"নতুন আলো" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: উনিশ শতক ফুরিয়ে বিশ শতক যখন আমাদের দরজায় কড়া নাড়ল, বাংলায় তখন শুরু হয়েছে এক নতুন আলােড়ন তথা জাগৃতি ইতিহাসে যা ‘বাংলার রেনেসাঁস’ নামে খ্যাত। এমনই এক সন্ধিপর্বের বাংলা তথা ভারতবর্ষই সুবৃহৎ এই উপন্যাসের প্রেক্ষাপট। এই সময়ে বিশ্ববিজয়ী সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ ধীরে ধীরে ঢলে পড়ছেন অকালমৃত্যুর কোলে। জগদীশচন্দ্র বসুর দিগদর্শী গবেষণায় সিদ্ধির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে অর্থাভাব, অসহযােগিতা এবং ঈর্ষা। রবীন্দ্রনাথ ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়ের সাহচর্যে শান্তিনিকেতনে গড়ে তুলছেন ব্রহ্মচর্যাশ্রম। অরবিন্দ ঘােষ স্বাদেশিকতার সাধনায় মগ্ন। প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠা করছেন স্বদেশি কারখানা, বেঙ্গল কেমিক্যাল। বাংলা গানে ফুল ফোটাচ্ছেন দ্বিজেন্দ্রলাল, অতুলপ্রসাদ এবং রজনীকান্ত। সরলা ঘােষাল লিপ্ত হয়ে পড়ছেন নানা বিচিত্র কর্মকাণ্ডে। জামশেদজি টাটা স্বপ্ন দেখছেন ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স তৈরির। মােহনদাস করমচাঁদ গান্ধী বুয়র যুদ্ধে গঠন করছেন অ্যাম্বুলেন্স কর্পস। ভারতেশ্বরী ভিক্টোরিয়ার মৃত্যু। নতুন গভর্নর জেনারেল লর্ড কার্জন দরবার বসাতে চলেছেন দিল্লিতে। প্লেগে এবং দুর্ভিক্ষে মরছে দেশের লােক। সন্ন্যাসিনী নিবেদিতা অধ্যাত্ম, শিল্পভাবনা, স্বদেশচেতনা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, চরমপন্থী বিপ্লবী আন্দোলন সব কিছুর মধ্যে অক্লান্ত শ্রম ও তীক্ষ্ণ মনীষা নিয়ে উপস্থিত। আর কখনও দুর থেকে, কখনও কাছ থেকে এই ঐতিহাসিক সময়কে প্রত্যক্ষ করছে দুরন্ত বালক প্রেমাঙ্কুর আতর্থী। মহাকাব্যিক এই উপন্যাসে কোনও কেন্দ্রীয় চরিত্র না থাকলেও বহু চরিত্রের সমাপতনে, বহু আখ্যানের উন্মােচনে, বহু স্বরের কলতানে এই উপন্যাস হয়তাে-বা হয়ে উঠতে চায় ধ্রুপদি পাশ্চাত্য সিম্ফনির আদলে এক মহা ঐকতান।