গণতান্ত্রিক শাসন কায়েম আমাদের সাংবিধানিক অঙ্গীকার। নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শাসনের সূচনা হয়। কিন্তু নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জনগণের ভোটের মাধ্যমে প্রাপ্ত ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারেন। তাই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ক্ষমতার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা আবশ্যক। আধুনিক রাষ্ট্রে একটি যথার্থ আইনি কাঠামো ও কতগুলো প্রতিষ্ঠান সৃষ্টির মাধ্যমে তা করা হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হতে পারে রাষ্ট্রীয় ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বাইরের (non-state)। রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম ও সংগঠিত নাগরিক সমাজ রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বাইরের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। আইনসভা, বিচার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, নির্বাচন কমিশন, মহা হিসাব নিরীক্ষক, সরকারি কর্মকমিশন, ন্যায়পাল ইত্যাদি সাংবিধানিক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন ইত্যাদির মতো সংবিধিবদ্ধ সংস্থাই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের উত্তরণ ঘটলেও, যথার্থ আইনি কাঠামোর অভাবে এবং এ সকল প্রতিষ্ঠান কার্যকর না হলে, গণতন্ত্রের ভিত সুদৃঢ় হয় না এবং তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে না। আর সত্যিকারের গণতান্ত্রিক শাসন কায়েম, গণতান্ত্রিক দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠিত এবং একটি বলিষ্ঠ বিকেন্দ্রীকরণ কর্মসূচির আওতায় স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী হলেই, ক্ষুধা-দারিদ্র্যের মতো জটিল সমস্যার সমাধান সম্ভব। তবে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে আরও প্রয়োজন আমাদের প্রচলিত উন্নয়ন কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন, যাতে জনগণের শক্তি ও সামর্থের বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্রীয় সকল সম্পদ ও সুযোগে তাদের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তাদের প্রতি সকল বৈষম্য ও বঞ্চনার অবসান ঘটে। আর এ সকল পরিবর্তনের জন্য আবশ্যক একটি বলিষ্ঠ সংস্কার কর্মসূচিএবং 'লোকাল ডেমোক্রেসি' বা স্থানীয় গণতান্ত্রিক কাঠামোভিত্তিক ও নারীদের প্রতি অগ্রাধিকারমূলক একটি গণকেন্দ্রীক উন্নয়ন কৌশল। এ ধারণাগুলোই বর্তমান গ্রন্থের বিষয়বস্তু।
Title
গণতান্ত্রিক উত্তরণ, স্থানীয় শাসন ও দারিদ্র্য দূরীকরণ
ড. বদিউল আলম মজুমদার একজন অর্থনীতিবিদ, স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ এবং একজন উন্নয়নকর্মী । বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের বর্তমান পর্যায়ে ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট'-এর গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর। এছাড়া তিনি নাগরিক সংগঠন 'সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত ও অর্থবহ করার লক্ষ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছেন। একইসঙ্গে তিনি জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভােকেসি ফোরাম’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ড. বদিউল আলম মজুমদার ১৯৪৬ সালে কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত থেকে তিনি ৬২'র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬'র ছয় দফা ও ঊনসত্তরের গণআন্দোলনে অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। ১৯৬৯-৭০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে স্কলারশিপ নিয়ে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন। ড. বদিউল আলম মজুমদার 'ক্ল্যারমন্ট গ্র্যাজুয়েট স্কুল থেকে মাস্টার্স এবং কেইস। ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটোল ইউনিভার্সিটি, সেন্ট্রাল ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি ও ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করেন । এছাড়া তিনি মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা'-তেও দায়িত্ব পালন করেন । ১৯৯১ সালে ড. বদিউল আলম মজুমদার দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে তিনি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং ক্ষুধামুক্ত, আত্মনির্ভরশীল। বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট’ ও ‘সুজন’-এর সাথে যুক্ত থেকে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। বদিউল আলম মজুমদার বাংলাদেশের বহুল পরিচিত একটি নাম । তিনি জাতীয় দৈনিকগুলােতে নিয়মিত কলাম লিখে থাকেন, টেলিভিশন টক শাে’-তে রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন এবং সম-সাময়িক বিষয়ে গণমাধ্যমে মতামত প্রকাশ। করেন। ইতিমধ্যে ড. বদিউল আলম মজুমদারের নয়টি গ্রন্থ এবং তাঁর সম্পাদনায় আরও চারটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে ।