হুমায়ুন মালিক বাংলা ছোটগল্পের ঐতিহ্যভূমে দাঁড়িয়ে ঋ দ্ধ হয়েছেন বিশ্ব ছোটগল্পের সর্বশেষ অভিব্যক্তির জারকরসে। তাঁর বহুমাত্রিক প্রকাশ ভঙ্গিময় চেতনাপ্রবাহের মধ্যে স্বপ্ন, আত্মকথন, মৃতের চারণা, অতিপ্রাকৃত জগতে মায়াবাস্তবের তীক্ষ্ণ সঙ্কেত, অধিবাস্তব, স্বনির্মিত পুরাণ ও ফ্যান্টাসি সব মিলেমিশে ছোটগল্পের এক অভিনব জগত সৃষ্টি হয় যা প্রচলিত রীতির আলোকে কারো কারো কাছে অচেনা বা দুর্বোধ্য ঠেকে। কিন্তু বিষয়ানুযায়ী তিনি নির্মেদ যে গল্পভাষা তৈরি করেন তা আমাদের কথাশিল্পে অতুলনীয় বলে সমালোচকরা চিন্তিত করেছেন। মানুষের জীবনের কঠিন সত্যকে লেখক এক ধরনের সাঙ্কেতিকতায় বিন্যস্ত করেন, দৃষ্টির স্বচ্ছতা, অনুভবের তীব্রতা, ভাষার ক্ষেত্রে নিজস্ব প্রকাশভঙ্গি তাঁর গল্পকে স্বাতন্ত্র্য দেয়। অধিকাংশ গল্পে তিনি প্রচুর মিথ ব্যবহার করেছেন। ফলে তাঁর গল্প চেনাজানা পরিমণ্ডল অতিক্রম করে নিজস্ব বাস্তবতার জগতে পাঠককে নিয়ে গিয়ে বিস্ময়কর এক শৈল্পিক ঘোরের মধ্যে ফেলে। হুমায়ূন মালিকের সুচারু কথাশিল্পের অস্থিমজ্জায় মিশে আছে বিশ্বে একক শক্তি উ থানে বিপন্ন সমাজতন্ত্র, বাজার অর্থনীতির হীনস্বার্থে নিে ষ্পষিত মানবতা, মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন দলিত করা সাম্প্রদায়িক দৌরাত্ম্য ও নৈরাজ্য, সংখ্যালঘু সমস্যা- ধর্মীয় ও জাতিগত, বিপর্যস্ত পরিবেশ, সামাজিক ও লিঙ্গবৈষম্য, দারিদ্র্য ও শোষণ বিষয়ে দৃঢ়, সুতীক্ষ্ণ, লক্ষ্যভেদী বক্তব্য। তাঁর গল্পের ঘটনা ও চরিত্র জীবন ও সমাজের নিষ্ঠুরতা ও কদর্য, মানবতা ও সৌন্দর্যের চরমকে উন্মোচিত করে সুনিপুণ কৌশলে। তবে সব কিছুর ঊর্ধ্বে একটি নিটোল গল্প নির্মাণই লেখকের অঙ্গীকার। মালিকের গল্পে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা-রূপক, প্রতীক, পরাবাস্তবতা, অধিবাস্তবতা ইত্যাদির ট্রিটমেন্ট থাকলেও তাঁর প্রায় সব গল্পই আখ্যানধর্মী। বস্তুত আশির দশকের প্রথাবিরোধী গদ্যশিল্পীরা গল্পকে বিষয়নির্ভর না করে ভাষাপ্রধান করে আধুনিক মানুষের নানামুখী মনস্তাত্ত্বিক জটিলতাকে তুলে ধরার প্রয়াসী হলেও হুমায়ুন মালিক গল্পের আখ্যান, চরিত্র, ভাষাশৈলী এবং ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েনের ওপর সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। এ জন্যই তাঁর গল্পগুলো বহুমুখীনতাকে স্পর্শ করে স্বতন্ত্র ধারায় বিকশিত, প্রস্ফুটিত।