"প্রাচীন সাহিত্য/প্রবীণ সাহিত্য" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি মিতকায় বই প্রাচীন সাহিত্যের কথা কে না জানেন? এরই একটি প্রবন্ধে তিনি লক্ষণ-পত্নী উর্মিলাকে কবি-পাঠকের অবহেলা থেকে উদ্ধার করে এনেছেন। একটি প্রবন্ধ এক অবহেলিত পানের খিলি এগিয়ে দেবার সামান্যকর্মে নিরতা এক বালিকাকে সহানুভূতির আলােকে উজ্জ্বল করেছেন। কিন্তু এই প্রাচীন সাহিত্যের নিবন্ধনিচয় ছাড়া প্রাচীন ও মধ্যযুগ- যাকে আমরা প্রবীণ যুগের সাহিত্য বলতে চেয়েছি- সেকালে লেখা প্রচুর উপকরণ ইতস্তত ছড়িয়ে ছিল— কবি বিভিন্ন সময়ে সেই রামায়ণ-মহাভারত-পুরাণ-গাথা-ইতিকথা থেকে সংগ্রহ করে আরও বহুতর কাব্য ও কাব্যোচিত ভাবনার লিখিত উপাদান রেখে গেছেন। তাদেরই অনুপুঙ্খ অনুসন্ধানে উদ্ধারপ্রাপ্ত সেইসব রচনাও এখানে উদ্ধার করে দুটি মলাটের মধ্যে মণিমঞ্জুষার নির্মাণ ঘটেছে। ফলে প্রাচীন-প্রবীণের নবসৃষ্টিকর্তা রবীন্দ্রনাথকে এই প্রথম তার রচনা-সম্পূর্ণতায় পাঠকের করায়ত্ত হল। এ এক সুদুর্লভ সংগ্রহ, এক নতুন রবীন্দ্রবিনির্মাণ। প্রখ্যাত প্রাবন্ধিকের পরিশ্রম, নিষ্ঠা একত্রিত এখানে; যাবতীয় পাঠকের অনিবার্য দৃষ্টিপাতে ধন্য এই মহাগ্রন্থ।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্পকার, চিত্রশিল্পী, সংগীতস্রষ্টা, অভিনেতা, কন্ঠশিল্পী, কবি, সমাজ-সংস্কারক এবং দার্শনিক। গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য প্রথম বাঙালি হিসেবে ১৯১৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ মে তৎকালীন ব্রিটিশ-শাসিত ভারতে কলকাতার ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিমনা জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। ভানুসিংহ ঠাকুর ছিল তাঁর ছদ্মনাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই মানেই এক মোহের মাঝে আটকে যাওয়া, যে মোহ পাঠককে জীবনের নানা রঙের সাথে পরিচিত করিয়ে দেয় নানা ঢঙে, নানা ছন্দে, নানা সুর ও বর্ণে। তাঁর ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাট্যগ্রন্থ, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর কিছুদিন পরই আলোর মুখ দেখে। কাবুলিওয়ালা, হৈমন্তী, পোস্টমাস্টারসহ মোট ৯৫টি গল্প স্থান পেয়েছে তাঁর ‘গল্পগুচ্ছ’ গ্রন্থে। অন্যদিকে ‘গীতবিতান’ গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে ১,৯১৫টি গান। উপন্যাস, কবিতা, সঙ্গীত, ছোটগল্প, গীতিনাট্য, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনীসহ সাহিত্যের সকল শাখাই যেন ধারণ করে আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই সমূহ। তিনি একাধারে নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা দুই-ই ছিলেন। কোনো প্রথাগত শিক্ষা ছাড়া তিনি চিত্রাংকনও করতেন। তৎকালীন সমাজ-সংস্কারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এই গুণী ব্যক্তিত্ব। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাতেই অনূদিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বই সমগ্র। তাঁর যাবতীয় রচনা ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ নামে ত্রিশ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট জোড়াসাঁকোর বাড়িতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পর এতদিন পেরিয়ে গেলেও তাঁর সাহিত্যকর্ম আজও স্বমহিমায় ভাস্বর। আজও আমাদের বাঙালি জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে বিশ্বকবির সাহিত্যকর্ম।