সূচীপত্র * ঝুমু ও তার ভূতের ভয় * প্রেত, প্রেত্মী * ভূতের সাথে গল্প * ভূতের গাঁও * বাগান বাড়ি * আকাশছোঁয়া ভূত * ভূতের ছায়া ঝুমু ও তার ভূতের ভয় কিছুক্ষণ ধরে ঝুমুকে দেখছেন না তার মা। ‘ঝুমু, এই ঝুমু...’ ডেকে ঘর থেকে বারান্দায় বেরুলেন। তখনও ডাকছেন। উত্তরে সুপারি গাছের নীচে চোখ যেতে দেখলেন গায়ের কাপড়ে হাতের ধুলো ঝেড়ে ঝুমু এগিয়ে আসছে। খানিক দূরে গাছের নিচে দেখা গেলো কয়েকটি কাপড়ের তৈরি পুতুল রাখা। ওগুলো খুব এলোমেলো। চোখ আরও উত্তরে সরালে দেখতে পেলেন দুটি মেয়ে আর একটি ছেলে দৌড়ে ওদিকে চলে যাচ্ছে। যা বোঝার তা বুঝে নিলেন ঝুমুর মা নাজমা বেগম। পুতুল রেখে ভয়ে তারা পালাচ্ছে। ‘ঝুমু... তুমি কই? তোমারে কুজাইয়া ফাইরামনা। কই তুমি?’ ঝুমু নীরবে এগুচ্ছে। ‘ইতা কিতা ঝুমু.. তুমি ধুলায় ভরা? ইশ খতোবার যে তোমারে ধুলাত না জাওয়ার লাগি খইলাম। আমার খতা হুনলায় নানি? হি! এখন তোমার বাফে দেখলে কিতা খইবা?’ ঝুমুর কাছে মার এমন কথা মোটামুটি ঝাড়ি খাওয়ার মতো। এভাবে ধমকের সুরে বলে চলছেন মা। শুনে ঝুমু দাঁড়িয়ে পড়েছিল। মা নাজমা দুই পা এগিয়ে ডান হাতে ঝুমুর বাম হাত ধরে টান দিয়ে বললেন, ‘দেখি, ঘরো আও!’ ওর গায়ের দিকে তাকালেন, ‘ইশরে, খাপড়ো যে খতো ধুলা লাগছে। ইতা এখন ধইতো খে, হি? খে ধইতো? খামলা বেটিও গেছেগি, আমার লাগি খাম একটা হানজাইলায়; নানি?’ ঘরেই চলে এসেছেন ওকে টেনে নিয়ে। কথা বলতে বলতে ঝুমুর শরীরের সব কাপড় খুলতে লাগলেন নাজমা। খেলতে গিয়ে সত্যি ঝুমু কাপড় সব ধুলোয় ময়লা করে ফেলেছে। সাত বছরের মেয়ে ঝুমু। মা-বাবাসহ ইংল্যান্ডে থাকে সে। ওখানেই তার জন্ম। এই প্রথম সে দেশের বাড়ি সিলেটে মা-বাবার সাথে বেড়াতে এসেছে। কয়েক সপ্তাহ হয়ে গেছে দেশে আসার। আজ শনিবার। আগামী বুধবার ওরা ইংল্যান্ডে চলে যাবে। দেশে এসে ওর অনেক বন্ধু হয়েছে। আশেপাশের বাড়ি-ঘরের আত্মীয়-অনাত্মীয় সবাই তার বন্ধু। এদের মাঝে পাশের বাড়ির দুটি মেয়ে ও একটি ছেলের সঙ্গে খেলছিলো ঝুমু। মা ডাক দিলে সাথের ওরা ভয়ে পালিয়ে যায়। ঝুমু ভয়ে ভয়ে ফেরে মার কাছে। নানা কথা বলতে বলতে ঝুমুকে ঘরে নিয়ে তার শরীরের সব কাপড় যখন ঠিক খুলে নিচ্ছিলেন নাজমা, তখনই কথা বলল ঝুমু, ‘না, আমি লেমটা (নেংটা) অইতাম নায়।’ বলে ও বাধা দেয়। মা একথা শুনে তো অবাক! একথা বলছে কেনো ঝুমু? অবাক সুরেই প্রশ্ন করেন, ‘খেনে?’ ঝুমু দুই-চার না ভেবে তখন উত্তর দেয়, ‘লেমটা অইলে বুলে ভূতে ধরিলায়।’ বলে ফের বাধা দেয় ঝুমু। শুনে মা মুখ টিপে হেসে ওঠেন। ঝুমু হাসি দেখে বলে, ‘তুমি আসরায়?’ ‘তোমারে ইতা খে খইছে?’ ঝুমু বলে, ‘সেলিনায়।’ এই বলে খানিক থামে সে। তারপর বেশ উৎসাহ নিয়ে বলে ওঠে , ‘আচ্ছা আম্মা, ভূত কিতারে খয়, হি? ভূতরে বুলে দেখা যায় না! কিন্তু তারা বুলে মানষোরে দেখতো ফায়, হাছানি?’ ‘ইতাও কিতা সেলিনায় খইছেনি?’ ঝুমু উপর নিচে মাথা দোলায়। ‘ইতা সব মিছা কথা। দেখি ফেন্ট কুলোছাইন।’ ‘না, ভূতে ধরলে মানুষ ফাগল অই যায়। আমারে...’ ‘তোমারে ধরলে তুমিও ফাগল অই জিবায়? ওউ তো?’ ‘ভূতে যেছারে ধরতো ফারে। যেছারে ফাগলও খরতে ফারে। তুমি জানো না?’ শুনে মা খিলখিল করে হাসেন। বুঝতে পারেন, ঝুমুকে এখন ভূতের ভয়ে ধরেছে। এ ভয় ছাড়বে না সহজে। হাতে নতুন একটা প্যান্ট ধরিয়ে দিয়ে বাথরুমের দিকে ইশারা করে বলেন, ‘ঠিক আছে, এখন যাও, ফাল্টাইয়া আও।’ ঝুমু তাই করে। পা বাড়ায় বাথরুমে যাওয়ার জন্য। মা তার যাওয়া দেখেন। ‘হাত-মুখ ধুইয়া আইও।’ দরজায় খুলতে গিয়ে সে মার দিকে ফিরে তাকায়। ‘আইচ্ছা।’ বলে আবার ফিরে ঝুমু। মা ফিরেন তার কাজে।