‘যুক্তবঙ্গের স্মৃতি' গ্রন্থটিতে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পূর্বাভাষ। দেশভাগ ও প্রদেশভাগ এবং খণ্ডিত স্বাধীনতার কথা। গ্রন্থটি লেখকের এক পর্বের আত্মজীবনী নয়, বরং জীবনস্মৃতিমূলক। ভারতে ব্রিটিশ রাজের শেষ তিন দশকের ঘনিষ্ঠ কাহিনি । ভেতর-থেকে জানা বৃত্তান্ত। যে কাহিনি একই সঙ্গে ঐতিহাসিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক অভিনিবেশ দাবি করে ৷ পাঠক ‘যুক্তবঙ্গের স্মৃতি' গ্রন্থটিকে আই.সি.এস., জীবন যৌবন ও ক্রান্তদর্শী গ্রন্থের প্রাসঙ্গিক অংশের সঙ্গে মিলিয়েও পড়তে পারেন। ‘মুক্তবঙ্গের স্মৃতি' গ্রন্থটি লেখকের মুক্তবঙ্গ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, তার সঙ্গে বাংলাদেশ- সংক্রান্ত আরও কয়েকটি প্রবন্ধ, তার সঙ্গে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কে কিছু লেখা, তার সঙ্গে স্বাধীন ভারতের সম্পর্কে আরও কিছু লেখা, ইত্যাদি ইত্যাদির এক সম্মিলিত সংকলন। লেখক প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যতদিন না মুজিব হত্যার বিচার হচ্ছে ও মুজিবের স্মৃতিসৌধ নির্মিত হচ্ছে ততদিন তিনি আর বাংলাদেশে যাবেন না। একুশ বছর পরে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ফিরে আসায় যখন বঙ্গবন্ধুর পুনর্জীবন হয় ও ঢাকা থেকে খবর পাওয়া যায় যে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের প্রস্তুতি চলছে ও তাঁর স্মৃতিরক্ষার আয়োজন হচ্ছে তখন ১৯৯৬ সনে বাংলাদেশের বিজয় দিবসের রজতজয়ন্তীতে যোগ দিতে লেখক ফের ঢাকায় যান। গ্রন্থনামের মূল প্রবন্ধটি সেই ভ্রমণেরই এক মনোজ্ঞ বিবরণ।
(মার্চ ১৫, ১৯০৪ - অক্টোবর ২৮, ২০০২), একজন স্বনামধন্য বাঙালি কবি ও লেখক। ভারতের উড়িষ্যা জেলার তার জন্ম। তিনি একজন বিখ্যাত ছড়াকারও। অন্নদাশঙ্করের জন্ম হয় ব্রিটিশ ভারতে বর্তমান উড়িষ্যার ঢেঙ্কানলে । তাঁর পিতা ছিলেন ঢেঙ্কানল রাজস্টেটের কর্মী নিমাইচরণ রায় এবং তাঁর মাতা ছিলেন কটকের প্রসিদ্ধ পালিত বংশের কন্যা হেমনলিনী । ছোটবেলায় ঢেঙ্কানলে তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় । ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন । এরপর সংবাদপত্রের সম্পাদনা শিখতে কলকাতা বসুমতী পত্রিকার সম্পাদক হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষের কাছে যান । তিনি শর্টহ্যান্ড, টাইপরাইটিং এবং প্রুফরিডিং-ও শেখেন । কিন্তু এই কাজ তাঁর ভালো লাগেনি । এরপর তিনি কটকের র্যাভেনশ কলেজ থেকে আই.এ পরীক্ষা দেন এবং তাতে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন । ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে বি.এ পরীক্ষাতেও তিনি পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম স্থানাধিকারী হন । ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে এম.এ পড়তে পড়তে আই.সি.এস পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয়বারে পূর্ববর্তী রেকর্ড ভেঙে প্রথম স্থান অধিকার করেন । তিনিই প্রথম ভারতীয় হিসেবে এ গৌরব লাভ করেন। সেই বছরেই তিনি সরকারি খরচে আই.সি.এস হতে ইংল্যান্ড যান । সেখানে তিনি দুই বছর ছিলেন । এই সময়ে তাঁর ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনী পথে প্রবাসে বিচিত্রায় প্রকাশিত হয় । ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন কন্যা অ্যালিস ভার্জিনিয়া অনফোর্ডকে বিবাহ করে তিনি তাঁর নাম দেন লীলা রায় । লীলা রায় বহু বই বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন । অন্নদাশঙ্করের অনেক লেখা লীলাময় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছিল । ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রথম নদীয়া জেলার ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে কাজে যোগ দেন । তিনি বছর এই পদে থেকে বিভিন্ন জেলায় কাজ করে কুমিল্লা জেলায় জজ হিসাবে নিযুক্ত হন । ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সরকারী কাজে নিযুক্ত থেকে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বিচার বিভাগের সেক্রেটারি হন । ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্বেচ্ছায় সরকারী চাকরি থেকে অবসর নেন । ২৮ অক্টোবর , ২০০২ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।