ফ্ল্যাপে লিখা কথা বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া অনেক কিছু আমরা অবলোকন করি এবং অনেক ক্ষেত্রে জানিও যে, কেন এসব ঘটছে বা কারা এসব ঘটাচ্ছে। কিন্তু প্রায় ক্ষেত্রে আমরা প্রতিবাদ করি না, ঝুঁকি নিতে চাই না দেখে চুপ করে থাকি। নিশ্চুপ থাকেন নি শুধু একজন, তিনি হলেন বর্তমান সময়ের সেরা ভাষ্যকর ডঃ মুনতাসীর মামুন। ২০০০ সালে লেখা মুনতাসীর মামুনের বাছাই করা ২৫টি নিবন্ধের সংকলন কারা দেশ চালিয়েছে, দেশ চালাচ্ছে এবং দেশ চালাবে। প্রবন্ধগুলির গুরুত্ব এই যে, এগুলি সময়ের স্থির চিত্র। মুনতাসীর মামুন একটি কথাই বলতে চেয়েছেন, তা হলো, বাংলাদেশে সিভিল সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং এখন সময় এসেছে এর প্রতিবন্ধকতাগুলি দূর করার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ হয়ে গড়ে তুলতে হবে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ। বাংলাদেশের বরেণ্য শিল্পী হাশেম খান লিখেছেন, “জনমানুষের মনের কথা, বিবেকের কথা অকপটে যিনি বিবৃত করতে পারেন” তিনি হলেন মুনতাসীর মামুন। বাংলাদেশের সিভিল সমাজ প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রবক্তা। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সাহসী সোচ্চার কন্ঠ মুনতাসীর মামুনের এই নিবন্ধগুলি শিল্পীর মন্তব্যের যথার্থতা্ই প্রমাণ করে। কারা দেশ চালিয়েছে, দেশ চালাচ্ছে এবং দেশ চালাবে সেরা লেখকের ২৫টি নিবন্ধের সংকলনই নয়, সময়ের দলিলও বটে।
সূচিপত্র বাজেটে একদশকের ধারাবাহিকতা নষ্ট হয় নি আপনার পরিচয়? সেনাবাহিনী তোয়াজ পার্র্টি কারা দেশ চালিয়েছে, দেশ চালা্চ্ছে এবং দেশ চালাবে এস এস এফের ব্যবহার এ রকমই হবে, কারণ রাষ্ট্রের দুই শীর্ষ প্রতির্ষ্ঠানকে আর হেয় করবেন না। টেককাহিনী, আদালত অবমাননা ও রাষ্টপতি মামলা হলে হাইকোর্ট ভবনে গিয়ে কোথাও লুকালেই হয় কেন রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করা দুরূহ? বেলগ্রেড থেকে লক্ষীপুর বড় বড় মানুষের বড় বড় কথা আর ছোট ছোট মানুষের নাভিশ্বাস নৌকা ডোবে কেন? বেগম জিয়া কি জানেন, তিনি কী চান মামলঅ হলেও বাস্তব তো বদলাচ্ছে না মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্র আবার মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দেয়া হামুদুর রহমান রিপোর্ট প্রকাশ-আমাদের কী ? রাজাকে রাজার মতন ঢাকায় থাকতে দেয়া যায় না জেনারেল, আলবদর ও ধর্ম ইনকিলাবকে কেন সবাই প্রশ্রয় দিয়েছে, আশ্রয় দেয়? মহাশক্তি মানুষ ধ্বংস করতে পারে, মন জয় করতে পারে না বিজয়ের মাসে পাকি বাংলা সৃষ্টির চ্যালেঞ্জ তাহলে কি বাংলাদেশ হয়নি? কে কার ‘দালাল’ সেটি স্পষ্ট হলো! গিকা চৌ এটা কি বললেন! আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বাঁচব তো?
মুনতাসীর মামুনের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুর জেলার গুলবাহার গ্রামে, কিন্তু তিনি ঢাকার ইসলামপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। সেখানেই পোর্ট ট্রাস্ট প্রাইমারি ও হাই স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা নেন। পরে ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এবং একই বিভাগ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষাজীবনে সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলেন, কাজ করেছেন ‘দৈনিক বাংলা বিচিত্রা’য়। এছাড়াও স্বাধীনতার পর প্রথম ডাকসু নির্বাচনের সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭৪ সালে প্রভাষক পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপরই তার বিভিন্ন অনুবাদগ্রন্থ, চিত্র সমালোচনা এবং ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ইতিহাসের প্রতি তার ভালোবাসা এবং দায়িত্ববোধ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে 'মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ গবেষণা ইন্সটিটিউট' প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলার ইতিহাসকে তিনি প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চান- এই উদ্দেশ্যেই মুনতাসীর মামুনের বই লেখা। একজন শিক্ষক হওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক। ঢাকা শহর নিয়ে তার রয়েছে গবেষণাপত্র। গড়ে তুলেছেন ‘সেন্টার ফর ঢাকা স্টাডিজ’ নামের ইতিহাস চর্চার একটি প্রতিষ্ঠান, যেখান থেকে মুনতাসীর মামুন এর বই সমগ্র তথা ১২টি গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। মননশীল এই লেখক দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে লিখে যাচ্ছেন নানা বিষয়ে। মুনতাসীর মামুন এর বই সমূহ এর বিষয় বহুমাত্রিক। তার গ্রন্থের সংখ্যা ২২০, যাতে স্থান পেয়েছে গল্প, প্রবন্ধ, গবেষণা এবং অনুবাদ সাহিত্য। শিশু-কিশোরদের নিয়েও তার লেখা গ্রন্থ প্রশংসা কুড়িয়েছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও তার সক্রিয় উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। বর্তমানে এই ইতিহাসবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিষয়ের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।