বাংলাদেশের শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা পর্যালোচনার শেষ নেই। কারণ, স্বাধীনতার পর থেকে শিক্ষার প্রতি সর্বস্তরের মানুষের আগ্রহের সঞ্চার হচ্ছে বড় বেশি। অথচ জাতীয় জীবনের সকল কর্মকাণ্ডের মধ্যে এই শিক্ষা ক্ষেত্রেই সর্বাধিক সংকট-জর্জরিত। পুরোনো সমস্যা তো আছেই, যোগ হয়েছে অনেক নতুনও। বেড়ে চলেছে শিক্ষার রাজ্যে বৈষম্য, নৈরাজ্য, হতাশা, অস্থিরতা। উদার, মুক্ত, মানবিক-মননশীলতা ক্রমেই অন্তর্হিত হয়ে যাচ্ছে, সংকুচিত হয়ে পড়েছে শুভবুদ্ধি ও সুস্থ দিকদর্শন, সম্প্রসারিত হচ্ছে অনভিপ্রেত অনৈতিকতা ও গোষ্ঠীবদ্ধতা। মূল্যবোধের ধ্বস নামছে প্রকটভাবে। একদিকে শিক্ষা ক্রমেই দুর্মূল্য হয়ে যাচ্ছে, দ্রুত কড়ি নির্ভর হয়ে উঠছে। অন্যদিকে প্রকৃত শিক্ষা হয়ে যাচ্ছে দুষ্প্রাপ্য। সর্বপর্যায়ে সামাজিক নেতৃত্বের দুর্বলতা এবং পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার ক্রমবর্ধমান দীনতা এজন্যে বহুলাংশে দায়ী। আধুনিকতা ও যুগোপযোগিতার নামে নানাভাবে শিক্ষা সংকোচনকেই আমরা দেখতে পাচ্ছি। আজকের দিনে দানশীলের দানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে না, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জন্ম নেয় রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। শিক্ষার মানের উন্নয়ন এখন আর লক্ষ্য নয়, লক্ষ্য অনাকাঙ্খিতভাবে শিক্ষার্থীদের অপ-রাজনীতির ছত্রছায়ায় আনা। জ্ঞানানুশীলন ও সুকমার বৃত্তিচর্চা থেকে তাদের যোজন যোজন দূরত্বে টেনে নেওয়া হচ্ছে। এর ফলে গরিষ্ঠ সংখ্যক শিক্ষার্থী তাদের অমিত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও অধ্যয়ন থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছে এবং ক্ষমতা ও বিত্তবৈভবে আসক্ত হয়ে পড়ছে। সত্যিকার শিক্ষায় আগ্রহী ছোট্ট অংশটি কোণঠাসা হয়ে থাকছে। আমাদের মেধাবীরা পরবাসী হয়ে ক্রমে অচেনা হয়ে যাচ্ছে। এই হতাশা থেকে বেরিয়ে আসার উদ্দেশ্যেই এ-গ্রন্থে আমাদের দেশের শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থার নানাদিক সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। দেশের বরেণ্য বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিদগণ তাঁদের সুচিন্তিত মতামত প্রদান করেছেন নিজ নিজ আলোচনার পরিসরে। সত্য বটে, শিক্ষার এ সংকট কাটিয়ে ওঠা কোনো ব্যক্তি বা বিচ্ছিন্ন প্রয়াসে সম্ভব নয়। কিছু সম্মিলিত ও ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় এর থেকে এখনও উত্তরণ সম্ভব। এ-গ্রন্থে দেশের বিজ্ঞ শিক্ষাবিদদের লেখায় এমনই আভাস পাওয়া যায়। শিক্ষার সংকট উত্তরণে ও উন্নয়নে প্রয়োজন মত-পথ নির্বিশেষে সকলের যুথবদ্ধ সহযোগিতা, চিন্তা ও কর্মের সততা ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা। এ সত্যটি প্রতিফলিত হয়েছে এ-গ্রন্থে সকলের লেখায়। সেই সঙ্গে আছে কিছু দিকনির্দেশনা, কিভাবে তা সম্ভব করে তোলা যায়।
হােসনে আরা শাহেদ। শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, কলাম লেখক প্রতিষ্ঠাতা _ অধ্যক্ষ, শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় (অবসর প্রাপ্ত)। লেখা তাঁর সব ধরনের- প্রবন্ধ, গল্প, রম্যকথকতা, | চরিত্র-চিত্রন, রূপান্তর, সম্পাদনা, শিশুতােষ, পাঠ্যপুস্তক সব মিলিয়ে এ যাবত প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৭৬। বাংলা একাডেমী থেকে ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত তাঁর ‘শাড়ি' গ্রন্থটি পাক ভারত উপমহাদেশে শাড়ির ওপর প্রথম গবেষণা গ্রন্থ। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট প্রয়াত ইয়াসির আরাফাতের ওপর ২০০৫ সালে। তার লেখা প্রকাশিত বইটিও এদেশে আরাফাতের ওপর প্রথম স্বাধীনতার পর পুরাে সত্তর ও আশির দশক জুড়ে অধুনালপ্ত দৈনিক বাংলায় তার পথের পাঁচালি’ কলামের জন্য বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন। বাংলা একাডেমি, এশিয়াটিক সােসাইটি, বিজ্ঞান সংস্কৃতি পরিষদ, বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ, একুশে চেতনা পরিষদসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের জীবন সদস্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য (১৯৯১-৯৩ এবং ১৯৮৩-৮৫) এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য (১৯৮৩-৯৫)। গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিবাের্ডের সদস্য (২০০০ সাল থেকে) বর্তমানে নিমগ্ন পাঠে ও লেখায়। পৈতৃক নিবাস লক্ষ্মীপুর, গােপালগঞ্জ শ্বশুরালয়, বসবাস ঢাকায়।