"দাওয়াম" বইয়ের কথা: আমাদের আহ্বান ইসলাম। আমাদের উদ্দেশ্য মহান আল্লাহ রাব্বল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জন। আমাদের আশা সমগ্র মানবতার কল্যাণ সাধন। আমাদের পথ জিহাদের পথ। আমাদের কর্মপন্থা মানুষের মন জয় করেই তার সম্মতি অর্জন। মানবজাতির মুক্তির একমাত্র সম্ভাবনা ইসলাম, যা আল্লাহ প্রদত্ত । একমাত্র জীবন-বিধান। এজন্যই এটি একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, যাতে নেই কোন কম-বেশীর অবকাশ। এই ইসলাম প্রতিষ্ঠার কর্মতৎপরতায় শামিল হবার সৌভাগ্য সকলের হয় না। এই দ্বীনের বিজয়ে কেউ দিন-রাত কাজ করুক বা না করুক, কঠোর পরিশ্রমী হোক কিংবা অলসতায় নরম বিছানা বেছে নিয়ে মাথা গুজে থাকুক, বিজয়কে একদিন এগিয়েও আনতে পারবে না একদিন পিছিয়েও দিতে পারবে না। বরং সব কিছুর মূলে হল ‘এই সত্য আহ্বানের কর্মতৎপরতায় কতটুকু ভূমিকা পালন করছি’ তা...।
‘আমি জুনাইদ জামশেদ বলছি’ বইয়ের কিছু অংশঃ জুনাইদ জামশেদের আত্মকাহিনী ‘আমি কীভাবে দ্বীনের পথে এলাম? [পাকিস্তানের শিয়ালকোট জেলার সীরাত স্ট্যাডি সেন্টারে প্রদত্ত বয়ানের অনুবাদ] বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লী আলা রসূলিহিল কারীম। উপস্থিত সম্মানিত ভাই, বন্ধু, বয়োজ্যষ্ঠবৃন্দ ও আমার বোনেরা! আপনাদের সবাইকে আমার পক্ষ থেকে সালাম– আস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আপনাদের এ নগরীতে আসতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমি সবার আগে আমার ভাই ও বন্ধু মাওলানা ইমরান বশীর সাহেবের শুকরিয়া আদায় করছি, আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে। যিনি আপনাদের সামনে আমাকে কথা বলার সুযোগ দিয়েছেন। আমি উপস্থিত সকল ভাই ও বোনের শুকরিয়া আদায় করছি। আপনারা সবাই এখানে এসেছেন। আপনাদেরকে পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি। আপনাদেরকে দেখে আমার আহত হৃদয় কী পরিমাণ সান্ত্বনা পেয়েছে, তা আমি বলে বোঝাতে পারবো না। আপনাদের সামনে বয়ান করার ক্ষমতা আমার নেই। শুধু আল্লাহর কাছে এ দুআ করুন— আল্লাহ যেন আজকের এই আয়োজনের জন্যে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উত্তম বিনিময় দান করেন। আল্লাহ যেন নিজ যথোপযুক্ত শ্রেষ্ঠত্ব অনুপাতে উত্তম বিনিময় দান করেন। আপনারা মৌলভী ইমরান বশীর সাহেবের কাছ থেকে সবসময় দ্বীনি ও আত্মশুদ্ধিমূলক বয়ান শুনে থাকেন। জানি না, হঠাৎ কীভাবে যেন আমার শেষের কথাঃ ভাই! মিউজিক আত্মার খোরাক নয়। মিউজিক হলো প্রবৃত্তির খোরাক। এই মিউজিক অত্যন্ত বিপদজনক বিষ। এই বিষ যখন কারো ভেতরে প্রবেশ করে তখন সে বোঝে না- এই গান। তার কী পরিমাণ ক্ষতি করে ফেলছে! বিশ্বাস করুন, আপনি যদি কোনো বুযুর্গের কাছে গিয়ে দ্বীনি বয়ান শোনেন, এরপর মাত্র পাঁচ মিনিট কোনো গান শোনেন তাহলে এতোক্ষণের পুরো বয়ান ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। মিউজিক হালাল না হারাম- সেই তর্কে আমি যাচ্ছি না। আমি শুধু আপনাকে মিউজিকের খারাপ দিক জানাচ্ছি, যা বাস্তবে ঘটছে। আমাকে আমার এক বন্ধু পরামর্শ দিয়েছে, দোস্ত! এক কাজ কর।একদিকে ওখানে গিয়ে গান গাইবে। আরেক দিকে এখানে এসে আযান দেবে। আমি তাকে বলেছি, এমনটি কখনই সম্ভব নয়। যে ব্যক্তি প্রবৃত্তিপূজারী গান-সঙ্গীতে অভ্যস্ত তার কাছে আযানের শব্দ ভীষণ অপছন্দ। নাউজুবিল্লাহ। আমার পরিষ্কার মনে আছে। আমি যখন আমার আগের জীবনে ছিলাম, কনসার্ট করতাম তখন যদি আশপাশের কোনো মসজিদে থেকে মাগরিবের আযানের শব্দ ভেসে আসতো বিশ্বাস করুন, ওই আযানের শব্দ আমাদের বুক এফোড়-ওফোড় করে বেরিয়ে যেতো। কারণ, আমরা কনসার্ট নামের একটি ভীষণ মন্দ কাজে লিপ্ত। আর আযান আমাদেরকে এর বিপরীতে কল্যাণের দিকে আহ্বান করছে। যার কারণে আমরা কখনই আযানের শব্দ সহ্য করতে পারতাম না। এরদোয়ানঃ দ্যা চেঞ্জ মেকার' বইটিতে ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথাঃ রেজেপ তায়্যিপ এরদোয়ান। একটি নাম। একটি আন্দোলন। একটি সংগ্রাম এবং ভবিষ্যতের একটি ইতিহাস! যদি আমাকে দুটি বাক্য দিয়ে এরদোয়ানকে মূল্যায়ন করতে বলা হয় তাহলে আমি বলব, প্রথমঃ তিনি আপাদমস্তক একজন ক্যারেশমেটিক রাজনীতিবিদ, দিত্বীয়ত ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণঃ তিনি একজন চেঞ্জ মেকার। এই বিশাল মানুষটির জীবনী নিয়ে কাজ করাটা আমার মত একজন ছোট মানুষের জন্য ছিল অনেক দুঃসাহস এবং অলিক কল্পনার। তুরস্কের গাজী ইউনিভার্সিটিতে আমি পিএইচডি করতে আসি ২০১৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর। আসার সম্ভবত একমাসের মাথায়ই এরদোয়ানের একটি প্রোগ্রামে আংশ নেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। প্রোগ্রামটি ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ২০০ বছর পূর্তিতে চানাক্কালের শহীদদের স্মরণে যুবকদের অংশগ্রহণে একটি প্রোগ্রাম। তখন তুর্কিশ ভাষার জ্ঞান বলতে অ..আ..ক.. খ.. পর্যায়ের। কিন্তু এরদোয়ানের প্রায় ৪০ মিনিটের বক্তব্যের সারকথার প্রায় পুরোটাই অনুধাবন করতে পেরেছিলাম। উনার জাগরণময়ী বক্তব্যে হল ভর্তি যুবকদের নাড়িয়ে দিয়েছিল। এরদোয়ানের বক্তব্য যাদুর মত গিলছল। মনে মনে ভাবতেছিলাম নেতাতো এমনই হওয়া দরকার।
আল্লাহর পথের এক মহান দাঈ,ইলমে ওহীর বাতিঘর যুগশ্রেষ্ঠ মনীষী। খাঁটি আরব রক্তের গর্বিত বাহক।বিশ্বময় হেদায়েতের রোশনি বিকিরণকারী।উম্মতের রাহবর ও মুরুব্বি। কল্যাণের পথে আহ্বানে চিরজাগ্রত কর্মবীর। জন্ম ১৯১৪ ঈসাব্দে। ভারতের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার সূতিকাগার উত্তর প্রদেশের রাজধানী লাখনৌর রায়বেরেলীতে। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া আদ্যোপান্তই দারুলউলুম নদওয়াতুল উলামায়। অধ্যাপনা জীবনের সিংহভাগও এই প্রতিষ্ঠানে নিবেদিত ছিলেন। আল্লামা নদভীর খ্যাতির সূচনা হয় বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকে "সীরাতে সাইয়েদ আহমদ শহীদ" রচনার মাধ্যমে।গ্রন্থটি গোটা ভারতবর্ষে তাকে পরিচিত করে তুলে।এরপর তিনি রচনা করেন 'মা যা খাসিরাল আলামু বিনহিতাতিল মুসলিমিন' (মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারাল) নামক কালজয়ী গ্রন্থ।যা তাকে প্রথমত আরববিশ্বে ও পরবর্রতীতে বৈশ্বিক সুখ্যাতি এনে দেয়। এ পর্যন্ত গ্রন্থটির শতশত সংস্করণ বের হয়েছে। বিগত প্রায় পৌনে এক শতাব্দী ধরে তার কলম অবিশ্রান্তভাবে লিখেছে মুসলিম ইতিহাসের গৌরদীপ্ত অধ্যায়গুলোর ইতিবৃত্ত। সীরাত থেকে ইতিহাস, ইতিহাস থেকে দর্শন ও সাহিত্য পর্যন্ত সর্বত্রই তার অবাধ বিচরণ। উর্দু থেকে তার আরবী রচনায় যেন অধিকতর অনবদ্য। আল্লামা নদভী জীবনে যেমন পরিশ্রম করেছেন, তেমনি তার শ্বীকৃতিও পেয়েছেন। মুসলিম বিশ্বের নোবেল হিসেবে খ্যাত বাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন।১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে দুবাইয়ে তিনি বর্ষসেরা আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হন।১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের পক্ষ থেকে আলী নদভীকে সুলতান ব্রুনাই এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। আন্তর্জাতিক বহু ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সদস্য ছিলেন। তিনি একাধারে রাবেতায়ে আলমে ইসলামী এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের সভাপতি ছিলেন। লাখনৌর বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুলউলুম নাদওয়াতুল-উলামা' এর রেকটর ও ভারতীয় মুসলনমানদের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম মুসলিম পারসোন্যাল ল' বোর্ডের সভাপতি ছিলেন। ইসলামের এই মহান সংস্কারক ১৯৯৯ সনের ৩১ ডিসেম্বর জুমার আগে সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াতরত অবস্থায় ইন্তিকাল করেন।