ছন্দ বাংলা কবিতার প্রাণ। শুধুমাত্র অন্তমিলই ছন্দের দাবি পূরণ করে না। ভাবে, ব্যঞ্জনায়, বিষয়ের বৈচিত্র্যতায়, উপস্থাপনার নানা কৌশল একটি কবিতাকে করে তোলে অপ্রতিদ্বন্ধী। আর এ সব কিছু আসে একজন কবির চর্চার মধ্য দিয়ে। কবিতায় অধ্যাবসায় দরকার। কবিতায় পরিশ্রম দরকার, দরকার ত্যাগ। নানা দুঃখ, পাওয়া, না পাওয়ার হতাশা, ব্যর্থতা ইত্যাদির এক যৌগিক অনুভূতি হলো কবিতা। বাংলা কবিতায় প্রেম রসের উপস্থিতি আদিকাল থেকে। প্রেমিক, প্রেমিকার বন্দনায় মুখর বাংলা কবিতা। প্রেমের বহুরূপতা বাংলা কবিতায় এতোই বেশি যে এর তুলনা কোনো কোনো ভাষার সাথে হয়তো চলে না। প্রায় প্রতিজন কবিই তাদের নিগূঢ় প্রেমের বিমূর্ত ভাব কবিতায় মূর্ত করতে মরিয়া থেকেছেন কালে কালে। শ্রাবণ নজরুল এ সময়ের এক কবিতাকর্মী। কবিতাকে আরাধ্য করে নিজেকে উৎসর্গ করার সাহস নিয়েই কবিতা লিখছেন। ‘ফেরারি স্বপ্ন’ তার একটি কাব্যগ্রন্থ। শিরোনাম ছাড়া সংখ্যা দিয়ে সাজানো চল্লিশটি কবিতা রয়েছে এ বইটিতে। গতানুগতিকতার বাইরে এসে এমন একটি প্রচেষ্টা বা নীরিক্ষা আমাদের আশা জাগায়। আসলে কবিতা এমনই এক শিল্প যে সব সময় নতুনত্ব বহন করে। প্রথমেই পাঠ করা যাক তার একটি কবিতার পংক্তি ৬. কোন আলোকের কন্যা তুমি রূপ প্লাবনের ঢল, আঁখির তারায় অথৈ সাগর মায়ায় টলোমল! খুব সরল, খুব স্বাভাবিক শব্দ, খুব পরিচিত ছন্দের অন্তমিল কিন্তু খুব ভালো লাগার আবেশ সৃষ্টি করেছেন কবি। ‘আঁখির তারায় অথৈ সাগর মায়ায় টলোমল’। বাংলা কবিতার যে ঢং, যে প্রকৃতি তার একটি নির্দশন বলা যায় এ কবিতাটি। এ কবিতা পাঠে পাঠক মনে দোলা দেবে একই সাথে মনের মণিকোঠায় ঠাঁই পাবে এর ছন্দের তালে। কবিতায় আত্মতুষ্টি নেই। কবিতা কেবল তৃষ্ণা বাড়ায়। আরো কিছু কবিতা পাঠ করা যাক শ্রাবণের ২২. বলিতে পারি না মুখে কী যে জ্বালা কী যে ব্যথা, শূন্য এ বুকে ধুঁকে বিরহের কথকতা। ৩৬. কোন আগুনে পুড়ছে হৃদয় জ¦লছে কোন অনলে? কোন দুঃখেতে মন ব্যথাময় ভাসি অশ্রুজলে? শ্রাবণ নজরুল বিরহকে প্রেমময় করতে পারেন আবার প্রেমকে করতে পারেন বিরহময়। প্রেমের লালন যে হৃদয়ে সে হৃদয় বুনতে পারে আশা কল্পনার শব্দমালা। শব্দেও যে ঘ্রাণ থাকে, রঙ থাকে, থাকে প্রাণ তা কবিতা না পড়লে কারো পক্ষে বোঝা সম্ভব হয় না। কবিতার কাছে মানুষকে ফিরতে হয়। মানুষের ভাষা তো কেবল কবিতাই দিতে পারে। এমন কবিতা খুব কম কিন্তু নগণ্য নয়। শ্রাবণ নজরুলের এই ফেরারি স্বপ্নে আমরা ফিরে পাই কবিতার অর্ন্তনিহিত বৈভব, পরাবাস্তবতার রহস্যময় জগৎ।
চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে অর্থনীতিতে অনার্স মাস্টার্স সম্পন্ন করে বর্তমানে একটি বেসরকারী ব্যাংকে কর্মরত সে। জন্ম রাজধানী ঢাকার ইট পাথরের কঠিন দেয়ালে ঘেরা এক রুক্ষ পরিসরে হলেও বেড়ে ওঠা ফেনী, ফরিদপুর, যশোর, চট্রগ্রাম আর সেলেটের সবুজ শ্যামলীমায়্। পৈত্রিক বসতি ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার নেয়াজপুর গ্রামে।