‘আমাদের পাইলটস্যার এবং ভুতুড়ে ক্লাব’ বইটিতে লেখা ফ্ল্যাপের কথা: অদ্ভুত চরিত্রের মানুষ পাইলটস্যার। বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে তার তুলনাই হয় না। উদাহরণ দিয়ে যুক্তির পর যুক্তি সাজিয়ে ক্লাসের পড়া বুঝিয়ে বলেন। সব কিছুর মধ্যে যুক্তি খুঁজে বের করাটা তার স্বভাব। সুযোগ পেলেই সবাইকে যুক্তিবাদী হবার পরামর্শ দেন। তার শিক্ষার মূল কথাই হচ্ছে-প্রশ্ন করো, উত্তর খোঁজো, নইলে তুমি মানুষ কিসে! প্রবল ভূত-বিরোধী এই মানুষটিও কখনো কখনো বলে ওঠেন-যতসব ভূতুড়ে কাণ্ড! প্রিয় ছাত্রেরা চেপে ধরে, ভূত না থাকলে ভুতুড়ে কাণ্ড হয় কেমন করে যুক্তির আলো ফেলে তারা যত সব ভূতুড়ে কেচ্ছা আর কাণ্ডকীর্তি বিশ্লেষণ করতে বসে। রহস্যঘেরা পরিত্যক্ত জমিদার মহলের নির্জনতায় গড়ে ওঠে তাদের ভুতুড়ে ক্লাব। সেই ক্লাবের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে অত্যাচারী নীলকর টমসনের কুকীর্তি, ভৌতিক প্রতিশোধের মুখে নির্মম। পাকিস্তানি সৈনিকদের পরাস্ত হবার কাহিনী, জানা যায় পঁচাত্তরের পর থেকে টিচার্স রুমে দেয়ালঘড়িতে বার্ষিক এক মিনিট লেট হবার রোমাঞ্চকর ঘটনা। শুরুতে পাইলটস্যারকে এড়াতে চাইলেও ভুতুড়ে ক্লাবের প্রথম মিটিংয়ের সময় প্রিয় ছাত্রদের মাঝে তার আকস্মিক এবং রহস্যময় উপস্থিতি সবাইকে চমকে দেয়। সেই চমক থেকেই গড়ে ওঠে রফিকুর রশীদের অনন্যসাধারণ কিশোর উপন্যাস ‘আমাদের পাইলটস্যার এবং ভুতুড়ে ক্লাব।
শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম, মধ্যবিত্ত সমাজের কৃত্রিমতা, নিয়তিবাদ ইত্যাদি বিষয়কে লেখার মধ্যে তুলে এনে বাংলা সাহিত্যে যিনি অমর হয়েছেন, তিনি হলেন প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। খ্যাতিমান এই সাহিত্যিক ১৯০৮ সালের ১৯ মে বিহারের সাঁওতাল পরগনায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, আর মানিক ছিলো তাঁর ডাকনাম। বাবার বদলির চাকরিসূত্রে তাঁর শৈশব, কৈশোর ও ছাত্রজীবন কেটেছে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে, যার ফলে বিভিন্ন অঞ্চলের পটভূমিতে বিভিন্ন সাহিত্য রচনা করেছেন তিনি। প্রবেশিকা ও আইএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় গণিত বিষয়ে অনার্স করতে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। এখানে পড়াশোনাকালে বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে তিনি 'অতসী মামী' গল্পটি লেখেন। সেই গল্পটি বিখ্যাত 'বিচিত্রা' পত্রিকায় ছাপানো হলে তা পাঠকনন্দিত হয় এবং তিনি সাহিত্যাঙ্গনে পরিচিত হয়ে ওঠেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি সাহিত্য রচনায় পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন, যার ফলে তাঁর পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এবং তিনি আর পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। তাঁর হাতে বাংলা সাহিত্যে এক বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয় ঐ সময়ে, যখন সারা পৃথিবী জুড়ে মানবিক বিপর্যয়ের এক চরম সংকটময় মুহূর্ত চলছে। কমিউনিজমের দিকে ঝুঁকে যাওয়ায় তাঁর লেখায় একসময় এর ছাপ পড়ে এবং মার্ক্সীয় শ্রেণীসংগ্রাম তত্ত্ব দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই সমগ্র। ফ্রয়েডীয় মনোসমীক্ষণেরও প্রভাব লক্ষ্য করা যায় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র-তে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই সমূহ এর মধ্যে 'পদ্মানদীর মাঝি', 'দিবারাত্রির কাব্য', 'পুতুলনাচের ইতিকথা', 'শহরতলি', 'চতুষ্কোণ', 'শহরবাসের ইতিকথা' ইত্যাদি বিখ্যাত উপন্যাস, এবং 'আত্মহত্যার অধিকার', 'হারানের নাতজামাই', 'বৌ', 'প্রাগৈতিহাসিক', 'সমুদ্রের স্বাদ', 'আজ কাল পরশুর গল্প' ইত্যাদি গল্পগ্রন্থ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা রচনার কিছু নিদর্শন থাকলেও সেগুলো তেমন উল্লেখযোগ্যতা অর্জন করেনি। অসামান্য এই কথাসাহিত্যিক মাত্র ৪৮ বছর বয়সে ১৯৫৬ সালের ৩ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।