অধ্যাপক নীহাররঞ্জন রায় চিত্তরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৩৬ সালে আমি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তখনকার গ্রন্থাগারের অবস্থা দেখে আমরা সন্তুষ্ট ছিলাম না, কিন্তু আশ্বাস পেয়েছিলাম শীঘ্র লন্ডনে গ্রন্থাগারবিদ্যায় শিক্ষিত একজন গ্রন্থাগারিক গ্রন্থাগারের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। তখন ভালো পরিষেবা পাওয়া যাবে। সেই সুদিন একদিন এল। আশুতোষ ভবনের চারতলায় একেবারে দক্ষিণ দিকে কলুটোলা স্ট্রিটের ওপর একটি প্রশস্ত হলঘরে নব্যবিন্যস্ত গ্রন্থাগারের উদ্বোদন হল । ১৯৩৭ সালে লাইব্রেরিয়ান হলে এলেন নীহাররঞ্জন রায়। প্রবেশদ্বারের কাছাকাছি বাঁদিকে ছিল তাঁর বসবার ঘর। তবে তিনি বেশিক্ষণ ঘরে বসে থাকতেন না। তিনি প্রায়ই বেরিয়ে ঘুরে দেখতেন পাঠকরা পড়ছে, না গল্প করছে। যার যা অভিযোগ তাও শুনতেন এবং প্রতিকার করতেন। তাঁর ঘরে গিয়ে ছাত্ররা তাদের অসুবিধার কথা বলত কিংবা কোনো প্রয়োজনের কথাও বলত অসংকোচে । তিনি, যে যে বিষয়ের ছাত্র তাকে সেই বিষয়ে প্রকাশিত নতুন বই-এর কথা জানাতেন । মনে আছে, একবার শেলির একটা বই খোঁজ করতে গিয়েছিলাম,তিনি প্রসঙ্গক্রমে বললেন তোমরা কেবল বিদেশি সমালোচকদের বই পড় কিন্তু এদেশে পণ্ডিতরাও যে ইংরেজি সাহিত্য সম্বন্ধে কিছু কিছু আলোচনা করেছেন তার খোঁজ তোমরা রাখ না। এবং আমাকে প্রশ্ন করলেন ইংরেজি রোমান্টিক কবিদের ওপর হরিনাথ দে যে একটি আলোচনামূলক নোট লিখেছিলেন সেটি পড়েছো? সৌভাগ্যক্রমে সে বইটি আমার দেখা ছিল। তারপর প্রশ্ন করলেন শেলির ওপর রবীন্দ্রনাথের লেখাটি পড়েছো? স্বীকার করলাম পড়িনি। তিনি বললেন দু-দিন পরে এসো, তাঁর লেখাটি কোথায় পাওয়া যাবে বলে দেব। তাঁর কাছে যখনই গিয়েছি তখনই নতুন প্রকাশিত বই-এর সন্ধান দিয়েছেন, বিষয়বস্তু সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন এবং তার ফল পাঠ্যপুস্তকের বাইরে যে বই-এ ই-এর জগৎ সম্বন্ধে আগ্রহ বেড়েছে। নীহারবাবু একইসঙ্গে ভারতের প্রাচীন ইতিহাস ও শিল্পকলা বিষয়েও আংশিক সময়ের জন্য তখন অধ্যাপনা করতেন। তাঁর পড়ানোর প্রশংসা শুনে আমি অনুমতি নিয়ে কয়েকদিন তাঁর ক্লাসে যোগ দিয়েছিলাম ।