"দ্য ভিঞ্চি কোড" বইটির কথাঃ দু’হাজার বছরের পুরনো সত্যকে চিরতরে নির্মূল করার জন্যে একই দিনে চারজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। সত্যটি জনাজানি হয়ে গেলে হাজার বছরের ইতিহাস লিখতে হবে নতুন ক’রে। সত্যটি লালন ক’রে আসছে একটি গুপ্ত সংঘ-সেই গুপ্ত সংঘের সদস্য ছিলেন আইজ্যাক নিউটন, ভিক্টর হুগো, বত্তিচেল্লি আর লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মতো ব্যক্তি। ওদিকে উগ্র ক্যাথলিক সংগঠন ওপাস দাই সেই সত্যকে চিরতরে নির্মূল করার আগেই গুপ্তসংঘের গ্র্যান্ডমাস্টার তার ঘনিষ্ঠ একজনের কাছে হস্তান্তর ক’রে দেয় আর ঘটনাচক্রে এরকম একটি মারাত্মক মিশনে জড়িয়ে পড়ে হারভার্ডের সিম্বোলজিস্টের এক প্রফেসর। পাঠকের মনোজগত নাড়িয়ে দেবার ক্ষমতা রাখে বইটি।
"নিঃসঙ্গতার একশ বছর" ফ্ল্যাপে লেখা কথাঃ 'Cien Anos de Soledad' (১৯৬৭) বা ’ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ার্স অব্ সলিচিউড’ (১৯৭০) বা ‘নিঃসঙ্গতার একশ বছর’ (২০০০) একটি পরিবারের কাহিনী। এই ‘বুয়েন্দিয়া’ পরিবারেই একজনের নেতৃত্বে একদল দুঃসাহসী অভিযাত্রী দক্ষিণ আমেরিকার গহীন এক জঙ্গলে বসতি স্থাপন করে। সূত্রপাত ঘটে-প্রায় আক্ষরিক অর্থেই, এক মহাকাবিক জগতের; একই সঙ্গে নিয়তির আশীর্বাদপুষ্ট, অভিশাপলাঞ্ছিত আর খামখেয়ালীর শিকার একটি অসাধারণ বংশের; অভূতপূর্ব ঘটনা-দূর্ঘটনা পরম্পরার; আর সেই সঙ্গে অবশ্যই একটি অলোকসামান্য উপন্যাসের, প্রকাশের পর মুহূর্ত থেকেই যা পাঠকের মনোযোগ এবং ভালোবাসা অর্জন করে ক্লাসিকের পর্যায়ভূক্ত হয়ে গেছে। মূলত এই উপন্যাসটির জন্যেই ১৯৮২ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরুস্কার লাভে করেন লেখক। উপন্যাসটির অসংখ্য পাত্র-পাত্রীর মধ্যে রয়েছে হোসে আর্কাদিও বুয়েন্দিয়ার মতন অসাধারণ কৌতুহলী, উদ্ভাবনীশক্তিসম্পন্ন, দুঃসাহসী, ও বুদ্ধিমান চরিত্র, যে নিজের জ্ঞান-বুদ্ধি খাটিয়েই আবিষ্কার করে ফেলে যে পৃথিবী গোল; তার স্ত্রী, উরমুলা ইগুয়ারান নামের কর্মঠ, সর্বব্যাপিনী, সর্বংসহা, শতায়ু, নিঃসঙ্গ নারী, যাকে সারা জীবন তাড়া করে ফেরে তার বংশে শুয়েরের লেজাবিশিষ্ট কারো জন্মের আশংকা; রয়েছে, পায়ের তলায় সর্ষে নিয়ে সারা দুনিয়া ঘুড়ে বেড়ানো, বিদগ্ধ, রহস্যময়, বেদে মেলকিয়াদেস; সুন্দরী রেমেদিওস নামের সৃষ্টিছাড়া সৌন্দর্যের অধিকারিণী এক অপার্থিব রমণী, যার প্রণয়পিপাসুরা একের পর এক বৃথাই আত্মাহুতি দিয়ে চলে তার রূপের অনলে, আর অবশেষে যে প্রকাশ্যে দিবালোকে ধীরে ধীরে উর্ধাকাশে উঠে মিলিয়ে যায় অসীম শূন্যে; রয়েছে, কর্ণেল অরেলিয়ানো বুয়েন্দিয়া। বত্রিশটি সশস্ত্র বিদ্রোহ সংগঠিত করে সব কয়টাতেই হেরে গিয়েছিল সে, এড়িয়ে গিয়েছিলো তার প্রাণের ওপর চালানো চোদ্দটা হামলা, তিয়াত্তরটা অ্যামবুশ আর একটা ফায়ারিং স্কেয়াড। যুদ্ধের পর তাকে দেয়া আমরণ অবসর ভাতা ঘৃণাভরে ফিরিয়ে দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে গিয়েছিল নিজের কামারশালায় বসে ছোট ছোট সোনার মাছ বানিয়ে। আর রয়েছে, এসব ঘটনা-দুর্ঘটনা, লৌকিক-অলৌকিকের কেন্দ্রবিন্দু মাকোন্দা নামের গ্রামটি, যে-গ্রামকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে উপন্যাসের প্রায় সব পাত্র-পাত্রীর ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক, আধ্যাত্মিক ও বৈধ-অবৈধ যৌন-জীবন; আর এসব এক অদ্ভুত উপায়ে মিলেমিশে গিয়ে যে-জগতের সৃষ্টি করেছে তা একদিকে যেমন পাঠকের কাছে রীতিমতন আশ্চর্য আর অদ্ভুত বলে মনে হয়, তেমনি আবার তা নিতান্ত পরিচিত বলেও ঠেকে; মনে হয়, এ-কাহিনী যেন মানবেতিহাসেরই এক সুনিপুণ পুনর্বয়ণ।
