ক্ষণিকের সফর…। এর থেকে বিদায় অনিবার্য; তবুও এর জন্য মানুষের কত কী আয়োজন ! চাহিদার শেষ নেই, ইতি নেই স্বপ্নের । নিজের ঝোলা ভর্তির জন্য মানুষের কত যে ঘাম ঝরছে ! কেউ ঝরাচ্ছে রক্ত ! সবাই তো এ কথা বিশ্বাস করে, প্রত্যেকেই আস্বাদন করবে মৃত্যুর স্বাদ । সবকিছু ছেড়েই যেতে হবে ওপারে । তবুও মানুষ ব্যস্ত এপারের ভোগবিলাসের উপায়-উপকরণ নিয়ে । ওপারের পাথেয় জোগাড়ের সময় কই !
হে দুনিয়ার মোহে আচ্ছন্ন মানুষ ! এবার একটু ক্ষান্ত হও । তোমার দুনিয়ার পুঁজি তো দিনদিনই সমৃদ্ধ হচ্ছে । কিন্তু পরকালের পুঁজির খবর কী ? তা কি বরাবরই উপেক্ষিত থাকবে !আর কত সময় নষ্ট আমরা করবো পার্থিব ভোগবিলাসের পেছনে ? তবে কখন তোমার সময় হবে পরকালের প্রস্তুতি গ্রহণের ? সৌভাগ্যবান ও তাওফীকপ্রাপ্ত বান্দা তো তারাই, যারা জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগিয়ে পরকালের জন্য পাথেয় সংগ্রহ করে । পিঁপড়া যেমন শীতকালের দুর্ভোগ থেকে বাঁচার জন্য গ্রীষ্মকালেই খাবার ও পাথেয় সংগ্রহ করে রাখে । মুমিন বান্দাও ঠিক তেমনি পরকালের কঠিন দুর্ভোগ থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে দুনিয়াতে থাকতেই আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদতের মাধ্যমে নেক আমল সংগ্রহ করে । আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন- بَلْ تُؤْثِرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا – وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَىٰ “বস্তুত তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দাও, অথচ পরকালের জীবন উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী ।” (সূরা আ’লা: ১৬-১৭)
পরকালের প্রস্তুতির গুরুত্ব, পদ্ধতি সহও ইত্যাদি উপদেশ মালায় সাজানো বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটি ।
শাইখ আবু যাইদ খালিদ বিন আব্দুর রহমান আল-হুসাইনান আল-কুয়েতী রহ.। আরব বিশ্বের প্রখ্যাত এ দাঈ সবার কাছে খালিদ আল-হুসাইনান নামেই সমধিক পরিচিত। অত্যন্ত বিনয়ী এ আলেমে দ্বীন তাঁর কথার মাধুর্যতায় যে কোনো শ্রোতারই মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটাতে পারতেন। জন্ম কুয়েতেই। লেখাপড়া করেছেন সৌদি আরবের বিখ্যাত বিদ্যাপীঠ ‘ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সাউদ ইসলামিক ইউনিভার্সিটি’তে; শরীয়াহ আইনে। জীবনের সোনালি সময়গুলো ব্যয় করেন কুয়েতের ‘সাআদ আব্দুল্লাহ সামরিক একাডেমী’র সরকারি মাসজিদের ইমাম ও খতীব হিসেবে। দাওয়াত ও জিহাদের হৃদয়ছোঁয়া বয়ানে রীতিমতো ঝড় তুলতেন কুয়েতের ইসলামপ্রিয় নিরাপত্তা বাহিনীর দেহমনে। সামরিক মহলে তাঁর জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলছিল দেখে তাঁর ইসলামি চিন্তাধারার প্রভাব থেকে সেনাবাহিনীকে মুক্ত রাখতে এক সময় সরকার তাঁকে সরিয়ে দেয় সেখান থেকে। পাঠিয়ে দেয় কুয়েতের কোনো এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের মাসজিদুল আলবানীতে; ইমাম হিসেবে। এতেই তিনি দমে যাননি। চালিয়ে গেছেন তাঁর দাওয়াতি কার্যক্রম। কুয়েতের রেডিওতে আলোচনা করেছেন নিয়মিত। যুক্ত ছিলেন দ্বীনের প্রকৃত অনুসারীগণের সাথেও। দাওয়াতের বন্ধুর পথে নিরলস কাজ করে যাওয়া এ মহান মানুষটি সারা পৃথিবীর দাঈদের জন্য এক অনুপম আদর্শ হয়ে থাকবেন। পরে তিনি খোরাসানে হিজরত করেন এবং জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আল্লাহর পথে জীবনবাজি রেখে দাওয়াত ও জিহাদের কাজ করে যান। ২০১২ সালে তিনি জীবনের অন্তিম অভিলাষ- শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন। তাঁর রচনাবলির মধ্যে ‘দৈনন্দিন সহস্রাধিক সুন্নাত’ বইটি বিশ্বজুড়ে সমাদৃত; যা বাংলা ভাষায়ও অনূদিত হয়েছে। ‘দৈনন্দিন সসহস্রাধিক আহ্বান’, ‘নারীবিষয়ক সহস্রাধিক প্রশ্নের জবাব’, ‘যেমন ছিলেন তাঁরা...’ ‘আলোকিত জীবনের প্রত্যাশায়..., ‘কীভাবে আলেমগণ এগিয়ে যাবেন’ও তাঁর অন্যতম রচনা। এছাড়া তাঁর বেশ কিছু অডিও লেকচারও রয়েছে। তাঁর রেখে যাওয়া এসব উত্তরাধিকার ইসলামপ্রিয় পাঠকদের মনে যথেষ্ট খোরাক যোগাবে আশা করি। মহান আল্লাহ লেখকের দ্বীনি সব খেদমতকে কবুল করুন এবং তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউসের উঁচু মর্যাদা দান করুন। আমীন।