"দ্য গ্রেট ট্রেন রবারি" বইটির 'মুখবন্ধ' থেকে নেয়াঃ আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিল এডওয়ার্ড পিয়ার্স। সে ছিল অপরাধ জগতের মুকুটহীন সম্রাট। ফলে সে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছিল। তার কার্যক্রম এমন একটা স্তরে পৌছেছিল যে, স্বয়ং মহারানী ভিক্টোরিয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। কথাবার্তায়, চালচলনে, পােশাকে পিয়ার্স ছিল পুরােদস্তুর ভদ্রলােক। দেখলেই মনে হয় যথেষ্ট আভিজাত্যসম্পন্ন। ১৮৫৪ সাল। যুদ্ধ চলছে ক্রিমেনে। যুদ্ধের খরচ বাবদ প্রতিমাসে লন্ডন থেকে স্বর্ণ পাঠানাে হত যুদ্ধক্ষেত্রে—যার মূল্য ছিল বারাে হাজার পাউন্ডেরও বেশি। পিয়ার্স পরিকল্পনা করল যে, সে ওই স্বর্ণ ডাকাতি করবে। দুর্ভাগ্যক্রমে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কড়া সতর্কতার কারণে স্বর্ণগুলােকে দুটি ভারি সিন্দুকে রাখে যা— আবার দু’টি তালা দিয়ে লাগানাে থাকে। আর সেগুলাে খুলতে লাগে চারটে চাবি— যা তার জন্য অনেক বড় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করল। পিয়ার্স তার দুষ্কর্মে সহযােগিতা করার জন্য নিয়ােগ করল এগারকে। রবার্ট এগার। ছাব্বিশ বছর বয়সে-ই হয়ে উঠেছিল তালা চাবি এবং সিন্দুক ভাঙার ব্যাপারে ডাকসাইটে এক ওস্তাদ। তার আঙুলের ক্ষিপ্রতা ছিল অসাধারণ। এই পরিকল্পনাটি সফল করার জন্য পিয়ার্স এক বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রস্তুতি ও অন্যান্য অপ্রত্যাশিত ঘটনা সামলে চলছিল। প্রথমদিকে তার কাজ ছিল ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং চাবিগুলাের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা। যথা সময়ে সে তথ্যও উদ্ধার করতে সক্ষম হল সে ব্যাংক কর্মকর্তা মি. হেনরি ফাওলার এবং মি. এগার ট্রেন্ট-এর কাছে দু’টি চাবি এবং অন্য দুটি চাবি লন্ডন ব্রিজ ট্রেন স্টেশনে। সাউথ-ইস্টার্ন রেলওয়ের অফিসে তালা দেয়া আছে। সবগুলাে চাবি সংগ্রহ করে, তাদের কপি তৈরি হবার পর পিয়ার্স ঠিক করল সেই বছরের [১৮৫৫] মে মাসের ২২ তারিখটি বেছে নিল ট্রেন ডাকাতির দিন হিসেবে। ভাগ্যক্রমে সে সময় গ্রিনউইচে একটি ডাকাতি হওয়ার ফলে পুলিশের মনােযােগ সেই দিকে ঘুরে গেল। ডাকাতির দিন আরাে একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটল। রেলওয়ে পুলিশের নতুন নিয়ম অনুযায়ি ট্রেনের দরজাগুলাে বাইরে থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। পিয়ার্স আর দেরি না করে, এগারকে একটি কফিনে ভরে ব্যাগেজ ভ্যানে চালান করে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে উঠে দরজাটি বাইরে থেকে খুলে দিল— যাতে তারা দুজনই আগের থেকে নির্দিষ্ট করে রাখা স্থানে স্বর্ণ নিয়ে নেমে যেতে পারে। পরের দিন, পুরাে ইংল্যান্ড জুড়ে এই ডাকাতির ঘটনা নিয়ে হই-চই পড়ে গেল। এবং প্রতিটি স্বর্ণ-ব্যবসায়ীরা একজন আর একজনকে দোষারােপ করতে লাগল। অথচ কেউ-ই আসল দোষীদের আন্দাজ করতে পারল না। যদিও ওদের দুষ্কর্ম সফল হয়েছে বলেই মনে হয়, কিন্তু পিয়ার্স, এগার এবং বার্গেস শেষ পর্যন্ত ধরা পড়েছিল। এডওয়ার্ড পিয়ার্সকে দীর্ঘ জীবন কারাবাসের শাস্তি দেওয়া হয়। কোর্ট থেকে জেলে নেবার সময় পিয়ার্স পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। কিন্তু ট্রেনে ডাকাতি হওয়া স্বর্ণগুলাে আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।