অভিলাষ বড় ভাইকে— যাঁর হাতেই আমার শৈশব-কৈশাের-যৌবন রঙিন থেকে আরাে রঙিন। আমার নামের প্রথম অংশ তাঁর রাখা। জ্ঞান হবার পর থেকেই তােমার নাম কতভাবেই না জানি! শৈশব থেকে শােনা তােমার গান ভাই-বােনেরা প্রার্থনার মতাে গাইতাে, কোথাও ভুল যদি না হয়, তাই গীতবিতান আর স্বরলিপিও চেখে দেখতাে কখনাে-সখনাে সিনেমা, নাটকে আদর্শবান কারাে বৈঠকখানায় তােমার ছবি– সেইলােকটার পরিচয়কে যেন সমৃদ্ধ করে দিত কয়েকগুণ! স্কুল-এসেম্বলিতে তােমায় গেয়ে, যেন এই বুকের ছাতি উঁচু হয়ে হিমালয় ছুয়ে ফেলতাে। বৃষ্টি, শরৎ-হেমন্ত কিংবা বসন্তে তুমিই ধরা দিতে ঠোঁটে। ক্লাসের প্রত্যেক বছর বাংলা বইয়ে তুমি উঁকি দিতে নতুন দগদগে সূর্য হয়ে। এভাবেই প্রথম নীলখামে পাঠানাে লাল কাগজের সেই চিঠিটা বুকের সব স্পন্দন ঢেলে লিখেছিলাম, বিশ্বাস করাে, তােমার চেহারাটাই ভেসে ভেসে আমার ভেতর থেকে একটা একটা করে শব্দ, ছুড়ে দিচ্ছিল যেন আমার তখন জল পড় পাতা নড়ে ‘মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানাে পাপ’ সেই অমর কথন আমি সারা বিশ্বের সবাইকে এই ক্ষণিক জীবনেই বলে ফেলেছি মনে হয়। এই একটি কথাই মজবুত ভিত গড়ে দিয়েছে আমার সাথে মানুষের। ঋণী তােমার কাছে আজন্ম। জানি, এ ঋণের বােঝা বাড়তে থাকবে, বাড়তেই থাকবে। ‘মৃত্যুর ডাক আর কিছুই নহে, বাস বদলের ডাক’ কায়মনােবাক্যে মিনতি: মৃত্যুর পর অনন্ত জীবনেও তােমার গান-কবিতা-গল্প আমার অবসরকে ছুঁয়ে দেয় যেন জীয়ন কাঠির জাদু স্পর্শে।