"ধম্মপদ" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: ধম্মপদ গ্রন্থটি হলাে কবিতার আকারে লেখা গৌতম বুদ্ধের বাণী সংকলন। এটি বৌদ্ধ ধর্মের সর্বাধিক পঠিত ও পরিচিত গ্রন্থ যা থেরবাদ সুপিটকের খুদ্দক নিকায়-এর অন্তর্গত। থেরবাদকে আদি ও মৌলিক বৌদ্ধদর্শন বলা হয়। পালি ‘থের’ শব্দ থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে। থের’ শব্দের অর্থ স্থবির, স্থিত, স্থিতধী, স্থিতিশীল ইত্যাদি। অর্থাৎ যিনি সংসার ত্যাগ করে ভিক্ষু হয়েছেন, কমপক্ষ দশ বছর নিরন্তর সাধনায় স্থিতিশীল, তাকেই বলা হয় স্থবির’ বা ‘থের। গৌতম বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের পরে অনুষ্ঠিত বৌদ্ধ ভিক্ষুদের প্রথম সম্মেলনে এ রীতির প্রচলন হয়। বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশে এখনও এ ধারা বর্তমান আছে। ভিক্ষুসংঘের এ থের অভিধা থেকেই ‘থেরবাদ’ শব্দের অভ্যুদয়।। ধম্মপদ শব্দটি “ধম্ম” এবং “পদ” এই দুটি শব্দ নিয়ে গঠিত। শব্দ দুটির একাধিক অর্থ রয়েছে। তাই ধম্মপদ বইটির নামকরণের অর্থ নিয়েও একাধিক মত প্রচলিত আছে। কেউ কেউ বলেন, “ধম্ম” শব্দের অর্থ “কর্ম”, কারও মতে ‘সংস্কার। আবার কেউ বলেন, “ধৰ্ম্ম” শব্দের অর্থ “কার্যকারণ ভাব”। কোন কোন পাশ্চাত্য গ্রন্থে “ধম্ম” শব্দ “স্বভাব” অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে অনেক রকম মত থাকলেও পাশ্চাত্য এবং প্রাচ্যের পণ্ডিতগণ কার্যকারণ ভাবকেই ধম্মের প্রকৃত অর্থ হিসেবে বিবেচনা করেছেন। অর্থাৎ, আমাদের ইন্দ্রিয়সমূহ দ্বারা যা কিছু আমাদের মাঝে প্রবেশ করে সেই সংস্কারই হলাে ধম্ম । আমি বর্তমান মুহূর্তে যেমন আছি তা কেবল পূর্ব মুহূর্তের ফল মাত্র। তবে কর্মকে অনেকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, যেমন, আমি অস্ত্র দিয়ে কোন ব্যক্তির শিরচ্ছেদ করলাম, এই শিরচ্ছেদ প্রকৃতপ্রস্তাবে “কর্ম” নয়। এমন একটা কাজ করে আমার মাঝে যে সংস্কারের উদয় হয়েছে সেটাই কর্ম। আবার এভাবে ভাবলে মনে হয় বিষয়টা আমাদের কাছে আরাে একটু সহজ হতে পারে। যেমন, আমি কোন ব্যক্তিকে কুট কথা বলে আঘাত করলাম, এই আঘাত করা কর্ম নয়। এর কারণে আমার মাঝে যে কার্যকারণ ভাব বা সংস্কারের জন্ম নিল সেটাই কর্ম।