পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ কানাডার মাটিতে রয়েছে দেশটির আদি মানুষদের পদচিহ্ন। ‘অভিবাসীদের দেশ’ হিসেবেও কানাডার ব্যাপক পরিচিতি। পৃথিবী নামের ভূ-গোলোকে এমন কোনো দেশ নেই যে দেশের মানুষ কানাডায় অভিবাসী হননি। আর তাই কানাডা বহু-সংস্কৃতিরও দেশ। ফলে, দেশটির সাহিত্যও বহু-সংস্কৃতির উপাদানে পুষ্ট। সর্বপূর্ব সেইন্ট জন’স থেকে সর্বপশ্চিমে ইউকনের বিভার ক্রিক অথবা সর্বউত্তরে নুনাভাটের এলার্ট পর্যন্ত প্রতিটি জনপদের রয়েছে আলাদা ইতিহাস, আলাদা ঐতিহ্য। সে-কারণেই দেশটির সাহিত্যের পরিধিও ব্যাপক। ব্যাপক বলেই বর্তমানে কানাডায় প্রতি ছয় শ জন মানুষের মধ্যে একজন লেখক। যা-তা লেখক নন, রীতিমতো পাবলিশড রাইটার। তিন কোটি সত্তর লক্ষ মানুষের এই দেশে এক লক্ষের বেশি লেখকের রচনা দেশটির সাহিত্যসম্ভারকে প্রতিনিয়ত ঋদ্ধ করে চলেছে। কানাডীয় সাহিত্যের সমৃদ্ধ ভান্ডারটি বাংলা ভাষার পাঠকদের কাছে খুব কম পরিচিত। হাতেগোনা কয়েকটি অনুবাদের মধ্যেই সেটি সীমাবদ্ধ। বাংলাদেশ বা পশ্চিমবাংলা কোনো জায়গাতেই বিভিন্ন কারণে কানাডীয় সাহিত্য পাঠকসমাজে প্রত্যাশামতো পরিচিতি পায়নি। সে-দারিদ্র্য ঘুচাতে কানাডাবাসী বাংলাদেশের লেখক সুব্রত কুমার দাসের এই বইটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
২০১৩ সাল থেকে কানাডার টরন্টোতে সপরিবার অভিবাসী সুব্রত কুমার দাসের জন্ম বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার কামারখালীতে; ১৯৬৪ সালের ৪ মার্চ। উত্তর আমেরিকায় বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্যে অবদানের জন্যে সুব্রত কুমার দাস ২০১৮ সালে আমেরিকার নিউ জার্সি শহর থেকে গায়ত্রী গ্যামার্স মেমোরিয়াল পুরস্কার লাভ করেন। ২০২৩ সালে ব্রাম্পটন শহরে আয়োজিত কানাডার দক্ষিণ এশীয় সাহিত্য উৎসবে তিনি কানাডার শ্রেষ্ঠ বাঙালি লেখকের পুরস্কার লাভ করেন। ২০২১ সালে কানাডার শীর্ষ ২৫ অভিবাসী পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত প্রার্থী তালিকায় উঠে এসেছিল সুব্রত কুমার দাসের নাম। কানাডায় বসবাসকারী বাঙালি লেখকদের নিয়ে সুব্রতর সাম্প্রতিক উদ্যোগ কানাডা জার্নাল (https://www.c-j.ca/)। কানাডার মূলধারার লেখকদের সাথে বাঙালি লেখকদের সেতুবন্ধ রচনায় সুব্রত কুমার দাসের অবদান বিশেষভাবে উচ্চারিত। ২০১৯ সালে কানাডার সাহিত্য নিয়ে তিনি প্রথম গ্রন্থ প্রকাশ করেন। ২০২০ সালে প্রথম বাঙালি হিসেবে তিনি টরন্টো ইন্টারন্যশনাল ফেস্টিভ্যাল অব অথরস বা টিফা-তে আমন্ত্রণ লাভ করেন এবং এগারোজন লেখকের একটি দলের নেতৃত্ব দেন। তাঁর নেতৃত্বেই ২০২২ এবং ২০২৩ সালে নয় এবং এগারোজন কানাডাবাসী বাঙালি কবি-লেখক টিফাতে অংশ নেন। ২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশের উপন্যাস নিয়ে ওয়েবসাইট বাংলাদেশি নভেলস্ (bdnovels.org) নিয়ে কাজ করে চলেছেন। সুব্রত কুমার দাসকে নিয়ে প্রকাশিত চারটি গ্রন্থ হলো : ‘হীরকজয়ন্তী: সুব্রত কুমার দাস’ (২০২৪, সম্পাদক সুজিত কুসুম পাল এবং সঞ্জয় মজুমদার’, ‘Subrata Kumar Das: A Boy of Intellect’ (2024, Editor: Sujit Kusum Paul), ‘সুবর্ণ জন্মজয়ন্তী : সুব্রত কুমার দাস (২০১৪, সম্পাদক: বরুণ কুমার বিশ্বাস) এবং তিনি এবং আমরা' (২০১৩, লেখক: রাজিউল হাসান)। এছাড়া যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে প্রকাশিত Poetry Out Loud (POL) পত্রিকার ২০২৪ সংখ্যায় সুব্রতকে নিয়ে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। সুব্রত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর অধ্যাপনা করেছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন কলেজে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও সাহিত্য পড়িয়েছেন কয়েক বছর। সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন ব্র্যাকের প্রধান কার্যালয়ে। ১৯৯২ সাল থেকে লেখালেখির সাথে যুক্ত সুব্রত’র গ্রন্থসংখ্যা ঊনত্রিশ। সম্প্রতি সুব্রত রচিত ‘আমার মহাভারত’ বইটির অডিও প্রকাশিত হয়েছে কোবো পাবলিশিং হাউজ থেকে।