"দ্য সাইলেন্স অব দি ল্যাম্বস্" বইয়ের কথাঃ অজ্ঞাত এক সিরিয়াল কিলার একের পর এক তরুণীকে বীভৎসভাবে হত্যা ক’রে চলেছে। দিশেহারা এফবিআই সেই খুনির পরিচয় জানতে তাদের এক এজেন্টকে পাঠায় নয়টি নরহত্যার দায়ে অভিযুক্ত মানুষখেকো ডক্টর হ্যানিবাল লেকটারের কাছে। দূর্বোধ্য আর ধূর্ত লেকটার তার অসাধারণ মেধার সাহায্যে সেই খুনিকে ধরিয়ে দিতে সাহায্য করবে নাকি চরিতার্থ করবে নিজের উদ্দেশ্য-সেই প্রশ্নের উত্তর পাঠক খুঁজে পাবেন কিছুদিন আগে নির্বাচিত হওয়া শতাব্দীর সেরা এই থৃলারে।
ব্রাজিলিয়ান ঔপন্যাসিক পাওলো কোয়েলহো ডি’সুজা ১৯৪৭ সালের ২৪ আগস্ট দেশটির রাজধানী রিও ডি জেনেরিওতে জন্মগ্রহণ করেন। একই শহরে তার শিক্ষাজীবনের শুরু এবং বেড়ে ওঠা। আইন বিষয়ে কিছুদিন পড়াশোনার পর ভ্রমণের নেশায় তা আর শেষ করতে পারেননি। ঐ সময়টা ভবঘুরের ন্যায় ঘুরে বেড়িয়েছেন মেক্সিকো, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, চিলিসহ ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে। এর পরপরই ছোটবেলার স্বপ্ন বই লেখাকে বাস্তবে রূপ দেন। ১৯৮২ সালে ‘হেল আর্কাইভস’ নামক বই দ্বারা সাহিত্য অঙ্গনে প্রবেশ করেন। তবে এই প্রবেশ আকর্ষণীয় ছিলো না। এমনকি দ্বিতীয় প্রকাশিত বই ‘প্রাক্টিক্যাল ম্যানুয়েল অব ভ্যাম্পায়ারিজম’ তার নিজেরই অপছন্দের তালিকায় ছিলো। ১৯৮৭ সালে ‘পিলগ্রিমেজ’ এর পর ১৯৮৮ সালে প্রকাশ পায় তার আরেক বই ‘দ্য আলকেমিস্ট’। পাওলো কোয়েলহো এর বই হিসেবে ‘দ্য আলকেমিস্ট’ বইটিই মূলত কোয়েলহোর লেখক-জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তবে ‘৮৭ সালে বইটি প্রকাশিত হয়েছিলো ব্রাজিলের একটি ছোট প্রকাশনা সংস্থা থেকে, যারা ন’শোর বেশি কপি ছাপাতে নারাজ ছিলো। ১৯৯৩ সালে একই বই আমেরিকার বিখ্যাত প্রকাশনী হারপার কলিন্স থেকে প্রকাশিত হলে পাঠক মহলে হুলুস্থুল পড়ে যায়। বইটি এখন পর্যন্ত মোট ৮০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে, যা পাওলো কোয়েলহো এর বই সমূহ এর মাঝে অনন্য। কোয়েলহোর কাহিনীগুলোর বিশেষত্ব হলো তার কল্পনাশক্তির জাদুকরী মোহ। কোনো সরল গল্প দ্বারা তিনি গভীর জীবন দর্শনবোধ পাঠকদের মাঝে সঞ্চালন করতে চান, এবং সফলতার সাথে করেও এসেছেন। পাওলো কোয়েলহো এর বই সমগ্র-তে স্থান পাওয়া উপন্যাসগুলোর মাঝে ‘দ্য আলকেমিস্ট’, ‘ব্রিদা’, ‘দ্য ডেভিল এন্ড মিস প্রাইম’, ‘দ্য জহির’, ‘দ্য ভ্যালকাইরিস’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ‘দ্য মাডি রোড’, ‘দ্য রং গিফট’, ‘দ্য জায়ান্ট ট্রি’, ‘দ্য ফিশ হু সেভড মাই লাইফ’, ‘আই উড র্যাদার বি ইন হেল’, ‘রিবিল্ডিং দ্য ওয়ার্ল্ড’ এর মতো ছোটগল্পগুলোতেও দর্শনের প্রমাণ মেলে, যা পাঠকদের গভীরভাবে ভাবতে শেখায়। পাওলো কোয়েলহোর আরেক পরিচয় তিনি গীতিকার। বেশ কিছু জনপ্রিয় ব্রাজিলীয় গানের জনক তিনি।