জ্যোতির্বিজ্ঞান কি? জ্যোতির্বিজ্ঞান হলাে বিজ্ঞানের সুপ্রতিষ্ঠিত একটি শাখা, পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষাই যার ভিত্তি। ব্রহ্মাণ্ডের বিভিন্ন জ্যোতিষ্কের স্বরূপ বুঝতে যে বিজ্ঞান সাহায্য করে, তাকেই বলে জ্যোতির্বিজ্ঞান। জ্যোতির্বিজ্ঞান হলাে বিজ্ঞানের প্রাচীনতম শাখা অর্থাৎ একেবারে বিজ্ঞানচর্চার শুরুতেই জ্যোতির্বিজ্ঞানের আবির্ভাব। জ্যোতির্বিজ্ঞান হলাে মূলত আকাশ সংক্রান্ত বিজ্ঞান। সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ, নক্ষত্র ইত্যাদি জ্যোতিষ্ক সতর্কতার সাথে লক্ষ্য করে এদের সৃষ্টি ও ধ্বংস এবং অন্যান্য পরিবর্তন সম্পর্কে মূল্যবান তত্ত্ব গঠন করাই জ্যোতির্বিজ্ঞানের মূল উদ্দেশ্য। পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ব্রহ্মাণ্ডের অধ্যয়নকেই বলে জ্যোতির্বিজ্ঞান। প্রতিনিয়তই আকাশে দেখা, সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ ও নক্ষত্রের গতিবিধি, সূর্য ও নক্ষত্রের বিপুল শক্তির ভাণ্ডার ইত্যাদি নিয়ে অধ্যয়ন ও গবেষণা করলে বােঝা যায়, এদের এই বৈশিষ্ট্যের জন্য রয়েছে পদার্থবিজ্ঞানের সুসংবদ্ধ নীতি। জ্যোতির্বিজ্ঞানের অন্যতম উদ্দেশ্য হলাে সতর্কতার সাথে আকাশবীক্ষণ করে ব্রহ্মাণ্ডের নানা রহস্য ভেদ করা। প্রগতিশীল এই জ্যোতির্বিজ্ঞান নির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণ ও প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই বৈজ্ঞানিক সত্য উপলব্ধির ভিত্তিকে আরাে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। বর্তমান গ্রন্থটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের একেবারে প্রাথমিক স্তরের না হলেও বলা ভালাে জ্যোতির্বিজ্ঞানের একটি সহজ পাঠ। কারণ বইটিকে মােট দশটি অধ্যায়ে ভাগ করে জ্যোতির্বিজ্ঞানের হাতে খড়ি দেবার মতাে করে প্রস্তুত করা চেষ্টা করা হয়েছে। যাতে করে পাঠক একটু মনােযােগী হলেই সমুদয় বিষয় সঠিকভাবে বুঝতে পারবেন। এই বইটি লেখার মূল্য উদ্দেশ্য হলাে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতাে বাংলাদেশেও ২০০৬ সাল থেকে নিয়মতিভাবে যে অ্যাস্ট্রো-অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হচ্ছে তাতে অংশগ্রহণ করা এবং তাতে কিভাবে জয়ী হওয়া যায় তার জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করা। আসলে ১৪ থেকে ১৯ বছর বয়সী স্কুল-কলেজ পড়ুয়া বন্ধুদের জন্য এ আয়ােজন।
সৌমেন সাহা ১৯৮০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের খুলনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব কেটেছে এই জেলাতেই। খুলনার স্বনামধন্য সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও সরকারি সুন্দরবন আদর্শ মহাবিদ্যালয় থেকে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি পি.সি. কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। বিজ্ঞান , প্রযুক্তি ও গণিতের প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ ছিল শুরু থেকেই। সেই আগ্রহ থেকেই পাড়ি জমান সুদূর ইংল্যান্ডে। সেখানকার লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে লন্ডন কলেজ অব বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এন্ড কম্পিউটিং বিভাগ থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমাসহ বি.এস.সি. ডিগ্রি লাভ করেন। সৌমেন সাহা নিয়মিত বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, বিশেষত বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখি করেন। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, মাসিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় তাঁর প্রকাশিত লেখার সংখ্যা প্রায় দুই শতাধিক। তাঁর পেশাগত জীবনেও তিনি বিজ্ঞান গবেষণার সাথে জড়িত। খুলনার ঐতিহ্যবাহী প্রাণিক বিজ্ঞানাগার খুলনার কেন্দ্রীয় শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। জাতীয় বিভিন্ন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রকল্পের উদ্ভাবনের কারণে তিনি পুরস্কৃতও হয়েছেন। পাঠক সমাদৃত সৌমেন সাহা এর বই সমূহ হলো ‘প্রাচীন ভারতীয় গণিত ও জ্যোতির্বিদ’, ‘বৈদিক গণিতের পরিচয়’, ‘পাগল করা গণিত’, ‘যন্ত্ররা যেভাবে কাজ করে’, ‘বিজ্ঞানের জানা অজানা কথা’, ‘জ্যোতির্বিজ্ঞানের সহজ পাঠ’, ‘মাথায় কত প্রশ্ন আসে’ ইত্যাদি। তাঁর লেখার মূল বিষয়বস্তু হলো বিজ্ঞান, গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান। সাধারণ পাঠকদের কথা মাথায় রেখে রচিত সৌমেন সাহা এর বই সমগ্র খুব সহজ ও সাবলীলভাবে এই জটিল বিষয়গুলো উপস্থাপন করে। বিজ্ঞান বিষয়ক লেখালেখিতে আত্মমগ্ন এই লেখক বর্তমানে ঢাকার এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।